চলমান সংবাদ

অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কর

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যৌথ বিবৃতি:
এক যৌথ বিৃবতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুমন মারমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাশ আলো এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে সম্পাদিত ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ২৫ বছরেও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় পাহাড়ে কাঙ্খিত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং পরিস্থিতি বছরের পর বছর জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামীলীগ সরকার একনাগাড়ে ১৪ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেও পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি এবং চুক্তি বাস্তবায়নে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সরকারের পক্ষ থেকে ৭২ টি বিষয়ের মধ্যে ৪৮ টি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে যা অসত্য এবং অপপ্রচার মাত্র। বাস্তবিকপক্ষে চুক্তির ২৫ টি বিষয় বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র। মৌলিক বিষয়সহ এখনো চুক্তির দুই তৃতীয়াংশ বিষয় অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। চুক্তির মৌলিক বিষয়— পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে আইনী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা; পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে সাধারণ প্রশাসন, আইন—শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, পর্যটন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদিসহ রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও কার্যাবলী হস্তান্তর করা; নির্বাচনী বিধিমালা ও স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন পূর্বক আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা; ‘অপারেশন উত্তরণ’ ও সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা; বিধিমালা প্রণয়ণ করে ভূমি কমিশনের মাধ্যমে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করে বেদখল হওয়া জায়গা—জমি জুম্মদের নিকট ফেরত দেয়া; ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুদেও তাঁদের স্ব স্ব জায়গা—জমি প্রত্যার্পণ পূর্বক যথাযথ পুনর্বাসন প্রদান করা; অস্থানীয়দের নিকট প্রদত্ত ভূমি ইজারা বাতিল করা; পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল চাকরিতে জুম্মদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়োগ করা; চুক্তির সাথে সঙ্গতি বিধানকল্পে ১৮৬১ সালের পুলিশ এ্যাক্ট, পুলিশ রেগুলেশন, ১৯২৭ সালের বন আইন ও ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য অন্যান্য আইন সংশোধন; পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সেটেলার বাঙালিদের সম্মানজনক পুনর্বাসন প্রদান করা ইত্যাদি এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। যার ফলে জুম্ম জনগণের ঘরবাড়ি তল্লাসী, গ্রেফতার, ক্রশফায়ারের নামে বিচার—বহিভুর্ত হত্যা, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের, নারীর প্রতি সহিংসতা, অনুপ্রবেশ, ভূমি বেদখল, চুক্তি বিরোধী অপপ্রচার ইত্যাদি মানবতা ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমরা ক্রমাগত লক্ষ্য করছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে কেবল বন্ধই রাখা হয়নি। একই সাথে চুক্তি স্বাক্ষরকারী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মিথ্যা মামলা, ধরপাকড়, হামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে কোণঠাসা ও নস্যাৎ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার ও শাসকগোষ্ঠী। অন্যদিকে এযাবৎ পর্যন্ত শাসকগোষ্ঠীর আশ্রয়ে প্রশয়ে পার্বত্য চুক্তির বিরোধীতা করে গড়ে ওঠা ইউপিডিএফ, জনসংহতি সমিতি(সংস্কারপন্থি), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), মগপার্টি, কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট( বম পার্টি), বহিরাগত সেটেলার বাঙালিদের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ ও অন্যান্য সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী জঙ্গি—গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেরকম কোনো তৎপরতা তো দেখায় যায় নি, বরং তাদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পুরো শাসন ব্যবস্থা সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। সরকার চুক্তির পূর্বের ‘অপারেশন দাবানল’ নামক সেনা শাসন চুক্তির পরে ২০০১ সাল হতে ‘অপারেশন উত্তরণ’ জারি করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চুক্তির বিধান অনুযায়ী অস্থায়ী ক্যাম্পসমূহ স্থায়ী নিবাসে ফেরত নেওয়া বিষয়ে কোন সময়—সীমা আজ অবধি নির্ধারিত হয়নি। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিডিআর বর্তমানে বিজিবি) ও ৬টি স্থায়ী সেনানিবাস (তিন জেলা সদরে তিনটি এবং আলিকদম, রুমা ও দীঘিনালা) ব্যতীত প্রায় চার শতাধিক সামরিক বাহিনী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্যান্য অস্থায়ী ক্যাম্প পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে পযার্য়ক্রমে স্থায়ী নিবাসে ফেরত নেয়া হয়নি। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৯৯৭—১৯৯৯ সালে পাঁচ শতাধিক ক্যাম্পের মধ্যে মাত্র ৭০টি অস্থায়ী ক্যাম্প এবং ২০০৯—২০১৩ সালের মেয়াদকালে ৩৫টি অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংশ্লিষ্ট পরিচালকের কার্যালয় হতে সেনা সদর দপ্তরে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয় কিন্তু আজ অবধি অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। সব নিদের্শনা উপেক্ষা করে প্রত্যাহৃত অনেক অস্থায়ী ক্যাম্প পুনর্বহাল করা হয়েছে। তবে প্রত্যাহৃত অনেক অস্থায়ী ক্যাম্প পুনর্বহাল করা হয়েছে। কেবল করোনা মহামারী কালে ২০টি ক্যাম্প পুন:স্থাপন করা হয়েছে। করোনা মহামার অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের কার্যক্রম বর্তমানে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এই ‘অপারেশন উত্তরণ’—এর বদৌলতে সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসন, আইন—শৃঙ্খলা, বিচারব্যবস্থা, উন্নয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। সেটেলারদের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি, সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয়—প্রশ্রয় প্রদান ও ভূমি বেদখলসহ চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সময় বিশেষে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে।

পড়ুন:  দেশকে এগিয়ে নিতে ছাত্র ইউনিয়নের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম -ফজলুল কবির মিন্টু

নেতৃবৃন্দ কাল বিলম্ব না করে সরকারকে চুক্তি বিরোধী ও জুম্মস্বার্থ পরিপন্থী সকল যড়যন্ত্র ও কার্যক্রম বন্ধ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানান।

# ০১/১২/২০২২, প্রেস বিজ্ঞপ্তি #