চলমান সংবাদ

দেশের প্রয়াত চার গুণীজনকে স্মরণ

-বাঙালি জাতি মেধাশুন্য হয়ে পড়ছে- ড. অনুপম সেন

করোনাকালে প্রয়াত দেশের চার গুণীজনকে স্মরণ করেছেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। গুণীজনদের লেখা থেকে পাঠ ও স্মৃতিচারণ, সমবেত সঙ্গীত, কবিতার মধ্য দিয়ে তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হয়। প্রয়াত গুণীজনদের মধ্যে আছেন- জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, গবেষক ও সাহিত্যিক ড. ভূঁইয়া ইকবাল, চট্টল গবেষক ও সংস্কৃতি সংগঠক ড. শামসুল হোসাইন এবং আধুনিক চিত্রকলার মান্যশিল্পী মুর্তজা বশীর। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘নাগরিক স্মরণসভা কমিটি, চট্টগ্রাম’ আয়োজিত এ স্মরণানুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন। তিনি চার গুণীজনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘আজ আমরা দেশবরেণ্য যেসব গুণীজনদের স্মরণ করছি, তারা একটি জাতির ক্রমবিকাশ ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে অবদান রেখে গেছেন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারিয়েছি যারা সমাজ, রাষ্ট্রকে এগিয়ে রাখতে তাদের জীবনের সর্বোচ্চ দিয়ে গিয়েছেন সারাজীবন। মহামারি করোনা আমাদের কাছ থেকে তাদের কেড়ে নিয়েছে। জাতি আজ মনীষীশূন্য হয়ে পড়ছে। জাতির দায়িত্ব তাদের যথাযথভাবে স্মরণ করা। জাতির মেধাবী মানুষগুলোকে যে আমরা হারিয়েছি, এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। সভায় শামসুল হোসাইনের স্মৃতিচারণ করে একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, বিএ পাশ করে শামসুল হোসাইন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে পড়াশোনার সুবাদে তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ইতিহাস বিভাগে শিক্ষকতাও করেন। একটি জাদুঘর গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর থেকে তিনি ধাপে ধাপে একজন প্রত্নসম্পদ সংগ্রাহক, সংরক্ষক এসবের প্রদর্শক ও প্রচারক হয়ে উঠেছিলেন। উনার অনেক লেখা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি নিজেকে ধীরে ধীরে তৈরি করেছেন। পাশাপাশি আমরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম। জিয়া-এরশাদের আমলে হাতে হাত মিলিয়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। আমরা আমাদের কাছের মানুষদের হারাচ্ছি, এটাই অনেক কষ্টের।’ গবেষক ও সাহিত্যসাধক ড. ভূইয়া ইকবালের স্মৃতিচারণ করে ভাষাবিজ্ঞানী ড. মাহবুবুল হক বলেন, ‘ড .ভূইয়া ইকবাল ছিলেন একজন মনেপ্রাণে গবেষক। তিনি কেবল একজন শিক্ষাবিদ বা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক ছিলেন না। তার সংকলিত ও সম্পাদিত গ্রন্থে সমকালীন বাঙ্গালি মুসলমান সম্প্রদায়, সমকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও শিক্ষা ব্যবস্থা, সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা, বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি ও উপভাষায় ব্যবহার ইত্যাদি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ও মনোভাবের স্পষ্ট প্রতিফলন হয়েছে। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান নিয়ে বলতে গিয়ে অধ্যাপক গোলাম মুস্তফা বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রয়াত হওয়ার পর দুই বছরের অধিক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। তার মৃত্যু আমাদের জ্ঞানচর্চা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যে শূন্যতা সৃষ্টি করে গেছে তা পদে পদে অনুভব করবেন সকলেই। তার জীবনের আদর্শ,সংগ্রাম ও স্বপ্ন ছিল একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের। উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্ত ও আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, ড. ভূইয়া ইকবালের বড় ছেলে অনিন্দ্য ইকবাল, শিল্পী মুর্তজা বশিরের বড় মেয়ে মনিরা বশির এবং নাগরিক শোকসভার সমন্বয়কারী ও জেলা উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চন্দন দাশ। স্মরণসভায় সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ ও রক্তকরবীর শিল্পীরা। গুণীজনদের স্মৃতিচারণ করে নাগরিক শোকসভা কমিটির প্রকাশিত পুস্তিকা থেকে পাঠ করে শোনান নাট্যজন শুভ্রা বিশ্বাস, আবৃত্তিশিল্পী প্রণব চৌধুরী ও মিলি চৌধুরী এবং সেলিম রেজা সাগর। # ১৪.০৯.২০২২ চট্টগ্রাম #