বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (৬৬): যুদ্ধ তুমি কি অজগরের চেয়েও লম্বা?

– বিজন সাহা    

যুদ্ধ চলছে। শুধু চলছেই না দিন দিন তার তীব্রতা বেড়েই চলছে। কেন? কিছুদিন আগে আমরা বলেছি এই যুদ্ধের ফলে আসলে কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি গণতন্ত্র, মানবতা, বাক স্বাধীনতার বুলি যতই কপচাক না কেন যতদিন পর্যন্ত যুদ্ধ লাভ বা প্রফিট নিয়ে আসবে ততদিন পর্যন্ত পৃথিবী থেকে যুদ্ধ বিদায় নেবে না। অনেক আগে একবার লিখেছিলাম ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর ন্যাটোর মত সামরিক জোট তার প্রাসঙ্গিকতা হারায়। কিন্তু সেটাকে বিলুপ্ত না করে বরং আরও সম্প্রসারিত করা হয়। কেন? কারণ এর পেছনে, বিশেষ করে আমেরিকার মত দেশের রাজনীতিতে অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির কথা বাদই দিলাম, প্রতিটি নাগরিকের স্বাধীন ভাবে অস্ত্র রাখার যে অধিকার প্রতি বছর শত শত আমেরিকান নাগরিকের মৃত্যুর কারণ হয়, যে আইনের কারণে সে দেশে বাবা মা নিশ্চিন্ত মনে তাদের শিশুদের স্কুলে পর্যন্ত পাঠাতে পারে না – এই অস্ত্র ব্যবসায়ীদের লবির কারণে এই আইন পর্যন্ত বাতিল করতে পারেনা যে দেশ, সে দেশ যে ভিন্ন দেশ, ভিন্ন জাতির বাঁচার অধিকার থোড়াই কেয়ার করবে সেটা কি বলার অপেক্ষা রাখে? এই অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কারণেই শুধু ন্যাটোই সম্প্রসারিত করা হয় না, প্রথমে আমেরিকার জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় আল কায়েদা, তালেবান ইত্যাদি মৌলবাদী সংগঠন তৈরি করা হয় আর যখন দেখা যায় সেসব সংগঠন দিয়ে রুই কাতলা মারা যাচ্ছে না তখন রাশিয়া, চীন এসব দেশের পেছনে লাগা হয় যেন এরা বাধ্য হয় যুদ্ধে নামতে। তাই বললাম – যুদ্ধ, এটা আমাদের মত সাধারণ মানুষের জন্য দুঃখ কষ্টের ব্যাপার আর রাঘব বোয়ালদের জন্য পাহাড় পরিমাণ সম্পদ অর্জনের একটা উপায় মাত্র। আমেরিকান ড্রীম বলে যদি কিছু থেকে থাকে – সেই ড্রীম বাস্তবায়নে খুবই কার্যকর পন্থা। আর তাই যুদ্ধ থামানোর তো প্রশ্নই আসে না, বরং সেটা যাতে আরও ছড়িয়ে দেয়া যায় সেটাই করা হবে। পৃথিবীর ইতিহাস, তার উন্নতির বা অবনতির ইতিহাস সে তো যুদ্ধের ইতিহাস। মৃত্যু যেমন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, যুদ্ধ তেমনি শান্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই আমরা পছন্দ করি বা নাই করি যুদ্ধ থেকে মুক্তি নেই। আর যত দিন যুদ্ধ লাভজনক ততদিন যুদ্ধকে ক্ষমতাশালী মানুষ ধান দুর্বা দিয়ে বরণ করে নেবেই নেবে।

আজকাল দেশ বিদেশ থেকে অনেকেই প্রশ্ন করে রাশিয়া সাত মাসেও যুদ্ধ শেষ করতে পারছে না কেন? তারা ভুলে যায় ইউক্রেন একটা বিশাল দেশ। আয়তনের দিক থেকে ইউরোপের প্রধান প্রধান কয়েকটি দেশের সম্মিলিত আয়তনের সমান। এখানকার লোকজনের একটা বিরাট অংশ সোভিয়েত সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। তাছাড়া গত আট বছরে তারা দনবাসে এমন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে যে সেসব থেকে তাদের হঠানো যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। তারপরেও যদি ন্যাটো অনবরত অস্ত্র সরবরাহ করে না যেত ইউক্রেন সৈন্যও অনেক আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। এদের হিসেব মতে গত সাত মাসের যুদ্ধে রাশিয়া হারিয়েছে ৬ হাজারের মত সৈন্য, যেখানে ইউক্রেন হারিয়েছে ৬২ হাজার। আহত রাশিয়ার পাঁচ হাজারের মত, ওদের প্রায় ৫০ হাজার। পশ্চিমা বিভিন্ন মাধ্যম ইউক্রেন সৈন্যদের ক্ষয়ক্ষতি আরেকটু বেশিই দেখায়। তাই যুদ্ধে কি হচ্ছে এখান থেকেই তার ধারণা করা যায়। এই প্রেক্ষিতে বেসামরিক নাগরিকদের যে হিসেব জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা দেয় সেটা ১৭ অক্টোবর ২০২২ পর্যন্ত এরকম – ৬৩০৬ নিহত আর ৯৬০২ আহত। যদি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্বের ইরাক, আফগানিস্তানের হিসেবটা তুলনায় আনি তাহলে সেটা একেবারেই নগণ্য। যুদ্ধের এই পুরো সময় ধরে ইউক্রেন দনবাস, হেরসন, জাপারঝিয়া এবং রাশিয়ার কিছু কিছু অঞ্চলের বেসামরিক স্থাপনা আক্রমণ করছে যাতে বহু লোক মারা গেছে। কিছুদিন আগে ক্রিমিয়ার ব্রীজ আক্রমণের পর রাশিয়া এখন প্রায় প্রতিদিন এদের বিভিন্ন বেসামরিক স্থাপনা যেমন বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেল স্টেশন ইত্যাদি আক্রমণ করছে। প্রতিদিন প্রায় শত খানেক স্থাপনা আক্রান্ত হচ্ছে। এই হামলায় সেদেশের ৩০% বিদ্যুৎ কেন্দ্র নাকি অচল যদিও স্পুটনিক থেকে প্রাপ্ত ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকের আর গত ১৭ অক্টোবরের ছবি মেলালে দেখা যায় ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি। এরপরেও এমনকি কিয়েভের নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী মারা গেছে সব মিলিয়ে জনা পনের মানুষ। এর মানে কিয়েভ যাই বলুক, এরা সাধারণ মানুষ যাতে মারা না যায় সেদিকে যত্নবান। সেদিন ইউক্রেনের এক সেনার ইন্টারভিউ দেখাচ্ছিল কিয়েভের এক টিভি প্রোগ্রামে। লোকক্ষয় সম্পর্কে তার বক্তব্য এরকম। মিসাইল দিয়ে ড্রোন নামানো খুব ব্যয় সাপেক্ষ আর অনেক সময় মিসাইল ড্রোন মিস করে শহরে পড়ে। তাই তারা বন্দুক দিয়ে গুলি করে ড্রোন নামাতে। তাতে হিতে বিপরীত। কারণ এতে করে ড্রোন তার লক্ষ্যে না পৌঁছে আবাসিক এলাকায় পড়ে। ফলে এই লোকক্ষয়ের জন্য পক্ষান্তরে ইউক্রেন নিজেই দায়ী। তাই সেখানে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে কেউ ড্রোন লক্ষ্য করে গুলি না করে।

