চলমান সংবাদ

চমেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগেও দশ শয্যার আলাদা আইসিইউ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গাইনি বিভাগেও দশ শয্যার আলাদা আইসিইউ স্থাপন হচ্ছে। ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স এন্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অবসটেট্রিক এই আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চমেক হাসপাতালসহ দেশের ১৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবসটেট্রিক এই আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গাইনি ওয়ার্ডে (৩৩নং ওয়ার্ডে) আলাদা এই আইসিইউ স্থাপন করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠির প্রেক্ষিতে আমরা এরইমাঝে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবলের চাহিদাপত্র প্রস্তুত করে পাঠিয়েছি। গাইনি বিভাগে আলাদা এই আইসিইউ স্থাপন হলে অনেক প্রসূতি মা অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবেন। এজন্য অবসটেট্রিক এই আইসিইউ খুবই জরুরি।

গাইনি বিভাগের প্রধান ও চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তারও বলছেন, বর্তমানে মাতৃ মৃত্যু কমানো একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে সন্তান জন্মদানের সময় অনেক প্রসূতির অকাল মৃত্যু হয়। আইসিইউ বা ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দিতে পারলে ওই সময় প্রসূতিকে হয়তো বাঁচানো যেত। কিন্তু আমাদের গাইনি ওয়ার্ডে আলাদা আইসিইউ না থাকায় প্রসূতিরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন আলাদা আইসিইউ স্থাপন হলে তা প্রসূতিদের বড় ধরনের উপকারে আসবে। অনেক প্রসূতি মায়ের জীবন রক্ষা পাবে। এতে মাতৃ মৃত্যুর হারও কমবে বলে মনে করেন চমেক অধ্যক্ষ ও গাইনি বিভাগের প্রধান।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স এন্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক ডা. শাহ গোলাম নবীর স্বাক্ষরে গত ৬ অক্টোবর এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চিঠিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স এন্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত ২য় সংশোধিত ডিপিপিতে ১০ শয্যা বিশিষ্ট অবসটেট্রিক আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এমতাবস্থায় ১০ শয্যা বিশিষ্ট অবসটেট্রিক আইসিইউ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, জনবল, যন্ত্রপাতি, এমএসআর সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য সংযুক্ত ছক আকারে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। এর আগে একই প্রকল্পের আওতায় হাসপাতালে দশ শয্যার শিশু আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগের তথ্য জানিয়ে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে আগে থেকেই দশ শয্যার শিশু আইসিইউ চালু থাকায় বিদ্যমান আইসিইউকে বিশ শয্যায় সম্প্রসারণে প্রস্তাবনা দেয় চমেক হাসপাতাল প্রশাসন। আর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্রও পাঠানো হয় প্রকল্প পরিচালকের কাছে।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠির প্রেক্ষিতে দশ শয্যার অবসটেট্রিক আইসিইউ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবলের চাহিদাপত্র প্রস্তুত করে পাঠিয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত ১৯ অক্টোবর হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানের স্বাক্ষরে এ সংক্রান্ত চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। পরবর্তীতে গত ৩ নভেম্বর এ সংক্রান্ত একটি প্রাক্কলন প্রস্তুত করেও পাঠায় চমেক হাসপাতাল প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ২০ শয্যার আইসিইউ চালু রয়েছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। যদিও সর্বোচ্চ ১৬/১৭টি শয্যায় আইসিইউ সেবা পেয়ে থাকেন রোগীরা। সংকটাপন্ন ও মুমূর্ষু রোগীদের জন্য এই আইসিইউ একমাত্র ভরসাস্থল। কিন্তু বৃহত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র টার্সিয়ারি লেভেলের হাসপাতাল হওয়ায় অনেক দূর-দূরান্তের ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জটিল ও সংকটাপন্ন রোগীদের ঠিকানা হয় এই হাসপাতাল। এর ফলে একই সময়ে জটিল ও সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যাও স্বাভাবিক ভাবে বেশি থাকে এখানে।

কিন্তু আইসিইউ সেবা জরুরি হলেও শয্যার অপ্রতুলতায় সংকটাপন্ন সব রোগীর ঠাঁই হয় না হাসপাতালের আইসিইউতে। একটি আইসিইউ শয্যা পাওয়ার আকুলতা নিয়ে দৈনিক অন্তত শতাধিক সংকটাপন্ন রোগীর স্বজনকে দৌঁড়-ঝাঁপ করতে দেখা যায় হাসপাতালে। মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের তদবিরও থাকে আইসিইউ শয্যার জন্য। তবে শয্যার অপ্রতুলতায় সব রোগীকে আইসিইউ সেবা দিতে অপারগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এবার গাইনি বিভাগে আলাদা দশ শয্যার আইসিইউ স্থাপন হলে জেনারেল আইসিইউতে চাপ অনেকটাই কমবে বলে মনে করেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা।