বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা: (৭০) হেরসন

– বিজন সাহা     

গত কয়েকদিন যাবত সব জায়গায় এক কথা – হেরসনের একটি অংশ ছেড়ে রুশ সেনাদের চলে আসা। এটা কি পরাজয়? এটা কি বিশ্বাসঘাতকতা? এক ধরনের হতাশা, ব্যথা অনেকের মুখে, অনেকের প্রশ্নে। এটা অনেকটা খেলার মত। যখন প্রিয় দল লড়াই করে হারে তখন খারাপ লাগলেও মানুষ নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দেয় যে চেষ্টা করেছিল। পরের বার সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যদি প্রিয় দল লড়াই না করে হেরে যায় তখন দুঃখের সীমা থাকে না, কেননা মানুষ তখন বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। আর একবার বিশ্বাস হারিয়ে ফেললে স্বপ্ন দেখা, জয়ের অপেক্ষা করা কঠিন। খেলার মতই যুদ্ধেও জয় পরাজয় আছে। যদি খেলায় পরাজয় অনিবার্য জেনেও শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া যায় যুদ্ধে সেটা করা যায় না। কারণ যুদ্ধ রেফারির বাঁশির সাথে শেষ হয় না, শেষ হয় না গোল বা রান আর উইকেটের হিসেবে, এর মূল্য একেবারেই ভিন্ন, এর মূল্য জীবন। তাই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করার পাশাপাশি সময় থাকতে পিছু হটাও একটা অপশন। যদি শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষায় সাহায্য করে তবে অনেক সময় সে পথও ধরা হয়। এই যুদ্ধেই অনেক সেনা শেষ বুলেট পর্যন্ত যুদ্ধে চালিয়ে গেছে আর যখন সহযোদ্ধারা নিরাপদ এলাকায় চলে গেছে তখন গ্রেনেড দিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছে শত্রু সেনা সহ। কখন এটা করেছে? যখন দেখা গেছে শত্রু সংখ্যায় বেশি বা নিজেদের গোলাবারুদ শেষের পথে, যখন দেখা গেছে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মানে হয় মৃত্যু বরণ করা অথবা শত্রুর হাতে বন্দী হওয়া। এ ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার আর এরা পরবর্তীতে বীরের সম্মান পেয়েছে। কিন্তু যখন এ ধরণের পরিস্থিতি বিরাট রকমের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, অনেক সেনার জীবনহানি ঘটাতে পারে তখন আগে থেকে সেনাদের নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে আনাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমার অন্তত সেটাই মনে হয়।

অফিস থেকে যখন বাসায় ফিরলাম গুলিয়া সাথে সাথেই বলে উঠল হেরসন ছেড়ে দিল। ওর গলায় হতাশার সুর। তখন দুয়েকজন বন্ধুদের সাথে কথা বললাম, জানার চেষ্টা করলাম। মনে পড়ল তলস্তয়ের যুদ্ধ ও শান্তি উপন্যাস। কুতুজভের মস্কো ছেড়ে যাবার সেই দৃশ্য। সাঙ্কত পিতেরবুরগে এলিটদের রোষ। মনে হল সেই যুদ্ধে যদি রুশ বাহিনী হেরে যেত তাহলে মিখাইল কুতুজভ আজীবন নিন্দিত হতেন। আর যেহেতু তাঁর স্ট্র্যাটেজি যুদ্ধে জয় এনে দিয়েছে তিনি জীবদ্দশায় তো বটেই এখনও নন্দিত তাঁর অভূতপূর্ব যুদ্ধ পরিকল্পনার জন্য। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কিয়েভে যখন আট লাখ রেড আর্মি আটকা পড়ে তখন মার্শাল ঝুকভ তাদের সরিয়ে আনার প্রস্তাব দেন। কারণ তাঁর মতে এতে সেনাদের জীবনই রক্ষা হবে না নতুন ডেফেন্স লাইন গড়ে তোলা যাবে, মস্কো সহ পূব দিকের অনেক শহর জার্মান বাহিনীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাবে। কিন্তু স্তালিন সেই প্রস্তাব শুধু খারিজ করেই দেন না কিয়েভ রক্ষার দায়িত্ব দেন অন্য এক জেনারেলের উপর। ফলে ৭ লাখ রেড আর্মির সদস্য যুদ্ধবন্দী হয়। হয়তো রাজনৈতিক দিক থেকে স্তালিন সঠিক ছিলেন কারণ তখন যেকোনো মূল্যেই মানুষের মনোবল উঁচু রাখার দরকার ছিল। সে সময় কিয়েভ ছেড়ে দিলে হয়তো মানুষের মধ্যে প্যানিক তৈরি হতে পারত যেটা যুদ্ধের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারত। তবে সামরিক দিক থেকে দেখলে ঝুকভের পরিকল্পনাকেই সঠিক বলে মনে হয়। কেননা দিনের শেষ সব কিছুরই বিচার হয় শেষ ফলাফল দিয়ে।

