চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বি দামে স্বল্প আয়ের মানুষ অনিশ্চয়তায়

 জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে যেন ‘আগুন’ লেগেছে। একদিকে বাড়তি ভাড়া, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি- সবমিলিয়ে ‘যন্ত্রণার’ অনলে পুড়ছে জনজীবন। চাল-ডাল, সবজি, আদা, হলুদ, পেঁয়াজসহ সকল পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে গেছে। পণ্যের আকাশচুম্বি দামে স্বল্প আয়ের মানুষ অনিশ্চয়তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে স্বস্তি মিলছে না চালের বাজারে। তার উপর ক’দিন আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর চালের দাম এখন আকাশচুম্বী। সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চিনিগুঁড়া চালে। ৯শ’ টাকা বেড়ে দাম গড়িয়েছে ৬ হাজার টাকায়।

চট্টগ্রামের বৃহত্তর পাইকারি চালের বাজার পাহাড়তলীতে দেখা গেছে, মিনিকেট (চিকন চাল) ৫০ কেজির বস্তায় ৪শ’ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৫শ টাকা, নাজিরশাইল ৪ হাজার টাকায়, পাইজাম ২৭শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বস্তাপ্রতি ৩শ’ টাকা বেড়ে জিরাশাইল সাড়ে তিন হাজার টাকা, চিকন মিনিকেট ২ হাজার ৭শ’ টাকা, চিকন আতপ ৩ হাজার ৮শ’ টাকা ও বিআর-২৮ জাতের চাল ২ হাজার ৭শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চিনিগুঁড়া চালে। বস্তায় ৯শ’ টাকা বেড়ে চালটির দাম এখন ঠেকেছে ৫ হাজার ৯শ’ টাকায়। তাছাড়া মোটা আতপ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়। এদিকে চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে ৪ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি চিনি ৮০, মসুর ডাল ১০০, মটর ডাল ৬০ ও পাঁচ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি আলু ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে মসলার দামও। কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০, আদা ৬৫ ও রসুন ১শ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে শুকনো মরিচ ৩৪৫ টাকা, ৮ টাকা বেড়ে হলুদের কেজি ১১৫, কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে এলাচ ৩শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া জিরার কেজিতে ৬ টাকা বেড়ে ৪৬৫, কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে দারুচিনি ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ৬০ থেকে ৮০ টাকার নিচে মিলছে না সবজি। মুরগির কেজি ১৬০ থেকে ঠেকেছে ১৮০ টাকায়। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন বলেন, চালের বাজারের পরিস্থিতি খারাপের দিকেই আছে। দিন দিন দাম বাড়ছে এবং তা ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। চালের দাম বাড়ার কারণে আমাদের বেচাবিক্রিও কমে গেছে। সরকার ভারত থেকে যে চাল আমদানি করেছে সেখান থেকে আমরা যে পরিমাণে স্বর্ণা চাল পেয়েছি তা আমাদের স্থানীয় চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। তার উপর বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় আমদানিকারকরাও এলসি কম খুলছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে আমাদেরকে এখন প্রতি ট্রাকে পাঁচ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। কাজেই চালের বাজারে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে তা এত সহজে কাটবে না।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে আমরাও খুব বিপাকে পড়েছি। পণ্য আমদানি করতে গিয়ে আমাদের খরচ বেড়ে গেছে। আগে একটা ট্রাক ২১ হাজার টাকায় ভাড়া করলে এখন ২৭ হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে। ফলে পণ্যের দর স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে। কিন্তু এর প্রভাবে আমাদের দোকানগুলোতে বেচাবিক্রি একেবারে কমে গেছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর থেকে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় এখন অনেক বেড়ে গেছে। মাছ-মাংস, তেল, সবজি কোন কিছুতেই শান্তি নেই। সাধারণ মানুষ দুবেলা দুমুঠো খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে চায়। সেখানেও হোঁচট খাচ্ছেন তারা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার চেষ্টা করছেন। কাজেই জেলা প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকারকে শুধু পেট্রোল পাম্পে অভিযান পরিচালনা করলেই হবে না। নিয়মিত বাজার তদারকিও করতে হবে।

# ১২.০৮.২০২২ চট্টগ্রাম #