শিল্প সাহিত্য

আমাদের পদযাত্রা

-শাশ্বত টিটো

আমাদের এ পদযাত্রা আদি হতে অন্ত পর্যন্ত
ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
মহাসাগরের অতল হতে মহাশূন্যের অনন্তলোক পর্যন্ত প্রসারিত
এ পদযাত্রায় এখনো হাঁটছে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার।
কবিগুরুও হেঁটেছিলেন একদিন
নজরুল-জীবনান্দকে সাথে নিয়ে;
কিশোর সুকান্ত স্লোগান তুলেছিল বারবার
বিবেকানন্দের কাঁধে কাঁধ ছুঁয়ে।
আমাদের এ পদযাত্রা এগিয়ে যাচ্ছে
হিমালয় থেকে সুন্দরবন হয়ে
বঙ্গীয় বদ্বীপের অতলান্ত ছুঁয়ে আরাকানের দিকে।
কে প্রশ্ন করে আমরা কোথায় যাবো?
আমরা তো জানি আমাদের যাত্রা অনন্তকালের।
সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মাঝের সময়টুকু যতটা হেঁটেছি
রাতের আঁধারেও হেঁটেছি তার সমান দুরত্ব।

আমাদের এপদযাত্রার অগ্রভাগে ছিলেন
মাস্টারদা, প্রীতিলতা, তিতুমীর, ফকির মজনু শাহ
তার কিছুটা পরে পায়ে পা মিলিয়ে
হেঁটেছিলেন শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী, মুজিব।
নেতাজি বারংবার হাঁক দিয়ে ডেকেছিলেন
চিত্তরঞ্জন আর ক্ষুদিরাম-আবিদ হোসেনকে।
পৃথিবীর সমস্ত গোলাপ আমাদের ঝড়ে
পড়া রক্ত বুকে ধারণ করে লাল বর্ণ হয়েছিল।
আমাদের নিঃশেষিত আয়ু নিজের
শরীরের চারপাশ বেঁধে নিয়ে হাস্নুহেনা ফুঁটে যাচ্ছে
সেই অনাদি সময় থেকে।
আমরা কি করে থামি?
আমাদের গন্তব্য তো এক মহা সোপানের দিকে।
এর আদি বা অন্ত নেই।

হাজার বছর ধরে পৃথিবীর উদয়াচল বা অস্তাচলের উত্থান-পতনে
আমাদের পদশব্দ একটুও থামেনি।
মহাপরিক্রমার ধাপে ধাপে
কত উল্কা পিন্ড পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছে,
কত ঝর্ণার জল শুকিয়ে হয়েছে,
কতশত তারা হারিয়ে গেছে আকাশগঙ্গা থেকে চিরতরে,
কিন্তু আমাদের পদযাত্রা থামেনি।
আমাদের চোখে দীপ্তমান ঊষার নরোম আলো
আমাদের ধমনীতে আগ্নেয়গিরির প্রবাহ
আমাদের মুঠোয় ধরা আছে চাঁদের নরম আলো।
আমরা থামবনা, আমাদের পদযাত্রা এগিয়ে যাবে
পৃথিবীর শেষ বালুকাকণার অস্তিত্বের সাক্ষী হয়ে।

 

শাশ্বত টিটোঃ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এবং সিনেমাটোগ্রাফিতে পড়াশোনা শেষ করেছেন।