হেরসন ছেড়ে দেবার কথা অনেক আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল, জেনারেল সুরাভিকিন দায়িত্ব নেবার পর থেকেই বলেছেন এই সম্ভাবনার কথা। কেননা ইউক্রেন বাহিনী অনবরত কাখভ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধের উপর আঘাত হেনে যাচ্ছে, যেকোনো সময় সেটা ভেঙ্গে যেতে পারে। আর সেক্ষেত্রে দনেপার নদের দক্ষিণ দিক পুরোটাই জলে ডুবে যাবে। মারা যাবে সাধারণ মানুষ আর সেনাবাহিনীর সদস্যরা যারা সেখানে অবস্থান করবে। বন্ধ হয়ে যাবে সরবরাহ। এই পরিস্থিতি মাথায় রেখেই বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে সাধারণ মানুষদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেটা যখন শেষ তখন সেনাবাহিনীকে ওখান থেকে সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় ফিরিয়ে নেয়াই জেনারেল সুরাভিকিন সঠিক মনে করেছেন। সেনাদের দনেপার নদের বাম দিকে ফিরিয়ে আনার পরে আন্তনভ ব্রীজ উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে বিগত কয়েক মাস ধরে কিয়েভ একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে গেছে আন্তনভ ব্রীজের উপরে, কিন্তু অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলেও একেবারে ধ্বংস করতে পারেনি। এখন ব্রীজের একটা অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ফলে দনেপার নদ হবে দুই বাহিনীর মাঝে প্রাকৃতিক ব্যারিয়ার। এখান থেকেই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া যাবে। দেখার ব্যাপার যে এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ভাবে অজনপ্রিয় হলেও পুতিন বা এদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেখানে কোন রকম হস্তক্ষেপ করেননি বরং সামরিক বাহিনীর রিকমেন্ডেশন গ্রহণ করেছেন। এছাড়া এই প্রথম কোন জেনারেল সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিলেন। এর আগে কিয়েভ, খারকভ, ক্রাসনি লিমান থেকে সেনাদের সরিয়ে আনার ব্যাপারে কেউ কোন কথা বলেনি, জনগণকে ব্যাখ্যা করেনি কেন এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। জনগণ জানতে চায়, বুঝতে চায়। যখন তাদের কোন রকম ব্যাখ্যা না দিয়ে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ, সেটা মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করে, আর যুদ্ধের সময় অবিশ্বাস – এটা খুবই বিপদজনক।

যারা ২০১৪ থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার রাজনীতি খেয়াল করেছেন দেখবেন রাশিয়া শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছে দনবাসকে ইউক্রেনের মধ্যে রাখতে। সেটা যখন কোন মতেই সম্ভব হয়নি শুরু হয় এই যুদ্ধ। তারপরেও রাশিয়া সব সময় নিজেকে দনবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতেই বদ্ধপরিকর ছিল। কিন্তু যুদ্ধের প্রথম দিকে ইস্তাম্বুল চুক্তির পরে কিয়েভের উপকণ্ঠ থেকে ও পরে খারকভ থেকে সৈন্য সরিয়ে আনলে সেখানে রুশ ভাষাভাষী ও রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষের উপর যেভাবে অত্যাচার নেমে আসে তাতে রাশিয়াকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষদের ব্যাপারে। খেয়াল রাখা দরকার সাদর অভ্যর্থনা না পেলেও রুশ আর্মি কোথাও ইউক্রেনের জনগণের রোষে পড়েনি, কেউ জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলেনি। তাই দক্ষিণ পূর্ব ইউক্রেনের কমবেশি সবাইকেই রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে দেখানো যায়। এসব কারণে হেরসন ও জাপারোঝিয়া রাশিয়ার দখলে এলে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করে রুশ সেনারা যখন চলে যাবে তখন তাদের কি হবে। এক কথায় এসব এলাকার লোকজন যাদের ৬০-৭০% সব সময়ই রাশিয়ার সাথে ভালো সম্পর্কের পক্ষে তারা একরকম বাধ্য করে রাশিয়াকে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে। ফলে প্রথম দিকে তাদের প্ল্যানের বাইরে থাকলেও রাশিয়া শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয় হেরসন ও জাপারঝিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে। এর আগে অবশ্য এসব এলাকার সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে সেই পথ খুলে দেয়। ফলে এখন চাক আর নাই চাক এসব এলাকা ফিরিয়ে আনা ও সেখানকার মানুষদের রক্ষা করা রাশিয়ায় দায়িত্ব। প্রথম দিকে রাশিয়া ঘটনার এ ধরণের ডেভেলপমেন্টের জন্যে প্রস্তুত ছিল না বলেই মনে হয়।

