চলমান সংবাদ

বে-টার্মিনাল নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালে শুরুর ঘোষণা

চট্টগ্রাম বন্দরের বহুল প্রত্যাশিত বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ আগামী ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান। চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নে আয়োজিত এক সভায় তিনি বলেন, বে-টার্মিনাল নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ, নকশাসহ সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালে। ২০২৬ সালে টার্মিনালটির অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য নিয়োজিত কনসালটেন্ট মেসার্স কুনহুয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসালটিং কোম্পানির তৈরি করা মাস্টারপ্ল্যানের উপর স্টেক হোল্ডার, বন্দর ব্যবহারকারী ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সভায় ডিয়েনইয়াং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বে-টার্মিনাল প্রকল্পে একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাকি দুটি টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হবে। এই প্রকল্পের জন্য গত বছরের অক্টোবর মাসে ৬৮ একর জমি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনকে ৪শ’ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে মাল্টিপারপাস টার্মিনালের বিস্তারিত প্রকৌশল নকশা, ড্রইং ও প্রাক্কলনে পরামর্শক সেবার জন্য কুনহোয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনসাল্টিং কোম্পনি লিমিটেড-ডি ওয়াই ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি যৌথভাবে কাজ করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সাথে বে-টার্মিনাল নির্মাণ কাজের তদারকিও করবে। তিনি বলেন, মাল্টিপারপাস টার্মিনালে ছয়টি জেটি থাকবে। তবে বে-টার্মিনালে মোট ১৩টি জেটি থাকবে। এ টার্মিনালে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি সুবিধা থাকবে। প্রকল্পের পূর্ব দিকে রয়েছে পোর্ট অ্যাকসেস রোড ও রেলপথ। এম শাহজাহান বলেন, বে-টার্মিনাল চ্যানেলে কোন বাঁক নেই এবং যথোপযুক্ত নাব্যতা রয়েছে। তাই সেখানে ১০-১২ মিটার ড্রাফটের সর্বোচ্চ ৬ হাজার টিইইউজ বহনক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ বার্থিং করানো সম্ভব হবে। বে-টার্মিনালে একটি ১২শ’ ২৫ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার টার্মিনাল, একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার টার্মিনাল ও একটি ১৫শ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মিত হবে। এই তিন টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার। বন্দরের এ শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে জোয়ারের সময় গড়ে চার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের এবং সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ বন্দরের জেটিগুলোতে ভিড়তে পারে। তবে বে-টার্মিনালে রাত-দিন ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। গত বছর দেশের প্রধান এই সমুদ্র্রবন্দর ৩০ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিল। বে-টার্মিনালের সক্ষমতা হবে প্রায় ৫০ লাখ টিইইউএস।
প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। তিনটি টার্মিনালের মধ্যে একটি বন্দরের নিজস্ব খরচে নির্মাণ ও পরিচালনা করা হবে। প্রকল্পের অবশিষ্ট দুটি টার্মিনাল দক্ষ ও অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটরদের অর্থায়নে নির্মাণ ও পরিচালনা করা হবে। এসময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, সিডিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিসি, বিজিএমইএ,বিকেএমইএ, শিপিং এজেন্ট ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জানানো হয়, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সাথে বাংলাদেশের জন্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ বিস্তৃত হচ্ছে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর এ কারণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। দেশের জিডিপি প্রায় ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেলেও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম, যা কার্গো, কন্টেইনার এবং জাহাজ পরিচালনা করে ১৩ শতাংশের বেশি হারে বাড়ছে। বর্তমান প্রবৃদ্ধির হারের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরকে ২০২৬ সালের মধ্যে প্রায় ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন এবং ২০৪৩ সালের মধ্যে প্রায় ৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন কনটেইনার পরিচালনা করতে হবে। ফলে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন বজায় রাখতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা প্রতিনিয়ত বাড়ানো হচ্ছে। বে টার্মিনাল প্রকল্পটি ভবিষ্যতের চাহিদা, সাইটের সুবিধা, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সম্প্রসারণ ক্ষমতার উপর জোর দেয়া হচ্ছে। # ২১.০৯.২০২২ চট্টগ্রাম #