চলমান সংবাদ

মুক্তিযোদ্ধা, দুস্থ ও কাঁচা ঘরের মালিকদের গৃহকর পরিশোধ করতে হবে না : মেয়র

 

নগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার, গরিব–দুস্থ ও কাঁচা ঘরের মালিকদের কোনো গৃহকর পরিশোধ করতে হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। গতকাল সকালে আন্দরকিল্লাস্থ নগর ভবনের কে বি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান পর্ষদের ২২তম সাধারণ সভায় এ ঘোষণা দেন তিনি। সভায় নগরের বিভিন্ন সরকারি সেবা সংস্থাগুলো কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য সমন্বয় সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মেয়র চট্টগ্রাম ওয়াসা অনুমতি ছাড়া কোনো সড়ক কাটছে কীনা তা সঠিকভাবে তদারকির জন্য চসিকের প্রধান প্রকৌশলীকে

নির্দেশনা দেন। ইতোমধ্যে চসিকের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের মাসওয়ারি অগ্রগতির প্রতিবেদন প্রদানেরও নির্দেশনা দেন।

নগরের যানজট নিরসনের ফ্লাইওভারে নিচে ও উপযুক্ত স্থানে চসিক ও সিএমপি যৌথ উদ্যোগে পে–পার্কিং ব্যবস্থা চালুকরণের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান মেয়র। এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হতে কন্টেনার ও ট্রাকের উপর চসিকের সুনির্দিষ্ট চার্জ আদায়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং কাস্টমসের বিল অব এন্ট্রি থেকে চার্জ আদায়ের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে ৪ ডিসেম্বরের জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে হবে। তিনি চসিকের আড়াই হাজার কোটি টাকার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, এক হাজার ৩০০ কোটি টাকার বারইপাড়া খাল–খনন প্রকল্প প্রদান করায় নগরবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি চট্টগ্রামের উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণসহ যে সব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন জানিয়ে বলেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধিত হবে । বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সড়ক যোগযোগের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক দিক উন্মোচিত হবে। সেই সাথে চট্টগ্রাম নগরী চীনের সাংহাই নগরীর আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ বাস্তবায়নের ক্ষেত্র তৈরি হবে।

মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও মহাসমাবেশ উপলক্ষে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর নগরীকে বর্ণিলভাবে সজ্জিত করা হয়েছে। জনসভায় আগতদের জনসাধারনের সুবিধার্থে পানীয় জল সরবরাহ, ভ্র্যম্যমাণ টয়লেট স্থাপন এবং মেডিকেল টিমসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সভাস্থলের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ১০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

মেয়র আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের অন্তত এক হাজার কোটি টাকার কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা এবং অন্তত ১০টি ফুট ওভারব্রিজের কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেন মেয়র। তিনি প্রতি ওয়ার্ডে ছোট বড় সকল সড়কের খানাখন্দক মেরামত ও সংস্কার কাজ করারও নির্দেশনা দেন। রাজস্ব আদায়ের গতি বৃদ্ধি করার উপর জোর দিয়ে মেয়র বলেন, অনুমতি বিহীন যেসব স্ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে উপযুক্ত ফি আদায় করার জন্য কর আদায়কারীদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে তা বাস্তবায়ন করা, ট্রেড লাইসেন্স বিহীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনা, ভূ–সম্পত্তি শাখার অধীনে থাকা সম্পত্তি গুলোকে ডেভেলপারের মাধ্যমে উন্নয়ন বা নিজস্ব উদ্যোগে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া নগরীর রিকশা, ভ্যানগুলোর বারকোড যুক্ত লাইসেন্স প্রদানের জন্য প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

যান্ত্রিক শাখার কাজের গতি বৃদ্ধি করার উপর গুরুত্বারোপ করে মেয়র বলেন, মাদারবাড়িতে চসিকের মালিকানাধীন জায়গায় গাড়ি পার্কিং ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাকরণ কাজ দ্রুত শেষ পরামর্শ দেন এবং কাজের গুনগত মান প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকে নজর রাখার নির্দেশনা দেন।

সভায় বারবার তাগাদা দেয়ার পরও বিভিন্ন সড়কবাতির চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসীম। তিনি এ জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে দায়ী করেন। মেয়র বিদ্যুৎ শাখার কর্মকর্তাদের উপর মেয়র ক্ষোভ প্রকাশ করে নগরীতে নিরবিচ্ছন্ন আলোকায়নের ক্ষেত্রে যে অভিযোগ পাওয়া যায় তার পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করেন।

মেয়র বলেন, মশক নিধণের জন্য কার্যকর ওষুধ সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মশক নিধনে প্রণীত সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচী যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা তদারকির জন্য নির্দেশনা দেন। মেয়র জলাবদ্ধতা নিরসনে শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে চসিকের আওতাধীন সকল খাল, নালা–নর্দমা নিজস্ব স্কেভেটরের মাধ্যমে পরিষ্কার করার নির্দেশ দেন। তিনি উচ্ছেদ কাজে সিএমপির সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। উচ্ছেদকৃত স্থানগুলো যাতে পুনরায় দখল হতে না পারে সে ব্যাপারে স্থানীয় থানাগুলোকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

# ২৯/১১/২০২২, চট্টগ্রাম #