তবে হেরসন ছেড়ে দেবার অন্যান্য কারণ থাকতেই পারে। অন্তত স্পেকুলেশন চলছে। একথা অস্বীকার করার উপয় নেই যে যুদ্ধ যখন শুরু হয়েছিল তখন কেউ জানত না এর গতি এ পথে যাবে। প্রথমত আমেরিকা ও ইউরোপ রাশিয়াকে যুদ্ধে নামানোর জন্য সব করেছে। রাশিয়া বাধ্য হয়েছে এই যুদ্ধে নামতে। কারণ কিছু কিছু যুদ্ধ বা কাজ আছে যখন তুমি তার যেকোনো আউটকামেই হেরে যাবে আবার তোমার প্রতিপক্ষ জিতে যাবে। হ্যাঁ, আমেরিকা জিতছে। জিতছে ইউরোপের অর্থনীতি ধ্বংস করে, জিতছে রাশিয়াকে দুর্বল করে। রাশিয়া হারছে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ যারা রাশিয়ার প্রতি সব সময় লয়াল ছিল তাদের শত্রু করে। তবে পশ্চিমা বিশ্বের ধারণা ছিল এরফলে রুশ অর্থনীতি ধ্বসে পড়বে, যেটা হয়নি। আবার রাশিয়া ভেবেছিল সামরিক অভিযান শুরু করলে ইউক্রেন দনবাস থেকে চলে যাবে, সেখানে গোলাগুলি বন্ধ করবে – সেটাও হয়নি। শুধু তাই নয়, আমার ধারণা ন্যাটো যে এভাবে মাসের পর মাস ইউক্রেনকে সাহায্য করে যাবে, এত অস্ত্র সরবরাহ করবে সেটাও রাশিয়া ভাবেনি। আর দীর্ঘ যুদ্ধের পর দুপক্ষেরই গোলাবারুদের অভাব দেখা দিয়েছে। কারণ ইউক্রেনে অনেক গোলাবারুদের কারখানা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে, রাশিয়ায় গত শতকের নব্বুইয়ের দশকের পর থেকে গোলাবারুদ তৈরি হয়নি। কারণ সবকিছুর মত গোলাবারুদও চিরন্তন নয়, এক সময় সেটাও নষ্ট করতে হয় যা খুবই ব্যয় সাপেক্ষ। তাই কেউই প্রয়োজনের অতিরিক্ত গোলাবারুদ তৈরি করে না। আর যুদ্ধ সিজনাল কিছু নয় যে চাইলেই এসব গোলাবারুদ ব্যবহার করা যাবে। ফলে অনেক অস্ত্রই গোলাবারুদের অভাবে বেকার – অনেকটা কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকদের বেকার হবার মত। অনেকের ধারণা এ কারণেই সৈন্যদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে এবং যত দ্রুত সম্ভব কলকারখানা চালু করে নতুন করে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিতে হবে আর সেটা এ বছরের শেষ বা ২০২৩ এর প্রথমদিকে হবে বলেই অনেকে বলছেন। তবে এটা শুধু ইউক্রেন বা রাশিয়ার সমস্যা নয়, সারা বিশ্বেই মানে আমেরিকা ও ইউরোপে একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। মুখে বললেও এত দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না।

