চলমান সংবাদ

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ প্রভাবে চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত

-খাতুনগঞ্জে শত কোটি টাকার ক্ষতি, বিদ্যুস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু

উপকূলে বৃষ্টি ঝরিয়ে শক্তি হারিয়ে মধ্যরাতে উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। নামানো হয়েছে বিপদ সংকেত। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ বড় ধরনের তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’র প্রভাবে সৃষ্ট বাতাসে নগরের পতেঙ্গা এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে বেশকিছু ঘরবাড়ি। পতেঙ্গা, খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই, আছাদগঞ্জ, পাথরঘাটা, কাট্টলী, বাকলিয়া, ফিরিঙ্গিবাজার, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ নিম্নাঞ্চলের কিছু সড়কেও পানি উঠেছিল।

এছাড়া জোয়ারের পানিতে আসবাবপত্র সরাতে গিয়ে নগরীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন এক যুবক। আহত হয়েছেন একই পরিবারের আরও দুজন। এছাড়া আনোয়ারা ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সড়কে গাছ উপড়ে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল ব্যাহত ছিল।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন দপ্তরে খোলা কন্ট্রোল রুমে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’র প্রভাবে জোয়ারের পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আড়ত ও গুদামে থাকা পণ্য নষ্ট হয়েছে। ফলে শত কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে বলে আশংকা ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি অমাবস্যার প্রভাব থাকায় জোয়ারে পানির স্তর অনেক বেড়ে যায়। জোয়ারের পানি চাক্তাই খাল ও রাজাখাল দিয়ে এসে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আছদগঞ্জ তলিয়ে গেছে। সড়ক উপচে বাসাবাড়ি, দোকানপাট, মার্কেটে হাটু পরিমাণ পানি জমে। ফলে আসবাবপত্র এবং দোকানের মালামাল ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে দোকান ও গুদামে থাকা পণ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বিশেষ করে হলুদ, আদা, পেঁয়াজ, রসুন নিয়ে চিন্তিত আড়তদাররা। জোয়ারের পানির সঙ্গে নালা-নর্দমা থেকে উঠে আসা ময়লা-আবর্জনায় সয়লাব হয় প্লাবিত এলাকা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন ব্যবসায়ীসহ এলাকার বাসিন্দারা।

খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, জোয়ারের পানিতে দোকান ও গুদামে থাকা পণ্যের বেশ ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে নিচের দিকে থাকা তিন থেকে চার বস্তা আদা, পেঁয়াজ, রসুন ও হলুদ পানিতে ভিজেছে। এতে করে পণ্যগুলোর গুণগত মানও নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর একই দশা। সবমিলিয়ে এক রাতেই আমাদের কয়েকশ কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। ভিজে যাওয়া পণ্যগুলো রোদে শুকাবো। তবে ভাল দাম পাব না। কারণ পেঁয়াজ, আদা, রসুন পচনশীল পণ্য।

ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র মোবিলাইজার কফিল উদ্দিন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’র প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে উপজেলার আনোয়ারা ও রাঙ্গুনিয়ায় গত রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে একটি ও রাত ৮টা ২৫ মিনিটে একটি গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনা ঘটে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম সড়কে ভেঙে পড়া গাছ দুটি অপসারণ করে। উদ্ধার করা পর্যন্ত সাময়িক যান চলাচল বন্ধ ছিল।’

অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, সিত্রাং’র প্রভাবে সোমবার মধ্যরাতে নগরের চেরাগী পাহাড় ও কাটা পাহাড় এলাকায় ছোট কয়েকটি গাছ পড়ার ঘটনা ঘটেছে। সকালে সিটি কর্পোরেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা তা অপসারণ করে। তবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে নগরের চান্দগাঁওয়ের মোহরায় জোয়ারেরর পানি থেকে ঘরের আসবাবপত্র সরানোর সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মোবারক হোসেন নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এসময় আহত হয়েছেন ওই পরিবারের আরও ৩ সদস্য। সোমবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাতে আড়াইটার দিকে উত্তর মোহরার জান মোহাম্মদ নতুন বাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত মোবারক হোসেন ওই এলাকার মৃত নুর আলমের ছেলে। আহতরা হলেন- মোবারকের ভাই মো. সালাউদ্দিন ও তার স্ত্রী রাশেদা বেগম এবং ছোট ভাই মো. সাদ্দাম। এর মধ্যে সাদ্দামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকি দুইজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’র প্রভাব কমার পর মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালে বঙ্গোপসাগরে ভেসে আসা আনুমানিক সাত মাস বয়সী এক কন্যা শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে সীতাকণ্ড নৌপুলিশ। সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নে কদমরসুল এলাকার একটি শিপইয়ার্ড এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

কুমিরা নৌ পুলিশের ইনচার্জ পরিদর্শক আকরাম উল্লাহ বলেন, অজ্ঞাতপরিচয় শিশু কন্যার মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এটি ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা আগের মারা যাওয়া মরদেহ।’

# ২৫.১০.২০২২ চট্টগ্রাম #