চলমান সংবাদ

স্বাধীনতার ৫১ বছরেও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকরী হচ্ছে না

 

 নির্বাচন

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির ক্যাপশান, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মনে নানা ক্ষোভ রয়েছে।

পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের ৫১ বছর পেরিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সফলতা যেমন আছে তেমনি অনেক কিছু না পাবার হতাশাও রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

অর্থনৈতিকভাবে গত ৫১ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি হলেও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি মানুষের। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, একটি দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর হতে হলে কিছু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও শক্তিশালী হতে হয়।

উল্টো দিক থেকে বলা যায়, গণতন্ত্র কার্যকরী থাকলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও শক্তিশালী হয়।

রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে যেগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করার কথা।

কিছু রয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং কিছু প্রতিষ্ঠান আছে আলাদা আইনের দ্বারা গঠিত।

এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, অডিটর জেনারেলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা আছে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কিছু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখা গেছে যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তারা তাদের পছন্দসই মানুষদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ করতে পছন্দ করেন।

এক্ষেত্রে যে দুটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা এবং রাজনৈতিক বিতর্ক হয় সেগুলো হচ্ছে নির্বাচন কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন।

বিজয় দিবস
বাংলাদেশের মানুষ বিজয় দিবস উদযাপন করতে পছন্দ করে।

নির্বাচন কমিশন

বাংলাদেশে যে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে সব চেয়ে বেশি বিতর্ক হয় সেটি হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন নিয়ে কথা উঠলেই এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনা এবং সমালোচনা হয়।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ১৯৭২ সালে সংবিধানে নির্বাচন কমিশনের কথা উল্লেখ করা আছে।

কিন্তু একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হয়েও স্বাধীনতার পর থেকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারছে না নির্বাচন কমিশন।

তবে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক ছিল রাজনৈতিক সরকারের অধীনে যেসব নির্বাচন কমিশন ছিল সেগুলো নিয়ে । অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি সরকার তাদের পছন্দসই ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ করে থাকে।

যদিও সর্বশেষ দুটো নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নাম প্রস্তাবের সাহায্যে। কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামেনি।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক তোফায়েল আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে স্পষ্ট যেসব ধারা উল্লেখ করা আছে সেগুলোর কোন পরিবর্তন এখনো হয়নি।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ আইনের কথা সংবিধানে উল্লেখ করা আছে। কিন্তু কোন সরকার সে আইন প্রণয়ন করেনি।

মি. আহমেদ বলেন, কয়েক বছর আগে নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য একটি বাছাই কমিটি গঠন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু সেটি কমিশন পরিচালনার জন্য পূর্ণাঙ্গ কোন আইন নয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের কব্জায় রাখার জন্য নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে চায় নি সরকারগুলো।

মি. আহমেদ বলেন, “আমরা সবাই চেষ্টা করেছিলাম একটা কমপ্রিহেনসিভ আইন হবে। যার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের দায়-দায়িত্ব, কমিশনারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা এবং নির্বাচন

পরিচালনার সময় সরকারি কর্মচারীদের কী দায়িত্ব হবে – সবকিছু একটা আইনের মধ্যে কাভার করা হবে।‘’

দুর্নীতি দমন কমিশন

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

কিন্তু সেই ব্যুরোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারতো না। সেখানে সরকারের কর্তৃত্ব থাকতো বেশি।

ব্যাপক সমালোচনার প্রেক্ষাপটে ২০০৪ সালে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয় ।

কিন্তু সেই কমিশনও রাজনৈতিক প্রভাবের আওতায় রয়েছে বলে মনে করেন দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

“দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের মূল কথাটাই হচ্ছে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা,” তিনি বলেন।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন কখনো কখনো চুনোপুঁটি নিয়ে টানা হেঁচড়া করে। কিন্তু যারা কোন না কোনভাবে ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত, তাদের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না।

দুর্নীতি
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অনেকেই সোচ্চার।

সমস্যাটা কোথায়?

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে রাজনৈতিক পথ-পরিক্রমা মসৃণ নয়। দীর্ঘ সময় সামরিক শাসনের পর ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হলেও শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়নি।

শুধু ২০০১ সালে ক্ষমতাসীন সরকার শান্তিপূর্ণ এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু এর আগে কিংবা পরে কখনোই সে পরিস্থিতি ছিল না।

বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেই বিদায় নিতে হয়েছে সরকারগুলোকে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজনৈতিকদলগুলো ‘জোরপূর্বক’ ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে। ফলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।

সাবেক সচিব এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ফওজুল কবির খান মনে করেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কার্যকরী না থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানও শক্তিশালী হচ্ছে না।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসতে চায়, কিন্তু একবার ক্ষমতায় আসলে আর নামতে চায় না।

‘’ক্ষমতা থেকে নামতে না চাইলে তো তাদের স্বার্থান্বেষী মহলের উপর নির্ভর করতে হয়,” বলেন মি. খান।