চলমান সংবাদ

বাংলাদেশের অর্থনীতি: আর্থিক সংকট সামলাতে কী ভূমিকা রাখতে পারবে আইএমএফের ঋণ?

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে বাংলাদেশ যে সাড়ে চারশো কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে, সেই বিষয়ে আলোচনা করতে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল বুধবার বাংলাদেশে আসবে বলে কথা রয়েছে।

গত বেশ কয়েকমাস ধরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। টাকার সাথে ডলারের বিনিময় হার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয় ও ব্যায়ের ভারসাম্য ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সেই সংকট সামলাতেই এখন আইএমএফের কাছে ঋণ চাইছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও ঋণ পাওয়ার চেষ্টা চলছে।

কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট সামলাতে আইএমএফ কতটা ভূমিকা পালন করতে পারবে? কেমন হতে পারে তাদের শর্ত? সেটা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পালন করা কতটা সহজ হবে?

কেন আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ?

প্রায় চারশো কোটি ঋণ চেয়ে গত ২৪শে জুলাই আইএমএফের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশের সরকার।

সেই সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস এই ঋণের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ”সাধারণত আইএমএফের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত বৈঠক চলে। সেখানে চার ধরনের ফান্ডিং অপরচুনিটি আছে, যেগুলো আমরা ব্যবহার করি। এগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিবছরই আলোচনা চলে। ”

”এখন যেহেতু আমাদের আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে একটা পার্থক্য হয়েছে, আমাদের ব্যাল্যান্স অব পেমেন্টে একটা ঘাটতি হতে পারে, সেজন্য ‘এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি’ হিসাবে ঋণ চাওয়া হয়েছে। এটা কোন অনুদান না, ফ্রি কিছু না, এটা একটা ঋণ। ফেভারেবল কন্ডিশনে, সহজ শর্তে ঋণ,” তিনি বলছেন ।

ডলার
বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সরবরাহ বাড়িয়ে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না

বাংলাদেশ ১৯৭২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের একটি সদস্য দেশ। এর আগে একাধিকবার এই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ ঋণ নিলেও তা কখনো ১০০ কোটি ডলারের সীমা পার হয়নি।

রেমিটেন্স কম আসা এবং রপ্তানি আয়ের তুলনায় জ্বালানি তেল, গ্যাস, খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি অনেক বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি অনেক বেড়েছে। ফলে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট নিয়েও দেশটি জটিলতায় পড়েছে।

পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সামলাতে বাজারে ডলার ছেড়েছে বাংলাদেশে ব্যাংক। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯শে অক্টোবর দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫.৯৮ বিলিয়ন ডলার।

অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”দেশের যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দীর্ঘদিন স্টেবল পজিশনে ছিল, সেটা কমে যাওয়ায় দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আমদানি সক্ষমতা কমেছে। ভবিষ্যতে সেটা জ্বালানি তেল আমদানি, খাদ্য-পণ্য আমদানি আর রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানির জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ”

এসব কারণে পরিস্থিতি সামলাতে আইএমএফের ঋণ চাইছে বাংলাদেশের সরকার।

ড. মোয়াজ্জেম বলছেন, ”এ ধরণের ঋণ আমাদের রিজার্ভকে স্থিতিশীল রাখতে একটা ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি ডলার মার্কেটে স্বস্তি তৈরি করতে পারে।”

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএমএফের ঋণ পেলে সেটা অন্যান্য দাতা সংস্থার ঋণ সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসাবে কাজ করবে।

সংকট সামলাতে আইএমএফ কি ভূমিকা পালন করতে পারে?

যখন কোন দেশ ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা রিজার্ভ নিয়ে সংকটে পড়ে, তখন সাধারণত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের দ্বারস্থ হয়।

কিন্তু আইএমএফ ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু শর্ত দিয়ে থাকে। অতীতে এরকম শর্তের কারণে বাংলাদেশে ভ্যাট ব্যবস্থা চালু হয়েছিল।

তবে আর্থিক খাতের সংস্কারের এসব শর্তের বাস্তবায়ন অজনপ্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কায় অনেক সময় সরকার ঋণ নিতে চায় না।

কিন্তু এবার রিজার্ভ সংকটের কারণে সেসব ঝুঁকি নিয়েই আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে সরকার।

অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”পৃথিবী জুড়েই সব উন্নয়নশীল দেশ দুটো সমস্যায় পড়েছে – এক, ব্যালেন্স অব পেমেন্টে বড় ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং দুই, এক্সচেঞ্জ রেট আয়ত্তে রাখতে না পারায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এসব ঘাটতি সামলাতে গিয়ে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। কাজেই এই জায়গায় এখন কাজ করতেই হবে। ”

