চলমান সংবাদ

জালিয়াতির চেষ্টায় অভিযুক্ত ফোরকান আবার জেনারেল হাসপাতালে

বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে পুরনো কর্মস্থল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেই ফের যোগদান করেছেন হাসপাতালটির হিসাবরক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মো. ফোরকান। যোগদানের পর নিয়মিত অফিসও করছেন আলোচিত এ কর্মচারী। ফোরকানের যোগদানপত্র গ্রহণ ও নিয়মিত অফিস করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। যদিও তাকে তেমন কোনও দায়িত্ব দেয়া হয়নি বলে দাবি হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ফোরকানের যোগদানপত্র গ্রহণ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই নিয়মিত অফিস করছেন তিনি। তবে এর আগে তার কক্ষটি কয়েকমাস তালাবদ্ধ ছিল। ফোরকান চাবি বুঝিয়ে না দেয়ায় দীর্ঘদিন কক্ষটি খুলতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে হাসপাতালের পক্ষ থেকেও সেখানে আরেকটি তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এর আগে পুরনো কর্মস্থলেই (জেনারেল হাসপাতালে) যোগদানের জন্য গত বছরের ২৫ অক্টোবর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জমা দেন ফোরকান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বদলি আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশ পেয়েছেন দাবি করে পূর্বের পদ ও কর্মস্থলে যোগদানের এ আবেদন করেন তিনি।

তবে এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা চেয়ে ফোরকানের আবেদনটি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বরাবর পাঠিয়ে দেয় জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঊধ্বর্তন দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পেয়ে ফোরকানের যোগদানপত্র গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে ডা. সেখ ফজলে রাব্বি গতকাল আজাদীকে বলেন, ফোরকানের আবেদন পেয়ে সেটি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছিলাম। পরে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পেয়েই তার যোগদানপত্রটি গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে তেমন কোনও কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষকের চলতি দায়িত্বে থাকা মো. ফোরকানকে গতবছরের ১৭ জুলাই এক আদেশে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে বদলি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. সামিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে ৫ দিনের মধ্যে কর্মস্থল থেকে ছাড়পত্র নিতে বলা হয়। অন্যথায় আদেশের ৬ষ্ঠ দিন থেকে সরাসরি অব্যাহতি পাইয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে মর্মে আদেশে উল্লেখ করা হয়।

ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিল ছাড়করণের চেষ্টার ঘটনায় মো. ফোরকানকে শাস্তিমূলক এ বদলি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে আর্থিক সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম থেকে তাকে অব্যাহতি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে আর্থিক সংক্রান্ত দায়িত্বভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দিতে বলা হলেও স্ব–পদে বহাল ছিলেন ফোরকান।

এদিকে, বদলি আদেশের প্রেক্ষিতে ২১ জুলাই মো. ফোরকানকে ছাড়পত্র দেয় জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সময় তার দায়িত্বভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু ফোরকান দায়িত্বভার, নথিপত্র কিছুই বুঝিয়ে দেননি। বদলিকৃত কর্মস্থলেও যোগ দেননি। বরঞ্চ ছাড়পত্র দেয়ার পর থেকে হিসাব শাখার কক্ষের চাবিও হস্তান্তর করেননি।

অন্যদিকে, বদলি আদেশ ঠেকাতে ঢাকার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে (নং–১) মামলা করেন মো. ফোরকান। শুনানি গ্রহণ করে ১৯ জুলাই এক আদেশে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার মামলা খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন ফোরকান। শুনানি গ্রহণ করে ১৭ অক্টোবর প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালও তার আবেদন না মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এরপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে লিভ টু আপিল করেন ফোরকান। ২৩ অক্টোবর শুনানি শেষে তার আবেদন মঞ্জুর করা হয় উল্লেখ করে যোগদানের আবেদনে ফোরকান দাবি করেছেন– চেম্বার আদালত তার বদলি আদেশে ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে পূর্বের পদ ও কর্মস্থলে যোগদানের আবেদন করেছেন তিনি। সর্বশেষ ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের একটি রায়ের কপি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান মো. ফোরকান। ট্রাইব্যুনালের রায়ে তাকে পূর্বের পদ ও কর্মস্থলে যোগদানের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২১–২০২২ অর্থ বছরে সংশোধিত বাজেটে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ হতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ২০১৩–১৪ অর্থ বছরের মের্সাস আহমেদ এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক সরবরাহকৃত ৮টি আইসিইউ বেড, ৮টি ভেন্টিলেটর ও ১টি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটরের বকেয়া বিল বাবদ ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার ব্যয় মঞ্জুরি আদেশ জালিয়াতির মাধ্যমে ছাড়করণে গত ২৮ জুন জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ফোরকান চেষ্টা চালান। এ বিষয়ে দুদকে মামলা চলমান রয়েছে।