চলমান সংবাদ

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর, চবি ও পলিটেকনিক শাখার বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত

গতকাল ৩ মার্চ ২০২৩ ইং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা ও চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখার বার্ষিক শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিল – ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার বিকেল ৩:০০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম নগরস্থ প্রেসক্লাব ভবনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছাত্রনেতা শ্রী সুমন মারমা মহোদয়। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি শ্রী তাপস হোড়, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিশান তঞ্চঙ্গ্যা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য উলিসিং মারমা প্রমুখ।
পিসিপি, চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক নরেশ চাকমার সঞ্চালনায় সম্মেলন সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপি, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা। এছাড়াও আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক অম্লান চাকমা এবং প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হ্লামিও মারমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সুভাষ চাকমা ও চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখার সদস্য উখিং সাই মারমা। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এযাবৎ যারা শহীদ হয়েছে তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছাত্রনেতা শ্রী সুমন মারমা বলেন, ” দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে  ‘৯৭ সালে একটা চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। সেই চুক্তিকে বাস্তবায়ন করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত কর্মসূচীগুলোর মধ্যে আরও জোরদার করতে হবে। এভাবে আমাদের এই আন্দোলনের বার্তা প্রসারিত করা উচিত। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান যে পরিস্থিতি, শাসকগোষ্ঠীর একের পর এক অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যা, বঞ্চনা, ভুমই উচ্ছেদ
জুম্মদের জাতীয় অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান সরকার যেমন বাঙালিদের উপর শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্য জারি রেখেছিল আজ বাংলাদেশ সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাথে নিয়ে একই কায়দায় পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।”
তিনি আরও বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে এই যে পরিস্থিতি বিদ্যমান এটার পরিবর্তন একদিনে হবে না। শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক জুম্ম জনগণের উপর অত্যাচার-নিপীড়ন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে ছাত্র সমাজের মুখ্য ভুমিকা জরুরী। অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই-সংগ্রামে তরুণ ছাত্র সমাজের ভূমিকা সময়ে দাবী। এজন্য প্রত্যেককে নিজেকে জ্ঞানের গরিমায় গড়ে তুনে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের অগ্রজরা চুক্তি এনে দিয়েছেন এবং আজও এই চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তারা একটি মুহূর্তের জন্যে হতাশ-নিরাশ হননি। তাহলে আজকের আমরা তরুণ ছাত্র সমাজে ধৈর্য হারাবো কেন!”
তিনি বলেন, “এম এন লারমা স্বপ্ন দেখেছিলেন এই পার্বত্য চট্টগ্রামে ভিন্ন ভাষাভাষী যে ১৪ টি জাতিগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধভাবে নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্যকে ধরে রেখে চিরকাল থাকবে৷ কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাই, সে ঐক্যের মধ্যে ভাঙন ধরেছে, শাসকগোষ্ঠী একে অপরের সাথে বিভেদ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা ও সংকীর্ণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের সেই চিন্তাচেতনা থেকে বের হয়ে জুম্ম জনগণের সামগ্রীক স্বার্থের জন্য কাজ করতে হবে।”
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি শ্রী তাপস হোড় বলেন, “বর্তমান বাংলাদেশে শাসকগোষ্ঠী সত্যি কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আপনি চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে কথা বললে আপনাকে সরকারের বিশেষ নজরে পড়তে হবে। যদি বলেন পাহাড়ে অঘোষিত সেনাশাসন, নির্যাতন-নিপীড়ন-বৈষম্য হচ্ছে তখন আপনার উপর হুমকি আসবে। বাংলাদেশে আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার হরন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আপনি এর বিরুদ্ধেও বলতে পারছেন না।  বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সরকারের নিকট যে পাঁচ দফা দাবি করছে তার মধ্যে পার্বত্য চুক্তির যথাযথ ও দ্রুত বাস্তবায়ন অন্যতম।” এছাড়াও তিনি আজকের পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের এই শাখা সম্মেলন থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যেন সরকার পার্বত্য চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নসহ ঐক্য পরিষদের পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়ন করে।
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের নাজুক পরিস্থিতি বিষয়ে আমরা সবাই জানি। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পাহাড়ি জনগণের পাশাপাশি দেশের সকল সচেতন নাগরিককে এগিয়ে এসে সারাদেশে বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই একমাত্র এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। পিসিপির আজকের  সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যে চার দফা
দাবী, আমি সেগুলোর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।”
এছাড়াও উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার এখন ভূমি বেদখল, হত্যা-ধর্ষণ, পর্যটন স্থাপনা, ইসলামিকরণসহ জুম্মদের স্বার্থ পরিপন্থী নানা উদ্যোগ করে বেড়াচ্ছে। একটা মানুষ বেঁচে থাকার জন্য যদি লড়াই করে তবে সে সন্ত্রাসী হয়ে যায়না। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনগণ পাকিস্তানের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে ও অধিকার আদায়ের জন্য অস্ত্র হাতে না তুললে আজকের বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না। তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সংগ্রাম করলে কেনো সন্ত্রাসী হবে! আজ পার্বত্য চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে।”
বক্তব্য শেষে পিসিপি, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি হিসেবে সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা, সাধারণ সম্পাদক হ্লামিও মারমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক অম্লান চাকমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নরেশ চাকমা, সাধারণ সম্পাদক অন্তর চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক অন্বেষ চাকমা এবং চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখার সভাপতি সেতু চাকমা, সাধারণ সম্পাদক উকিং সাই মারমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সুমন চাকমাকে নির্বাচিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা ও কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। এসময় শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শ্রী থোয়াক্যজাই চাক।
অবশেষে সম্মেলন সভার সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যার বক্তব্যের মাধ্যমে শাখা সম্মেলন ও কাউন্সিলের সমাপ্তি ঘটে।
# ০৪/০৩/২০২৩, প্রেস বিজ্ঞপ্ত