যুদ্ধ দীর্ঘ হচ্ছে বলে বাংলাদেশের মানুষেরও নাভিশ্বাস উঠেছে। এমনকি ফেসবুকে এমন পোস্টার দেখেছি রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধ করে আর সেই যুদ্ধের ব্যয় বহন করে বাংলাদেশ। যুদ্ধ যে সারা পৃথিবীর সাধারণ মানুষের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছে সেটা অবশ্য নেতারা বোঝে না। এখন তাদের ঘোলা জলে মাছ মারার সময়, নিজেরদের বিভিন্ন ব্যর্থতা গোপন করার এত সুন্দর সুযোগ আবার কবে হবে? আমার তো মনে হয় কিছুদিন পরে সারাবিশ্বে ছেলেমেয়েরা পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্টের জন্য পুতিনকে দায়ী করবে। কিন্তু যুদ্ধ আসে নিজের ইচ্ছায় যায় পরের ইচ্ছায়। তাই সে এখন চাইলেও যেতে পারবে না, তাকে যেতে দেবে না আমেরিকা আর ইংল্যান্ড। তাদের এলিট শ্রেণির আভ্যন্তরীণ রাজনীতির শারীরিক অবস্থা সুবিধার নয়। আবার যুদ্ধের ফলে তাদের স্পন্সররা ট্যু পাইস কামিয়ে নিচ্ছে। তাই কী হবে যুদ্ধকে বিদায় জানিয়ে? সেটা যাতে আরও দীর্ঘ দিন চলে তাই কিয়েভ ইতিমধ্যে ইচকেরিয়াকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইচকেরিয়া – এটা চেচনিয়ার নাম। এখন অবশ্য তার কিছুই অবশিষ্ট নেই ইংল্যান্ড আর আমেরিকার পালিয়ে থাকা কিছু দ্বিতীয় সারির নেতা ছাড়া। আসলে আমেরিকায় এখন আলমারি থেকে ইচকেরিয়ার কঙ্কাল বের করে আনছে যুদ্ধটা জিইয়ে রাখার জন্য। এদিকে লাটভিয়ার পর এস্টোনিয়াও রাশিয়াকে সন্ত্রাসবাদী দেশ বলে ঘোষণা করেছে। এরা সেই সব দেশ যেখানে হিটলারের এসএসের স্থানীয় দোসররা মার্চ করে, বীরের মর্যাদা পায়। এটা অনেকটা আমাদের দেশে রাজাকারদের মন্ত্রী হবার মত আর কি। এরা সেই সব দেশ যেখানে স্থানীয় রুশদের মাতৃভাষায় পড়ার সুযোগ কেড়ে নেওয়া হয়। কথায় বলে চোরের মার বড় গলা। এরাও তাই। তবে এরা এসব করছে আমেরিকার নির্দেশে আর এসব করার অর্থ আমেরিকা চাইছে যুদ্ধের পরিধি বাড়ানোর জন্য। তাছাড়া এখন কেউই রাখঢাক করছে না, বলছে ইউক্রেনের পরাজয় মানে ন্যাটোর পরাজয়। তাই বোঝাই যায় যুদ্ধটা কার সাথে কার। কী অর্থ, কী জনবল সব দিকেই পশ্চিমা বিশ্ব এদের চেয়ে এগিয়া। সবচেয়ে বড় কথা তারা ভাবছে রাশিয়া যদি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করেও সেটা করবে ইউক্রেনে। মনে হয় এটাই তাদের মিস লীড করছে। আর এর ফলে কারও রাশিয়াকে খোঁচা দিয়ে দেখার আগ্রহ জাগতেই পারে। তবে সেটা যে মানব সভ্যতার জন্য ধ্বংসাত্মক হবে সেটা তারা বুঝতে পারছে না।

বিভিন্ন মানুষের কথা শুনে অনেক সময় মনে হয় অধিকাংশ মানুষ ইরাক, আফগানিস্তান এসব দেশে আমেরিকার এক তরফা বোমাবাজি দেখে যুদ্ধের গতিবিধি সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসে। আমি একাত্তরের যুদ্ধে দেশে থাকলেও এভাবে যুদ্ধ দেখার সুযোগ পাইনি। পরে রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়াড, যুদ্ধ ও শান্তি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু কিছু ইতিহাস পড়ে বুঝেছি যুদ্ধ শুধু প্লেন থেকে বোমা ফেলে নিরাপদ দূরত্বে পালিয়ে যাওয়া নয়, যুদ্ধ দাবার মত কৌশলগত খেলা। এই যুদ্ধে ক্ল্যাসিক যুদ্ধের কিছু কিছু আভাস পাওয়া যাচ্ছে যেটা টিভিতে যুদ্ধ দেখে আমরা ভুলে গেছি। আসলে অনেক দিন পরে পৃথিবীতে একটা সত্যিকারের যুদ্ধ হচ্ছে, যেখানে কৌশলগত পজিশনিং, এই সামনে এগোয় তো এই পেছনে হটে – এসব বিভিন্ন ধরণের কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে রণক্ষেত্র থেকে যে খবর আসছে সেটা অনেক ক্ষেত্রেই স্থবির মনে হচ্ছে। আসলে সেখানে চলছে অনবরত কৌশলগত যুদ্ধ। আর তাই যত তাড়াতাড়ি যুদ্ধ শেষ হবে বলে অনেকেই ভেবেছিল সেটা হচ্ছে না।

