চলমান সংবাদ

দ্রুত ধনী হওয়ার নেশায় ব্যবসায়ী বিমান ধরকে খুন করা হয়েছে

পটিয়ায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধর খুনের প্রাথমিক রহস্য উদঘাটন হয়েছে বলেজানিয়েছে পুলিশ। দ্রুত ধনী হতে এবং স্বর্ণের বার ও টাকার লোভে গলাকেটে হত্যা করা হয় এ ব্যবসায়ীকে। পুলিশের হাতে আটক বিমান ধরের খুনী রাজমিস্ত্রী আইয়ুব আলীর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এ খুনের রহস্য ।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর হাকিম নাজমুন নাহারের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় পুলিশের হাতে আটক রাজমিস্ত্রী আয়ুব আলী। এর আগে গত শুক্রবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আইয়ুব আলীকে (১৯) তার মামার বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের নুরুল আজগরের পুত্র।
জবানবন্দিতে আইয়ুব আলী জানায়, তার প্রতিবেশী রিকশাচালক জিল্লুর রহমান গত ৩ সেপ্টেম্বর তাকে অতি অল্প সময়ে কোটিপতি হয়ে স্বাছন্দ্যে জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখায়। এজন্য তারা উপজেলার জঙ্গলখাইন এলাকার বিটা ট্রেনিং সেন্টার এলাকায় গিয়ে পরিকল্পনা করে ধনী হতে একটি অপরাধ সংঘটিত করতে হবে। এতে তারা টার্গেট করে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরকে। তারা জানত, চট্টগ্রাম নগরে বিমান ধরের ৭টি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। প্রতিদিন রাতে বিমান ধর দোকান বন্ধ করে নগদ টাকা ও স্বর্ণের বার নিয়ে বাড়িতে ফিরে। এমন ধারণায় তাকে আটকানোর পরিকল্পনা নেয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর ২ দিন বিমান ধরের অপেক্ষায় রাতে লড়িহরা এলাকায় নির্জন এলাকায় তারা ২ জন পাহারা দিয়ে আসছিল। ওই সময় রাস্তায় লোকজন থাকায় তাকে আটকানো সম্ভব হয়নি। গত ৬ সেপ্টেম্বর একইভাবে রাত ১১টায় বিমান ধর মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা রিকশা চালক জিল্লুর রিকশা দিয়ে বিমান ধরের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এ সময় হত্যাকারীরা তার নগদ টাকা ও স্বর্ণের বার খোঁজাখুজি করতে চাইলে বিমান ধর বাধা দেয়। এক পর্যায়ে জিল্লুর হাতে থাকা হাসুয়া (দা) দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করে। তাতে অপারগ হলে আইয়ুব আলীর হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে তার গলায় আঘাত করার জন্য বলে। আইয়ুব আলী বিমান ধরের গলায় ধারালো দা বসিয়ে দিলে ঘটনাস্থলে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এতে জোরালোভাবে বিমান ধরের গলায় ধারালো দা বসিয়ে তার গলা কেটে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে বিমান ধরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন আসতে দেখে আইয়ুব আলী বিমান ধরকে জবাই করে পাশের জমির উপর দিয়ে ও রিকশা চালক জিল্লুর রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে গোপন সূত্রের ভিত্তিতে পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সঞ্জয় ঘোষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর রিকশা চালক জিল্লুর রহমান ও গৈড়লা এলাকার বাপ্পু ধরকে গ্রেপ্তার করে। তাদের গ্রেপ্তারের পর ঘটনার জট খুলতে শুরু করে। পুলিশ শুক্রবার আইয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকারীরা পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিলে তাদের জবানবন্দি আদালতে রেকর্ড করা হয়।
পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান জানান, এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদ্ধারে পুলিশবাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে দিনরাত কাজ করেছে। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিমান ধরের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করব। তবে তিনি এ আসামিদের গ্রেপ্তারের পেছনের রহস্য তুলে না ধরলেও তাদের নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান।

# ১৮/০৯/২০২২, চট্টগ্রাম #