চলমান সংবাদ

বন্দরে মদকাণ্ডে ৫ মামলা—শাস্তি নিশ্চিতে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব

মিথ্যা ঘোষণায় আইপি জালিয়াতির মাধ্যমে মদের চালান আমদানি ও খালাসে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতে শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাবের পাশাপাশি তাদের খুঁজে বের করতে পাঁচটি মামলা দায়ের করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সোমবার (১ আগস্ট) ও রবিবার (৩১ জুলাই) নগরীর বন্দর থানায় মামলাগুলো দায়ের করেন কাস্টম হাউসের পাঁচ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। মামলায় মদ আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের আসামি করা হয়েছে। এর আগে গত মাসের ২২ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই তিনদিনে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) ও পোর্ট কন্ট্রোল ইউনিটের (পিসিইউ) মাধ্যমে বিল অব ল্যান্ডিংয়ের (বিএল) মাধ্যমে পাঁচ কনটেইনার মদের চালান জব্দ করে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের এআইআর (অডিট, ইনভেস্টিগেশন এন্ড রিসার্চ) শাখার ডেপুটি কমিশনার মো. সাইফুল হক। তিনি বলেন, জব্দকৃত পাঁচ চালানের মধ্যে তিনটিতে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান পণ্য খালাসের জন্য কাস্টমসের এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন। ওই তিন চালানের মামলায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিককে আসামি করা হয়েছে। অন্য যে দুটি চালানে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি তাতে শুধুমাত্র আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিককে আসামি করা হয়েছে। পাঁচটি মামলা কাস্টম হাউজের পৃথক পাঁচ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) মামলার বাদি হন। এ সময় মামলায় ১৯৬৯ সালের কাস্টমস অ্যাক্ট- ১৯৭৪ এর বিশেষ ক্ষমতা আইন, বাংলাদেশ পেনাল কোড ও ২০১৮ সালের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ করা হয়। কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ জুলাই (শুক্রবার) রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে জব্দ করা ঈশ্বরদী ইপিজেডের বিএইচকে টেক্সটাইল লিমিটেডের জন্য আনা কনটেইনারটিতে ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার পণ্য ছিল বলে জানানো হয়। পাশাপাশি কুমিল্লা ইপিজেডের হেশি টাইগার কোম্পানি লিমিটেডের নামে আনা কনটেইনারটিতে ১৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকার পণ্য ছিল বলে জানানো হয়। কিন্তু জব্দ করার পর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে কনটেইনার দুটিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১ হাজার ৩৩০ কার্টনে ৩১ হাজার ৬২৫ দশমিক ৫ লিটার মদ পাওয়া যায়। কাস্টমস কর্মকর্তারা কনটেইনার দুটি থেকে জব্দ করা মদের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য পান ৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। চালান দুটিতে ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে জানায়েছে কাস্টমস। প্রথমে জব্দ করা দুই কন্টেইনারে নিশ্চিতভাবে কমপক্ষে ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকা পাচার হয়েছে বলে ধারণা কাস্টমসের। ২৪ জুলাই (রবিবার) সকালে নীলফামারী উত্তরা ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের নামে টেক্সটাইল সুতার নামে আরও এক কনটেইনার মদ জব্দ করে কাস্টমস। এ চালানে ১৬ লাখ ৬ হাজার টাকার পণ্য আছে বলে দাবি করা হয়। পরে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে চালানটিতে ১ হাজার ৪৩০টি কার্টনে ১৫ হাজার ২০৪ লিটার মদ পাওয়া যায়। নীলফামারী থেকে জব্দ করা মদের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ছিল ২ কোটি ৩ লাখ টাকা। চালানটিতে ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। চালানটিতে কমপক্ষে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা পাচার হয়েছে বলে ধারণা করছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, গত ২৫ জুলাই (সোমবার) বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ড থেকে জব্দ করা হয় আরও দুই কনটেইনার মদ। নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের নামে প্যাকেজিংয়ের উপকরণ ঘোষণায় একটি ও বাগেরহাটের মোংলা ইপিজেডের ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের নামে টেক্সটাইল সুতার আরও দুটি চালান আসে। আগের তিনটি চালান খালাসের জন্য বিএল অব এন্ট্রি সাবমিট করেছিলেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স জাফর আহমদ। শেষের চালান দুটিতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল না হওয়ায় শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে কনটেইনার দুটিতে ২ হাজার ৮৫৮ কার্টনে ৩১ হাজার ৪৯২ দশমিক ৫ লিটার মদ ও ১০ লাখ ৬০ হাজার শলাকা আমদানি নিষিদ্ধ একাধিক বিদেশি ব্র্যান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়। আটক হওয়া চালান দুটিতে কাস্টমস কর্মকর্তারা শুল্কায়নযোগ্য মূল্য পেয়েছেন ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। চালান দুটিতে প্রায় ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। জব্দকৃত পাঁচটি মদের চালানে ৫৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। পাঁচ মামলার বাদিরা হলেন- চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার সহকারী কর্মকর্তা আবদুর রউফ, ওয়াহিদুজ্জামান, মেহেদী হাসান, নুরুল হুদা ও মাহবুবুল হাসান। এদিকে ২২ জুলাই রাতে দুই কনটেইনার মদ আটকের ঘটনায় তিনজনকে আটক করে র‌্যাব। ২৪ জুলাই রাতে আটক তিনজনসহ ১১ জনকে আসামি করে র‌্যাব-১১ এর উপপরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন বাদি হয়ে সোনারগাঁও থানায় পৃথক আরেকটি মামলা করেন। অন্যদিকে, ৫ কনটেইনার মদের চালান আমদানি ও খালাসে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতে শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন কাস্টম হাউস চট্টগ্রামের কমিশনার মো. ফখরুল আলম। সোমবার (১ আগস্ট) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে এ প্রস্তাব দেন। চিঠিতে তিনি বলেন, আলোচ্য মদের চালানগুলো মিথ্যা ঘোষণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আমদানি ও খালাসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন ও কঠোর শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে অথবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কাস্টমস, সিআইডি, পিবিআই, র‌্যাব, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুদকের প্রতিনিধির সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। আরও উল্লেখ করে বলেন, অতীতেও বিভিন্ন সময়ে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্তৃক দলিলাদি জাল কিংবা কর্মকর্তা/কর্মচারীর সিল-স্বাক্ষর জাল করার মাধ্যমে পণ্যচালান খালাস করার ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে। এ সব ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে জালিয়াতি বন্ধ হবে না। # ০২০৮.২০২২ চট্টগ্রাম #