আমার অনেক বন্ধু যারা সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়াশোনা করেছে সুযোগ পেলেই বলে রাশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়ন নয় তাই সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন অবদানের জন্য রাশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার কোন কারণ নেই। কথাটা মোটেই অযৌক্তিক নয়, অন্ততঃ ফর্মাল দিক থেকে। পুতিন বিরোধিতা করতে গিয়ে এরা প্রায়ই রুশ বিরোধিতা করে ঠিক যেমনটা রবীন্দ্র বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেকেই বাংলা বিরোধিতা করে। একই সাথে নিজেরা যে কৃতঘ্ন নয় সেটা প্রকাশের জন্য এরা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে ভুলে না। তবে ইউক্রেন বা বাল্টিকের দেশগুলোতে যখন তথাকথিত ডিসোভিয়েতিজেশন হয় সেটা সেসব গণতন্ত্রের সস দিয়ে মাখিয়ে দিব্যি গিলে ফেলে। আমার প্রায়ই জানতে ইচ্ছে করে যদি কেউ বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের স্মৃতি মুছে ফেলতে বাহান্ন, চুয়ান্ন, বাষট্টি, ঊনসত্তর, একাত্তর মানে যা কিছু পাকিস্তানের কথা মনে করিয়ে দেয় সব বাতিল করতে এরা তখন কোন যুক্তি দিতেন। অথবা ধরুন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনা মারা গেছে তাদের যদি বাংলাদেশের মাটিতে সমাহিত করা হত আর একসময় সেই সব সমাধি সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুমোদনে ধ্বংস করা হত, তাহলে সেটাকে ভারতের সাধারণ কিভাবে নিত? ইউক্রেনে কিন্তু প্রায় প্রতিটি পরিবার সেই যুদ্ধে তাদের আত্মীয় স্বজন হারিয়েছিল। এখন ভেবে দেখুন সে দেশের এসব মানুষের মনের অবস্থা? তাই ডিসোভিয়েতিজেশন নিয়ে যারা বলতে চান তাদের একটু ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখতে বলব। আসলে এ সবই মনে হয় শুধুই কথার কথা, মানে ডিসোভিয়েতিজেশন। কেন? সত্যি কথা বলতে কি ১৯৯১ সালের পরে প্রায় রাশিয়া সব সব দেশই এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে। সোভিয়েত বলতে আসলে বোঝায় এক বিশেষ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। আর ১৯৯১ সালে এসব দেশ এ দুটোই ত্যাগ করেছে। তাই নতুন করে ডিসোভিয়েতিজেশন করার কিছু নেই। সেটা কেউ করতে চাইলে বুঝতে হবে সেসব দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব আসলে ব্যর্থ আর নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই এসব রাজনৈতিক স্লোগান সামনে আনা হচ্ছে। অন্তত না ইউক্রেনে, না বাল্টিকের দেশগুলোয়, না পূর্ব ইউরোপের কোন দেশের সাধারণ মানুষ এই স্ট্যাচু ভাঙ্গা, রুশ কবি লেখকদের বাতিল করার মধ্য দিয়ে এতটুকু উপকৃত হয়নি। এসবই পপুলিস্টিক স্লোগান। এসব করে এসব দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরাধিকার অস্বীকার তো করছেই না, উল্টো সোভিয়েত ইউনিয়নকে বা সঠিক ভাবে বলতে গেলে সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে খারাপ দিকগুলোকে বেশি করে আঁকড়ে ধরছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন যেমন ১৯১৭ সালের আগের সবকিছু না হলেও অনেক কিছুই অস্বীকার করেছে, এরাও সেটাই করছে। কিন্তু তাদের ফর্মুলায় ডিসোভিয়েতিজেশন করতে হলে তো এসব দেশকে একশ বছর পিছিয়ে যেতে হবে। বাতিল করতে হবে শিল্প, শিক্ষা, মেট্রো থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের সবকিছু কারণ বাল্টিক দেশগুলো ও ইউক্রেনের সমস্ত শিল্প, কলকারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এসব সোভিয়েত আমলেই তৈরি। তাই গত কয়েক দিন যাবত এসব স্থাপনার উপর রাশিয়ার আক্রমণের পরে অনেকেই বলছে রাশিয়া আসলে ইউক্রেনের অসমাপ্ত কাজ শেষ করছে, সে দেশের ডিসোভিয়েতিজেশন যাতে ষোল কলায় পূর্ণ হয় সেটাই করে দিচ্ছে।

জীবন হল স্কুলের মত – প্রতিটি পদক্ষেপে এখানে শেখা যায়। যারা শিখতে পারে তারা এগিয়ে যায় আর যারা সবজান্তা মনে করে তারা হারিয়ে যায়। যুদ্ধও এর ব্যতিক্রম নয়। ফলে যুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বদল হচ্ছে কৌশল। ইতিমধ্যে অনেকেই প্রশ্ন করতে শুরু করেছিল কোথায় এই যুদ্ধের সুভরভ, কুতুজভ, ঝুকভ, রাকাসভস্কি। শেষ পর্যন্ত এই অপারেশনের সেনাপতি নিয়োগ পেয়েছে – তিনি সেরগেই সুরোভিকিন। ইতিমধ্যে মবিলাইজেশনের কাজ শেষ।

এদুয়ারদ উসপেনস্কির অজগরের দিদিমা বলে এক গল্প আছে। অজরের কাছে বেড়াতে এসেছে তার দিদিমা। অজগর তখন তার বন্ধু টিয়ে, বাচ্চা হাতি আর বানরের সাথে খেলায় ব্যস্ত। বানর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল

– দিদিমা তুমি অলরেডি চলে এসেছ?
– নারে বাছা, এখন শুধু আমার মাথা এসেছে। লেজ এখনও অনেক দূরে, আসতে আরও সময় লাগবে। তোরা আপাতত খেলাধুলা কর, আমি দেখি লেজের আসার কতদূর?

হ্যাঁ, যুদ্ধ শেষের অনেক বাকি। ইতিমধ্যে ইউক্রেন হেরসন আক্রমণের উদ্যোগ নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ওরা কাখভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপর আঘাত হানবে, ফলে হেরসন শহরের অনেকটাই ডুবে যাবে। তাই রাশিয়া সেখানকার অধিবাসীদের দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। আজই দানিয়েৎস্ক, লুগানস্ক, হেরসন ও জাপারঝিয়ায় জরুরি ঘোষণা করা হয়েছে। আংশিক জরুরি অবস্থা সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। মস্কো সহ বিভিন্ন বড় বড় শহরে জরুরি অবস্থা জারি না হলেও সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে। কারণ ইউক্রেনের মুক্ত এলাকা থেকে যেসব মানুষ আসছে তাদের সাথে যে সন্ত্রাসবাদীরা আসছে না তার গ্যারান্টি নেই। তাছাড়া এখানেও ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করে এমন মানুষ আছে। এই যে কতগুলো সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটলো বা আগেই ধরা পড়ে সেই পরিকল্পনা বাঞ্চাল হয়ে গেল এদের মধ্যে স্থানীয় সহযোগীরাও ছিল – কেউ জেনে, কেউ না জেনে। মীর জাফর কোন আঞ্চলিক বিশেষত্ব নয়।  খেলা জমছে। এসব নিয়ে পরের পর্বে।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো