চলমান সংবাদ

সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য খ্যাত সেই জঙ্গল সলিমপুরে অভিযানে গিয়ে দেড় ঘন্টা অবরুদ্ধ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার

সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত সেই জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে উচ্ছেদ কার্যক্রমে গিয়ে হঠাৎ ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন স্বয়ং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা। পরে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পান জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ অন্যরা। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকেলে তাদের ঘেরাও করার ঘটনা ঘটে। এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে আলীনগরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে জেলা প্রশাসন। উচ্ছেদ চলাকালে সেখানকার বাসিন্দারা হঠাৎ অভিযান দলকে ঘেরাও করে ফেলে। এসময় সেখানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল। অভিযানের নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এসময় পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল এ) মাসুদ কামাল, সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি-সীতাকুণ্ড) মো. আশরাফুল আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু এমং মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুন্ড সার্কেল) আশরাফুল করিম, সীতাকুন্ড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শেষে ফেরার পথে মানবপ্রাচীর তৈরি করে তাদের আটকে রাখে অবৈধ দখলদাররা। ভূমিদস্যু ও দখলদারদের সাম্রাজ্যখ্যাত আলীনগরে দুটি পয়েন্টে ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয় উচ্ছেদ কর্মীদের। পরে খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে র‌্যাবের টিম পৌঁছালে ওই এলাকার বাসিন্দার বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়। অবৈধ দখলদাররাও বাধ্য হয়ে পথ ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। এর আগে অভিযান চলাকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরে ৩ হাজার ১০০ একর সরকারি খাস জমি রয়েছে। এ খাসজমির পাহাড় এবং টিলা কেটে ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে একদল ভূমিদস্যু ও একদল সন্ত্রাসী অবৈধ বসতি স্থাপন করছে। এখানে আর কোনো অবৈধ স্থাপনা করতে দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, এ ভূমিদস্যুরা নিজস্ব রীতিতে জমিগুলোর বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করে বিক্রি করছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসীরা এখানে এসে বসতি স্থাপন করছে। ভূমিদস্যু ইয়াছিন ও মশিউররা তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে। মমিনুর রহমান বলেন, সরকার একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। যেটুকু পাহাড় কাটা হয়েছে সেটুকুতেই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। বাকি পাহাড়ের পরিবেশ প্রতিবেশ অক্ষুন্ন রাখা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে বনজ ফলজ দুই লাখ গাছ লাগানো হবে এখানে। এটি উদ্বোধন করবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, এখানে আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল, তথ্য কেন্দ্র, কারাগার ও সাফারি পার্কসহ সরকারের নানান স্থাপনা বাস্তবায়ন করা হবে। তাছাড়া এখানে যারা ভূমি দখল করে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা পাহাড় কেটে অবৈধভাবে বসবাস করছে তাদের আগামী এক মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে। প্রকৃতপক্ষ যারা ভূমিহীন ও গরীব তাদেরকে আমরা খুব দ্রুত সরিয়ে নিয়ে পুর্নবাসন করবো। পরিবেশ অধিদপ্তর এখানে চারটি মামলা করেছেন। এখানে মসজিদ মাদ্রাসা মন্দির প্যাগোড়া নির্মাণ করা হয়েছে। সবগুলো সরকারি জমি। দখলের উদ্দেশ্যে এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো আমাদের আওতায় নিয়ে আসা হবে। জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, পাহাড়খেকো ইয়াসিন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বেশ অনেকদিন যাবৎ সরকারি খাস জমি পাহাড় কেটে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে। যারা এখানে এসব স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসা করছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে কুখ্যাত পাহাড়খেকো সন্ত্রাসী ইয়াসিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে জেলহাজতে আছে। তার সাঙ্গপাঙ্গ যারা আছে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। পাহাড় কেটে যে অপরাধ তারা করেছে এবং অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছে, এজন্য তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ও একটি র‌্যাবের ক্যাম্পের জন্য জায়গা নির্ধারণ করেছি। জেলা প্রশাসন চূড়ান্তভাবে জায়গা দিলে আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে পুলিশ ক্যাম্প বিশালাকারে স্থাপন করবো। # ০২.০৮.২০২২ চট্টগ্রাম #