তবে এটাও ঠিক অনেকের ধারণা হেরসন থেকে রাশিয়া চলে আসছে আমেরিকার সাথে গোপন চুক্তির মাধ্যমে। আমার সেটা মনে হয় না। অন্তত বিভিন্ন সাংবাদিক যারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতি কভার করছেন তাদের টেলিগ্রাম কানাল পড়লে সেটা মনে হয় না। অনেকের ধারণা রাশিয়া কাখভ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ ভাঙার কথা মাথায় রেখে সৈন্য ফিরিয়ে আনলেও সেটাই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। এই যে ত্রিশ হাজার সেনা ফ্রি হল সেটা তারা অন্য কোথাও ব্যবহার করতে পারে। কোথায়? সেটাই বড় প্রশ্ন। হতে পারে সেই শক্তি তারা দনবাসে কাজে লাগাবে এবং সেখান থেকে ইউক্রেন বাহিনীকে পুরোপুরি উৎখাত করবে। আবার ক্রিমিয়ার ব্রিজের উপর হামলার পর রাশিয়া বিরামহীন ভাবে ইউক্রেনের বিভিন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অন্যান্য স্থাপনা ধ্বংস করে যাচ্ছে। এর ফলে কিয়েভ সহ বিভিন্ন বড় বড় শহর থেকে জনগণকে সরিয়ে নিতে কিয়েভ বাধ্য হবে। এতদিন পর্যন্ত ইউক্রেন সাধারণ মানুষকে তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। কিয়েভ যখন সাধারণ মানুষকে শহরের বাইরে সরিয়ে নিতে বাধ্য হবে তখন রাশিয়া এসব শহরে আক্রমণ করতে পারে বলেও অনেকেই মনে করছে। এক কথায় যুদ্ধ কেবল শুরু হচ্ছে। সেটা আমেরিকান অনেক বিশেষজ্ঞ বিশেষ করে এক্স-জেনারেলরা বলছেন। তারাও নিজেদের দেশের মানুষদের প্রস্তুত করছেন রাশিয়ার সাথে ন্যাটোর সরাসরি সংঘর্ষের জন্য। অন্তত ইউক্রেন এটা খুব করেই চাইছে। তাই আজ তাদের রকেট পোল্যান্ডে আঘাত করলেও ইউক্রেন সেটা রুশ রকেট বলে প্রমাণ করতে চাইছে যাতে ন্যাটো সরাসরি যুদ্ধে নামে। সেটা হলে জেলেনস্কি ন্যাটোর জন্য আধুনিক ফ্রাঙ্কেস্টাইনের ভূমিকা পালন করবে।

মনে রাখতে হবে যুদ্ধ হচ্ছে রাশিয়ার সাথে ন্যাটোর, যুদ্ধ হচ্ছে ইউক্রেনের মাটিতে, ইউক্রেন সেনাদের অংশগ্রহণে। একদিকে বিশ্বের ৫০% জিডিপি অন্য দিকে ২ – ৩%, এক দিকে এক বিলিয়নের বেশি মানুষ অন্যদিকে ১৪৫ মিলিয়ন, একদিকে তথ্য প্রযুক্তির প্রায় ৭০% অন্য দিকে ৫ – ১০%। সে অর্থে অসম এই যুদ্ধ। উল্লেখ করা যেতে পারে যে যুদ্ধের শুরু থেকেই পশ্চিমা বিশ্ব শুধু অস্ত্র দিয়ে নয় প্রযুক্তি ও তথ্য দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করে আসছে, এমনকি লক্ষ্যবস্তু পর্যন্ত ঠিক করে দিয়েছে – শুধু বোতাম টিপেছে ইউক্রেনের সেনা বা অফিসার। ফটোগ্রাফিতে একটা কথা আছে। ধরুন যদি স্টুডিও লাইট টেকনিশিয়ান শুধু ঠিকই করে না জায়গা মত সেট করে, মেকআপ আর্টিস্ট মডেলকে সাজিয়ে দেয় আর ফটোগ্রাফ শুধু সাটার টেপে তাহলে ছবির অথার কে?  এখানেও তাই। সব করছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড আর পোল্যান্ডের সামরিক বিশেষজ্ঞরা, আর নিজেদের নির্দোষ দেখানোর জন্য ট্রিগার টেপাচ্ছে ইউক্রেনকে দিয়ে। আর এখানেই ভয়। কারণ পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনের জয় চায় না, চায় রাশিয়ার পরাজয়, তারা চায় রাশিয়াকে ধ্বংস করতে। এখন আর তারা রাখাঢাক না করেই রাশিয়ায় জায়গায় কয়েকটি ছোট ছোট দেশের আবির্ভাবের কথা বলে যাদের সহজে শাসন ও শোষণ করা যাবে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া যখন নতজানু ছিল তখন তার মাথায় কন্ট্রোল শট না করে তারা যে ভুল করেছিল তার পুনরাবৃত্তি তারা চায় না। অন্যদিকে ইতিমধ্যে পশ্চিমা বিশ্ব চেষ্টা করছে জাতিসংঘকে ব্যবহার করে রাশিয়ার ৩০০ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করতে। এরকম অনেক কিছুকেই রাশিয়া নিজের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখতে পারে যা থেকে অটোম্যাটিক্যালি চলে আসে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু করার প্রশ্ন।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো