মতামত

যুদ্ধ : কসাইখানার সমস্যা ও সমাধান

-কাজী তানভীর হোসেন

অতীতে ঘটে যাওয়া যুদ্ধগুলো গোটা বিশ্বকে একটা কসাইখানায় পরিণত করেছিল। এখনও পৃথিবীর কোথাও না কোথাও যুদ্ধ লেগেই আছে৷ সম্প্রতি শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।  হাজার হাজার মানুষ হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় যুদ্ধগুলো আরও একবার বৈশ্বিক রুপ নিচ্ছে।  এমতাবস্থায় যখন জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে, তখন প্রয়োজন দেখা দিলো যুদ্ধ সমস্যার কারণ ও এর সমাধান সম্পর্কে প্রত্যেকের পরিষ্কার ধারণা।একটি রাষ্ট্র যদি জনগণের সেবা করার প্রতিষ্ঠান হয়, তাহলে রাষ্ট্রটি অবশ্যই জনগণের স্বার্থে কাজ করতে বাধ্য থাকা আবশ্যক। রাষ্ট্র জনগণের সেবা করার জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনী পোষে। তাই শ্রমিকরা রাষ্ট্রের সমস্ত ব্যয় বহন করে। শুধু তা-ই নয়, শ্রমিকদেরকেও অধিকাংশ যুদ্ধে আহবান করা হয়। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত এবং মৃতদের বড় অংশই থাকে শ্রমিক। যুদ্ধে দুই ধরণের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমত মাটি, পানি, আবহাওয়া, বনাঞ্চল, পশুপাখি বা প্রাকৃতিক সম্পদ।  দ্বিতীয়ত, বাড়ি-ঘর, ব্যবহার উপযোগী পণ্য,  রাস্তা-ঘাট, প্রযুক্তি ইত্যাদি  যেগুলো মূলত শ্রমিক দ্বারা উৎপাদিত সম্পদ।

তাই সকল যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রকে যুদ্ধের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।

শ্রমিকদের বর্তমান পরিস্থিতি কী? কেমন আছেন কোটি কোটি শ্রমিক, যারা রাষ্ট্রের সকল উৎপাদনের যোগানদাতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকা শক্তি।

বর্তমানে শ্রমিকেরা অত্যাধিক শ্রম দেওয়ার ফলে নানান শারীরিক-মানসিক সমস্যায় ভোগে । শ্রমিকেরা পায়না অবসরের সুযোগ। এতবেশী শ্রম দেওয়ার পরও শ্রমিকেরা নূন্যতম খাদ্য-বস্ত্র থেকে বঞ্চিত হয়। শ্রমিকের বেঁচে থাকার জন্য একমাত্র সম্পদ  হল নিজের শ্রম। এটা বিক্রি করে সে খায়। সে শ্রম না দিলে না খেয়ে মরে। একজন শ্রমিক যে দেশেরই হোক, শ্রম দেওয়ার বিনিময়ে বেতন পায়। এবং বর্তমানে বেঁচে থাকতে হলে বেতনের বিনিময়ে তিনি কাজ করতে বাধ্য থাকেন। অতএব, বেঁচে থাকার জন্য  শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কোনো দেশ দরকার নেই, কেবলমাত্র দরকার আছে শ্রম দেয়ার সক্ষমতা। তাই, বেঁচে থাকতে হলে দেশ ছাড়াও শ্রমিকদের নিজের শরীরই যথেষ্ট।  তাইতো, শ্রম দেওয়ার জন্য শ্রমিকরা নানান দেশে যায়। আর, যে দেশেই শ্রমিক যাক, শ্রম দিতে না পারলে তার কোনো মূল্য নাই।

আমরা যখন বলি, কলমটি আমার; তখন এর মধ্য দিয়ে বলি যে, কলমটি আমার স্বার্থে ব্যাবহার করতে পারি। কিন্তু, যখন বলি যে এই দেশটি আমার, তখন এর মধ্য দিয়ে আমরা কী বোঝাই? কোনো দেশ কি আমরা আমাদের স্বার্থে ব্যাবহার করতে পারি?
যুদ্ধে হেরে গেলে কি শ্রমিকরা না খেয়ে মারা যাবে? ৭১ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর কি পাকিস্তানের শ্রমিকেরা না খেয়ে মারা গেছে? যুদ্ধে জিতে গেলে কি বসে বসে খেতে পারবে শ্রমিকেরা? ৭১ সালে জিতে যাওয়ার পর বাংলাদেশের শ্রমিকরা কি খুব শান্তিতে ছিল? নাকি এখন খুব শান্তিতে আছে? যুদ্ধে জিতলে কী শ্রমিকরা শ্রম না দিয়ে বসে বসে খেতে পারবে? বসে বসে খাওয়ার জন্য কে উৎপাদন করবে খাবার? বেঁচে থাকার জন্য যদি উৎপাদনই করতে হয় শ্রমিকরা, তবে উৎপাদনের জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন উৎপাদনের মেশিন আর শ্রম। সেই মেশিনটা বাংলাদেশ নাকি ভারতে অবস্থিত, তা দিয়ে শ্রমিকের কি কাজ? সেই শ্রম কোন দেশের মেশিনে দেয়া হল, তা দিয়ে শ্রমিকের কাজ কি? সুতরাং, কোনো দেশ শ্রমিক শ্রেণীর কোনো প্রয়োজনে আসেনা বলে শ্রমিকদের কোনো দেশ নাই। তাই কোনো দেশের যুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীর কোনো সমর্থন থাকার প্রয়োজন নেই। শ্রমিক শ্রেণীর শ্রম আছে। এই শ্রম ব্যাক্তিগত শ্রম। এই শ্রম শ্রমিকরা কোথায় ও কিভাবে ব্যায় করবে এটা শ্রমিক শ্রেণীই সিদ্ধান্ত নেবে। কোনো দেশ কারো শ্রমের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা।

শ্রমিকদের যেহেতু যুদ্ধের প্রয়োজন নেই, সেহেতু সেনাবাহিনীরও প্রয়োজন নেই। যেহেতু রাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই, সেহেতু রাষ্ট্রের এমপি-মন্ত্রী পোষারও কোনো দরকার নেই। যেহেতু রাষ্ট্র ও সৈন্যদের স্বার্থ আছে যুদ্ধের, তাহলে ওরা কি খেয়ে যুদ্ধ করবে সে সিদ্ধান্ত  তাদেরকেই নিতে দিন। শ্রমিকরা নিজেদের শ্রম নিয়ে সরে গেলে কি ঘটবে?  এতে করে ওদের খাদ্য-বস্ত্র-অস্ত্র তৈরী করতে শ্রমিকরা যে শ্রম দিতে হয় সেই বাড়তি শ্রমের সমস্যা হতে শ্রমিকরা বাঁচবে। আর যেহেতু রাষ্ট্রীয় বাহিনী না খেয়ে যুদ্ধ করতে পারবেনা, তাই যুদ্ধও হবেনা বলে হত্যাও হবেনা, ধ্বংসযজ্ঞও হবেনা। বাঁচার জন্য এবার এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে সকল দেশের সেনাবাহিনী উৎপাদন করতে বাধ্য হবে। উৎপাদন যিনি করে, যিনি শ্রম দেন, তিনিই শ্রমিক।  কোনো মন্ত্রী নাই, কোনো সেনাবাহিনী নাই। কোনো দেশ রক্ষাকারী নাই। তাই আর কোনো দেশ নেই৷ তাই দুনিয়ায় আর দেশে-দেশে যুদ্ধ নাই। কারণ দেশ রক্ষা করার লোক এবার নিজের খাদ্য উৎপাদন করতে ব্যাস্ত আছে। আর, যিনি খাদ্যের জন্যই দেশ রক্ষা করার চাকরি হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিল, তিনিই খাদ্যের জন্য এবার উৎপাদন করবেন। তফাৎটা হল আগে শ্রম দিতো পিস্তলে, এখন শ্রম দেবে প্রোডাক্ট তৈরীর মেশিনে। আর গুলি খেয়ে মরার আশঙ্কা নাই, তবে নিশ্চিন্তে খাবার খেয়ে বাঁচার সুযোগ আছে।

