চলমান সংবাদ

খালি কন্টেনারের ফোর্সড শিপমেন্ট বন্ধের আহ্বান

-চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানের কাছে দুই সংগঠনের চিঠি

প্রায় ছয় বছর ধরে চলা চট্টগ্রাম বন্দরে খালি কন্টেনারের ফোর্সড শিপমেন্ট বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশ্বের আর কোনো বন্দরে এর নজির নেই। তাই চট্টগ্রাম বন্দরের ফোর্সড শিপমেন্ট নিয়ে আন্তর্জাতিক শিপিং বাণিজ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জোর করে খালি কন্টেনার যেকোনো জাহাজে তুলে দেয়ার সিস্টেমটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পথে অন্তরায় এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ইমেজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ কন্টেনার শিপিং এসোসিয়েশন পৃথক পত্রে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের নিকট ফোর্সড শিপমেন্ট বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী পরিচালিত শিপিং বাণিজ্যের অপরিহার্য উপকরণে পরিণত হয়েছে কন্টেনার। দিনে দিনে কন্টেনারে পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু মূল্যবান পণ্য নয়, সাধারণ মানের পণ্যও এখন কন্টেনারে পরিবাহিত হচ্ছে। কন্টেনারের মালিক হচ্ছে মেইন লাইন অপারেটর বা এমএলও। বিদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে আসা কন্টেনারের পণ্য খালাসের পর এসব খালি কন্টেনার এমএলওর নির্দেশনা অনুযায়ী পুনরায় বিদেশি কোনো বন্দরে পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এমএলওর সাথে ফিডার সার্ভিসগুলোর একটি সম্পাদিত কমন কেরিয়ার এগ্রিমেন্ট বা সিসিএ চুক্তি থাকে। এই চুক্তির আওতায় সংশ্লিষ্ট এমএলওর সাথে যে ফিডার সার্ভিসের চুক্তি রয়েছে তারা ওই এমএলওর খালি কন্টেনার পরিবহন করে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বেশিরভাগ খালি কন্টেনার সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। বর্তমানে কলম্বো বন্দরেও খালি কন্টেনার পরিবাহিত হয়। এমএলওর সাথে ফিডার সার্ভিস অপারেটরের সম্পাদিত চুক্তি অনুসরণ করতে গেলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে খালি কন্টেনারগুলো চুক্তির আওতাধীন জাহাজে পাঠাতে হয়। অর্থাৎ যে এমএলওর সাথে যে ফিডার সার্ভিস অপারেটরের চুক্তি থাকে ওই এমএলওর খালি কন্টেনারগুলো ওই ফিডার সার্ভিসের জাহাজে সিঙ্গাপুর বা কলম্বো পাঠানো হয়। এতে নির্দিষ্ট জাহাজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বন্দরে খালি কন্টেনারের অবস্থানকাল বেড়ে যায়। 

২০১৫–২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনারের জট হয়েছিল। খালি কন্টেনারগুলো বন্দরের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল। ওই সময় বন্দর ইয়ার্ডে মোট ২৭ হাজার থেকে ৩০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার রাখার জায়গা ছিল। খালি কন্টেনারের কারণে ইয়ার্ডে জায়গার অভাব প্রকট হওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। ওই সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে ফোর্সড শিপমেন্ট সিস্টেম চালু করে। যাতে নির্দিষ্ট ফিডার অপারেটরের অপেক্ষা না করে বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা যেকোনো জাহাজে যেকোনো খালি কন্টেনার তুলে দেয়া হয়। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কন্টেনারের মালিক এমএলও যে ফিডার সার্ভিসের জাহাজ পরিবহন করেছে তাদের সাথে ভাড়া মিটাবে। বন্দরের জট সামলানোর স্বার্থে এর কোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু এই সিস্টেমের ফলে সংশ্লিষ্ট এমএলও এবং ফিডার সার্ভিস অপারেটরের মধ্যে ভাড়া নিয়ে বিবাদ লেগে থাকে। খালি কন্টেনারের পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। বিষয়টি এমএলওদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে। বিশ্বের আর কোনো বন্দরে ফোর্সড শিপমেন্ট না থাকায় তারা চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে এমএলওদের পক্ষ থেকে নানাভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। তারা এই সিস্টেম বন্ধ করার জন্য শিপিং এজেন্টদের চাপ দিতে থাকে। বিষয়টি নিয়ে শিপিং এজেন্টদের পক্ষ থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বরাবরে জরুরি পত্র দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৬ সালের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। এখন বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার টিইইউএসের বেশি। কিন্তু বন্দরে বর্তমানে ২৫ হাজার টিইইউএসের বেশি কন্টেনার থাকে না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বন্দরে খালি কন্টেনার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই ফোর্সড শিপমেন্ট করারও প্রয়োজন নেই। এই সিস্টেম বন্ধ করা হলে বন্দরের ইমেজ বৃদ্ধি পাবে।

একইভাবে বাংলাদেশ কন্টেনার শিপিং এসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি ক্যাপ্টেন এ এস চৌধুরীও বন্দর চেয়ারম্যান বরাবরে পত্র দিয়েছেন। গতকাল দেয়া এই দুটি পত্রে বিদ্যমান ফোর্সড শিপমেন্ট সিস্টেমকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, বন্দরে এখন কন্টেনার রাখার জায়গার অভাব নেই। আমদানি কমে যাওয়ায় খালি কন্টেনারের পরিমাণও কমে গেছে।