”আমি মনে করি, এই জায়গাতেই আইএমএফ ভূমিকা রাখতে পারবে। আইএমএফের প্রোগ্রামের মূল বিষয় কিন্তু টাকা নয়, বরং অর্থিক নীতির সংস্কার। ফলে যে ডেলিগেশন আসবে, সরকার এবং আইএমএফের মধ্যে আলোচনায় সেটা পরিষ্কার হবে। সেই সংস্কারগুলোই হবে আসল বিষয়, যেটা আর্থিক পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করে তুলবে,” তিনি বলছেন।

এখন বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিমাসে ১২০ কোটি ডলার বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এর ফলে রিজার্ভ লেভেলও কমে যাচ্ছে। ফলে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখন সরকারকে এমন একটা উপায় খুঁজে বের করতে হবে, যাতে বাজার তার নিজস্ব গতিতেই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।

অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, ”আমাদের আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে যে পার্থক্য, সেটা প্রতি মাসে এক বিলিয়ন ডলার করে কমছে। এই ঋণটা পেলে সীমিত আকারে হলেও আমরা অর্থটা ব্যবহারের সুযোগ পাবো। দ্বিতীয়ত, রিজার্ভের একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে টাকার বিনিময় হার স্বস্তিতে রাখবে। সেটা হলে বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনে অস্থিরতা কাটবে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হবে।

সরকার শুধু যে আইএমএফের কাছেই ঋণ চাইছে তা না, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং জাইকার সঙ্গেও বাংলাদেশ সরকারের ঋণ সহায়তা পাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএমএফের ঋণ পেলে এসব সংস্থার ঋণ পাওয়ার পথ সুগম হবে।

কি শর্ত দিতে পারে আইএমএফ?

আইএমএফ কি কি শর্ত দিতে যাচ্ছে, কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে, এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে পরিষ্কারভাবে কিছু জানানো হয়নি।

তবে অতীতের উদাহরণ থেকে বলা যায়, যেকোনো দেশেই ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফ নীতিগত কিছু সংস্কারের শর্ত দিয়ে থাকে।

আইএমএফ ও বিশ্ব্যাংকের শর্ত মেনে বাংলাদেশে লোকসানের মুখে থাকা পাটকল বন্ধ করা হয়েছিল। আবার এসব সংস্থার পরামর্শে বাংলাদেশে ভ্যাট ব্যবস্থা চালু হয়েছিল।

বুধবার যে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আলোচনা করতে আসবে, সেই বিষয়ে আইএমএফের বার্তায় বলা হয়েছে, ২৬শে অক্টোবর থেকে ৯ই নভেম্বর পর্যন্ত আইএমএফ কর্মকর্তারা অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংস্কার এবং নীতি নিয়ে আলোচনা করবে।

সর্বশেষ গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ বিষয়ে আইএমএফ স্টাফ ও এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টরের পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক খাতে বেশ কিছু সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, সেসব সুপারিশ বা শর্ত এবারের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।

এর মধ্যে রয়েছে:

  • বাংলাদেশের রাজস্ব ও কর নীতির সংস্কার করতে হবে। বিশেষ করে রাজস্ব বাড়াতে হবে। সেজন্য ব্যয়ভার সীমিত করতে হবে এবং ব্যয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
  • আর্থিক ব্যবস্থায় আমানত ও ঋণের যে সীমা বেধে দেয়া আছে, সেটা তুলে দিতে হবে।
  • মুদ্রানীতির আধুনিকায়ন করতে হবে। মুদ্রাবাজারের ওপর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে হবে।
  • রিজার্ভ যথেষ্ট থাকলেও সেটা সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া এবং সতর্কতা নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফের প্রধান দফতর
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফের প্রধান দফতর
  • দেশের বিভিন্ন খাতের ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে।
  • ব্যাংকিং খাতে বিধিমালার কঠোর বাস্তবায়ন ও নজরদারি জোরালো করতে হবে। বিশেষ করে আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে যাতে খেলাপি ঋণ হ্রাস পায়।
  • আর্থিক খাতের দুর্বলতা দূর করা এবং পুঁজি বাজার শক্তিশালী করে তুলতে হবে।
  • করোনাভাইরাসের সময়কার খরচের নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হলেও সেটা প্রকাশ করা উচিত।
  • রপ্তানির বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পদক্ষেপ নেয়া, উৎপাদন বাড়ানো, মানব সম্পদের উন্নয়ন ও দুর্নীতি বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।
  • জলবায়ু পরিবর্তনে পদক্ষেপ ও তহবিল বরাদ্দে সংস্কার কার্যক্রমেরও পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।
আইএমএফ ও বিশ্ব্যাংকের শর্ত মেনে বাংলাদেশে লোকশানের মুখে থাকা পাটকল বন্ধ করা হয়েছিল।
আইএমএফ ও বিশ্ব্যাংকের শর্ত মেনে বাংলাদেশে লোকশানের মুখে থাকা পাটকল বন্ধ করা হয়েছিল।

অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, এর মধ্যে রাজস্ব ও কর খাতরে সংস্কার, আমানত ও ঋণের সুদ হারের সীমা তুলে দেয়া, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কয়েকটি শর্ত আইএমএফ ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পেতে পারে।

ডলার সংকটের কারণে এর মধ্যেই মুদ্রাবাজারের ওপর থেকে কর্তৃত্ব অনেকটাই তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, সরকারের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঋণটা পাওয়া। কারণ এর ওপর দেশের অর্থনীতির অনেককিছু নির্ভর করছে। ফলে শর্তের চেয়ে সরকার ঋণ পাওয়ার ওপর জোর দেবে বলে তিনি মনে করেন।

আইএমএফ যেসব শর্তের কথা বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরাও অনেক সময় সেসব সংস্কারের সুপারিশ করেছেন। ফলে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারলে সেটা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে বলেই তারা মনে করছেন।

”কিন্তু সরকারকে অবশ্যই জোর দিতে যেন এসব ঋণ পরিশোধের ধরন দীর্ঘমেয়াদি হয়। কারণ স্বল্পমেয়াদী হলে সেটা আবার কিছুদিনের মধ্যে অর্থনীতির জন্য নতুন চাপ হিসাবে দেখা দিতে পারে, ” বলছেন ড. মোয়াজ্জেম।

এসব শর্ত কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবে বাংলাদেশের সরকার?

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএমএফ যেসব শর্ত দেবে, তার অনেকগুলো বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছুটা সময় পাবে বাংলাদেশ। যেমন রাজস্ব খাতের সংস্কারে হয়তো তিন বা চার বছর সময় পাওয়া যাবে।

আবার কিছু কিছু পদক্ষেপ আশু নেয়ার জন্য বলতে পারে সংস্থাটি। যেমন বর্তমানে আমানত ও ঋণে যে ৬ এবং ৯ শতাংশ সুদের হার রয়েছে, সেটা তুলে দিতে বলতে পারে। এর দ্রুত বাস্তবায়ন চাইতে পারে আইএমএফ।

অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, আইএমএফ যেসব শর্ত দিচ্ছে, তা দেশের অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে।

তবে অনেক সময় রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন দেশের সরকার সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে চায় না।

বাণিজ্য উদারীকরণের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি লাভবান হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
বাণিজ্য উদারীকরণের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি লাভবান হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

তবে আহসান এইচ মনসুর বলছেন, এখন বাংলাদেশ সরকারের সামনে সেরকম “বিলাসিতার” খুব একটা সুযোগ নেই।

”নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো অবশ্যই সরকারকে নিয়ে ফেলতে হবে। হয়তো মুদ্রাবাজার সংস্কার করতে হবে, বিশেষ করে মুদ্রাবাজারের সব পক্ষকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে হবে। সেটা করা গেলে মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে আসবে। এগুলো কিন্তু সরকারকে ইতিবাচক সহায়তা দেবে।”

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, যে শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে, ভবিষ্যতের নিরিখে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য এসব কাজ করা দরকার। ফলে ঋণ পাওয়া যাক বা না যাক, এগুলো বাস্তবায়ন করা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে, সরকারের জন্যও রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হবে না।”

আর্থিক সংস্কার করতে গেলে সেটা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হলেও অনেক সময় জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। যেখানে সামনের বছর নাগাদ বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে, সেখানে এসব সংস্কার কতটা বাস্তবায়নে আগ্রহী হবে সরকার?

ড. আহসান এইচ মনসুর বলছেন, ”আসলে দেশের অর্থনীতি যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, তাতে এসব সংস্কার করা ছাড়া, আইএমএফের শর্ত মানা ছাড়া সরকারের সামনে বড় কোন বিকল্প নেই। কারণ সেটা করতে গেলে শুধু আইএমএফ নয়, বিশ্বব্যাংক বা এডিবির মতো অন্য সংস্থাগুলোর আস্থা হারাবে সরকার। আবার দেশের রিজার্ভ, ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি আর মুদ্রাবাজারের যে অবস্থা, তাতে সরকারের একার পক্ষে বেশিদিন টেনে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।”

“তবে আমি মনে করি, এসব শর্তের ব্যাপারে কিছুটা হলেও সরকারের সম্মতি আছে। তা না হলে তারা এতদূর যেত না। আইএমএফের স্টেটমেন্ট দেখে মনে হচ্ছে, তারাও আশাবাদী এখানে কিছু হবে। সরকারও চাপের মধ্যে আছে। কিছু করতে হলে তাদের দ্রুত করতে হবে। এখানে খুব বেশি দেরি করার সুযোগ সরকারের কাছে নেই,” তিনি বলছেন।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা