চলমান সংবাদ

সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সর্বশেষ ১২ ঘণ্টায় নিরাপদে ১০ শিশুর জন্ম

-বেসরকারি ক্লিনিকে সিজার বাণিজ্য বন্ধ করতে এ উদ্যোগ

গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা। চমৎকার টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে তারা বদলে দিয়েছেন উপজেলার চিকিৎসা সেবার চিত্র। সর্বশেষ গত সোমবার নরমাল ডেলিভারিতে ১২ ঘণ্টায় ১০ শিশুর জন্ম হয়েছে যার প্রতিটি শিশু এবং মা সুস্থ রয়েছেন।

জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত কয়েকজন চিকিৎসক টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। তাদের এই উদ্যোগ নজির সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসবের উদ্যোগ সফল হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলায় মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলায় অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতন বেসরকারি হাসপাতাল আর ক্লিনিক গজিয়ে উঠায় দালাল চক্রের কারণে নরমাল ডেলিভারি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এসব ক্লিনিক এবং হাসপাতালে সেবার পরিবর্তে শুরু হয়েছে প্রসূতি সিজারের নামে এক ধরনের ব্যবসা। আর অর্থের লোভে তাদের হয়ে কাজ করছে একটি দালাল চক্র। আবার গ্রামাঞ্চলে কিছু অদক্ষ, প্রশিক্ষণবিহীন ধাত্রী রয়েছেন যারা স্থানীয়ভাবে ‘দাই মা’ নামে পরিচিত। এদের হাতে প্রসূতি মায়েদের মৃত্যু ঝুঁকি থাকে সর্বোচ্চ। অনুমোদনহীন বেসরকারি ক্লিনিকে প্রসূতি ও শিশু মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও সড়ক অবরোধের মত ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার।

এমন পরিস্থিতিতে সিজারের নামে বাণিজ্য, দালাল চক্র রোধ এবং অদক্ষ ধাত্রীর হাত থেকে প্রসূতি মায়েদের রক্ষা করে নিরাপদে ডেলিভারি করাতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদের নেতৃত্বে সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক টিম ওয়ার্ক শুরু করেন। তিনি জানান, গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে এই কাজ শুরু করেন সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকগণ। এই এক বছরে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে প্রসূতিদের উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় তারা বিভিন্ন কৌশলও কাজে লাগিয়েছেন। এজন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে প্রসূতি নারীদের বিনামূল্যে ‘প্রসূতি কার্ড’ দেয়া হয়। এরপর ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে কাউন্সেলিং আর ফ্রি চেকআপ। প্রসূতি কার্ড ও নরমাল ডেলিভারি করাতে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষক, চেয়ারম্যান–মেম্বার, ইমাম ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন এনজিওর স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানো হয় প্রসূতি মায়েদের কাছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরাও নিজেরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কাউন্সেলিং প্রদান করেন। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ডা. বিবি কুলসুম সুমি ও জেসমিন আক্তার, নার্স হোসনে আরা বেগম, মেহেরুন্নেসা ও ইন্দিরা চৌধুরী এবং মিডওয়াইফরা মিলে টিম ওয়ার্কের কারণে নরমাল ডেলিভারিতে আমরা সফল হচ্ছি।

অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে জেসমিন আকতার নামে এক সুবিধাভোগী প্রসূতি জানান, দেরি করে সন্তান নেয়ায় ও এলাকার কিছু লোকের কথায় ভয় পেয়েছিলাম। অনেকে ক্লিনিকে সিজার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠকর্মী এবং চিকিৎসকরা অভয় দিয়ে দায়িত্ব নিলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। এখানে নরমাল ডেলিভারিতে আমার সন্তান জন্মলাভ করেছে। আমি এবং ছেলে দুজনই সুস্থ রয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নুর উদ্দিন রাশেদ জানান, ডেলিভারি হওয়ার পর জন্ম নেয়া শিশুর জন্য জামা–কাপড়, মশারি ও শিশুর মাকে উপহার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিন দিন নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে এ ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না। পাশাপাশি কোনো প্রকার খরচ করতে হয় না রোগীর স্বজনদের।