আসলেই সৈন্যরা কেন যুদ্ধ করে?  সৈন্যরা রাষ্ট্রের বেতনভোগী কর্মচারী।  যুদ্ধ থেকে সৈন্যদের নির্দিষ্ট কোনো চাওয়া নেই। বরঞ্চ তারা জীবন হারায়। তারা কেবল বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য-বস্ত্র চায়।  রাষ্ট্র কেন সৈন্য পোষে? রাষ্ট্র কি চায়?   রাষ্ট্র কার খরচে চলে? স্বদেশী পুঁজির মালিকদের।  সুতরাং স্বদেশী মালিকদের স্বার্থেই রাষ্ট্র যুদ্ধের পরিকল্পনা করে।  স্বদেশী পুঁজির মালিকদের কোন ধরণের স্বার্থ যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত? এবার এই প্রসঙ্গে আলোচনায় আসুন।

কোনো পুঁজির মালিক আরও বেশি সম্পদ জমা করতে চায়, ভোগ করতে চায় বলে সে শ্রমিক নিয়োগ করে, কারখানা স্থাপন করে। শ্রমিকদেরকে দিয়ে প্রোডাক্ট উৎপাদন করে। সেই প্রোডাক্ট বাজারে বিক্রি করে।

সাবানের মধ্যে কি আছে?  ১. প্রাকৃতিক সম্পদ ও ২. শ্রমিকের শ্রম। প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক সকলে। যিনি প্রাকৃতিক সম্পদে প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রম দিয়ে সেটাকে ব্যাবহারযোগ্য করে তোলেন তিনি শ্রমিক। তাই ব্যাবহারযোগ্য জিনিসটির দাম বা সাবানটির দাম হল শ্রমিকের শ্রমের দাম।  একটি সাবান যদি আপনি বাজার থেকে কেনেন ৯৫ টাকায়, তাহলে সাবানটির দাম ৯৫ টাকা৷ এই ৯৫ টাকা হল যার যার শ্রম সাবানটিতে যুক্ত হয়েছে তাদের শ্রমের দাম। সুতরাং, ৯৫ টাকার সাবান সবটাই উৎপাদনকারীর। বা যার যার শ্রম এই সাবানে যুক্ত হয়েছে, সে এই ৯৫ টাকার মালিক।  এই উৎপাদনে কে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?  সবাই। কেননা, যিনি প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে সাবান তৈরীর প্রয়োজনীয় উপাদান এনে দেন, তিনি যদি উপাদানগুলো না আনেন তাহলে সাবানটি তৈরী করা সম্ভব হবে না।  আর যিনি শ্রম দিয়ে সাবানটিকে ব্যাবহার উপযোগী করে তোলেন, তিনি যদি নিজের কাজটি ঠিকভাবে না করেন তাহলে সাবানটি ব্যাবহারের যোগ্য হবে না। এবংকি যিনি সাবান তৈরীর কাঁচামাল সংগ্রহ করেন এবং যিনি সাবানটি বানান, এই দুইজনের মাঝখানে দুইজনকে  যোগাযোগ রক্ষার সুযোগ করে দেন, তিনিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে একজন ড্রাইভার অথবা কারখানার মালিক নামে যাকে আমরা চিনি, তিনি।  সুতরাং, সাবানটি  উৎপাদনে কারো গুরুত্ব যেমন কম নয়, তেমন সবার শ্রম ও গুরুত্বেই সাবানটি তৈরী করা হ’য়েছে। তাই, এই সাবানের মালিক হবে উৎপাদনকারী সবাই। যেহেতু সমান গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছে, সেহেতু সবারই এই সাবানের প্রতি সমান অধিকার রয়েছে। হয়তো, এখানে কারো শ্রম বেশি ব্যয় হয়েছে অথবা কারো শ্রম কম ব্যয় হয়েছে, কিন্তু প্রত্যেকেরই সমান গুরুত্ব প্রয়োজন ছিল। সুতরাং ৯৫ টাকা চার ভাগ করাই ন্যায্য৷ যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী শ্রম দিয়েছে, কিন্তু ব্যাবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাবহার করতে হবে। এটাই সমাজের উদ্দেশ্যে। একটি সমাজ সংগঠন কি করে?  সমাজের কাজ হল সমাজে দূর্বল এবং সবলের মধ্যে ব্যালেন্স রক্ষা করা।

কিন্তু, পুঁজির মালিক উৎপাদনের বেশিরভাগ অংশই নিজে রেখে দেন এবং বাকি শ্রমিকদেরকে নামমাত্র মূল্য দেন। মানে অসামাজিক লোক। তা না হলে কি খাদ্য উৎপাদনকারী শ্রমিকেরা খাদ্যের অভাবে মারা যায় আর মালিক খেয়ে পড়ে রাষ্ট্র-সেনাবাহিনী পোষেন? অর্থাৎ, যাদেরকে রক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হল তারাই হয়ে উঠলো ভক্ষক! মালিকেরা শ্রমিকের শ্রমের মূল্য শোষণ করেন। বা শ্রম শোষণ করেন।   সুতরাং, শোষণ মানে চুরি আর মালিক মানে চোর।  এই চোর যুদ্ধ কেন চায়?

চুরি করার জন্য বা নিজে কম কাজ করে বেশি ভোগ করার জন্য উৎপাদন চালিয়ে যেতে হয়। উৎপাদিত  সাবানটিকে বাজারে বিক্রি করতে হয়।  আলাদা আলাদা কারখানার আলাদা আলাদা মালিক আছে।  এরা বাজারে প্রোডাক্ট বিক্রির প্রতিযোগিতায় নামে। নিজেদের প্রোডাক্ট বিক্রি করার জন্য সব রকমের চেষ্টা করেন। বিক্রি না হলে আর উৎপাদন করে কী করবে মালিকেরা? উৎপাদন না করলে শ্রমিক দিয়ে কী করবে? শ্রমিক না থাকলে সে কিভাবে শ্রম চুরি করবে? তাই বাধ্য হয়ে সে বাজারে বাজারে ঘোরে পণ্য বিক্রি করার জন্য। প্রয়োজন হলে দুনিয়ার সব দেশ ভ্রমণ করে। কিন্তু, বর্তমানে দোকানগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখি, একঝাঁক প্রোডাক্ট দোকানে জমে গেছে। বিক্রি হচ্ছেনা। কারণ, অতিরিক্ত উৎপাদন হয়ে গেছে। কিন্তু দুনিয়ায় এতবেশী পণ্য উৎপাদন হয়ে গেছে যে, এখন আর উৎপাদন করার দরকার হচ্ছেনা। তাই, পুঁজি হারানোর ভয়ে কারখানার মালিক-, শ্রমিকের-শ্রমের-দাম চোর ভীত হয়ে পড়েছে। তাই নিজের পণ্য বিক্রি করার জন্য আরেক পুঁজিপতির পণ্য ধ্বংস করে দিতে চায় সে। এজন্যই ধ্বংস করার জন্য যুদ্ধ সৃষ্টি করে। যুদ্ধ করার জন্য যুদ্ধের পরিকল্পনাকারী পোষে। যুদ্ধের পরিকল্পনাকারীই হল রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্র সেনাবাহিনী পোষে। কি দিয়ে?  শ্রমিকের শ্রম দিয়ে।  শ্রম চুরি করার মাধ্যমে।  আগেই বলেছি, প্রোডাক্ট তৈরী করতে শ্রম লাগে এবং প্রোডাক্টের পুরো দামটিই আসলে শ্রমের দাম। যখন কেউ কোনো প্রোডাক্ট ধ্বংস করে তখন শ্রমকেই ধ্বংস করে। এতবেশী পণ্যই প্রমাণ করে, দুনিয়ায় কতবেশি শ্রম জমে গেছে। আর এই চুরি করা শ্রম নিয়ে দুই দেশের (দুই চোরের) চলে যুদ্ধ।  এখানে শ্রমিকদের কোনো স্বার্থ নেই। স্ব-দেশী পুঁজির মালিক মানে স্ব-দেশী চোর।  শ্রমিকের শ্রম চোর সবসময়ই শ্রমিকের শত্রু, বন্ধু নয়। শ্রমিকের স্বার্থে কোনো চোর নাই। শ্রমিকের কোনো দেশ নাই।  রাষ্ট্র নানান টাইপের নীতিবিদ লালন-পালন করে। এরা দেশাত্মবোধক গান গায় এবং দেশপ্রেমের আবেগী কথাবার্তা বলে – যাতে শ্রমিকদেরকে বিভ্রান্ত করা যায়। যাতে দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে যাতে শ্রমিকদেরকে শোষণ করা যায়।

শ্রমিকরা এখন কী করবে? কিভাবে মুক্তি পাবে?

উৎপাদনের প্রক্রিয়া থেকে শ্রম চোরদেরকে বর্জন করতে হবে। অর্থাৎ,  নিজেরা উৎপাদন করা এবং নিজেরা বন্টন করে নেওয়া। প্রথমে এটা দুর্বোধ্য সমস্যা মনে হতে পারে। কিন্তু কোটি কোটি মানুষ যখন পুরো কাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় তখন এটি খুবই সহজ হয়ে যায়। সচেতন থাকতে হবে, যাতে  রাষ্ট্র, পুঁজির মালিকদের বা আপনার শ্রম চোরেদের আবেগী কথাবার্তায় শোষক আর শোষিতের পার্থক্য ভুলে না যান।

মোটকথা, নতুন সমাজে একটি সমিতি গঠন হবে। যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, সে ততটুকু শ্রম দেবে, যার যতটুকু প্রয়োজন সে ততটুকু ব্যাবহার করবে। শিশু ও বৃদ্ধরা উৎপাদনে সক্ষম নয়, তাই তারা সমিতি হতে ভরণপোষণের নিশ্চয়তা পাবে। নতুন ধরনের সমাজ আমরা দেখব। সেখানে প্রত্যেকে জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণা, আলাপ আলোচনা করবে। ভবিষ্যতের সমাজে সমাজই হবে শিক্ষক। যে সমাজে লোভ, হিংসা, দারিদ্র নেই, আছে শুধু ভালোবাসার জন্য ভালোবাসা। আছে প্রেম, জ্ঞান ও আনন্দ।

আর কি ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে? আলোচনা চলুক। সমিতি গড়ে তুলতে কি করা উচিত?  শ্রমিকেরা একমত হওয়া উচিত। শ্রমিকেরা কিভাবে একমত হবে? একটি পার্টি শ্রমিকদেরকে বিষয়টি বোঝাবে৷ পার্টির কারা বোঝাবে? যারা বুঝতে পেরেছে তারা।  সংগঠিত হোন!  প্রশ্নগুলো সামনে আনুন। আর কি প্রশ্ন বাকি আছে?  যারা এখন এই সমাধানকে ঠিক মনে করে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে তারা বিভিন্ন নামে শ্রমিক সংগঠনগুলো নিয়ে কাজ করে। ওয়ার্কার্স পার্টি, ট্রেড ইউনিয়ন, সোস্যালিস্ট পার্টি ইত্যাদি ইত্যাদি নামে তাদেরকে লোকেরা চেনে। এবিষয়ে ডজন-ডজন বই আছে। এখানে আপনার সাথে পরিচয়ের শুরুতেই সংক্ষিপ্ত এরিয়ায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষ করছি। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ভালো নয়। এখনই যুদ্ধ শেষ করতে হবে। তা না হলে আমাদের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যাবে। এবিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভাবুন। এটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন।

লেখকঃ রাজনৈতিক অর্থনীতির সমালোচক