চলমান সংবাদ

মিরসরাইয়ে ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষ ‘অভাবের সংসারের হাল ধরা হলো না সজীবের’

 চমেক হাসপাতালে হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের আহাজারি চট্টগ্রামের মিরসরাইতে ট্রেনের সঙ্গে মাইক্রোবাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে ১১ জন নিহতের মধ্যে একজন এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী জিয়াউল হক সজীব। বড় ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সজীবের বাবা আবদুল হামিদ। বিলাপ করতে করতে সজীবের বাবা জানান, আমি মুদির দোকানে চাকরি করি। পড়ালেখা করার সুযোগ হয়নি। ছেলে পড়ালেখা করে বড় হয়ে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। এখন আমার সংসারের কি হবে? সজিবকে ছাড়া কিভাবে বাড়িতে থাকব ও আল্লাহ। দুর্ঘটনার পর বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিহতের মরদেহ পৌঁছাতে থাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। সেখানে দেখা যায়, এক-একটি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে ঢুকছে আর তার দিকে ছুটে যাচ্ছেন আগে থেকে অপেক্ষমান স্বজনরা। অ্যাম্বুলেন্স ধরে শুরু আহাজারি। মেডিকেল চত্বর জুড়ে শুধু কান্নার রোল, বুকফাটা আর্তনাদ। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের বিলাপ করতে দেখা যায়। হৃদয়বিদারক এসব দৃশ্য দেখে হাসপাতালে উপস্থিত অনেকের চোখে জল গরিয়ে পড়তে দেখা যায়। নিহত সজীবের বাবা আব্দুল হামিদ বলেন, ২০১৮ সালে ওমরগণি এমইএস কলেজে গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয় সজীব। এরপর করোনার কারণে পরিবারে অর্থাভাব শুরু হয়। এ কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সজীব বড়। সজিব তিন মাস আগে হাটহাজারী আমান বাজারের আরএনজে কোচিং সেন্টার চালু করে। তিনজন মিলে ৫০ হাজার টাকা কিস্তি নিয়ে কোচিং সেন্টারটি চালু করেছিল। দুই মাসের ১০ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করেছে। ভবন মালিকের কাছে ২৫ হাজার টাকা জমা রয়েছে। টাকার অভাবে পড়ালেখা করাতে পারিনি। সে মেধাবী ছিল, এলাকায় টিউশন ও ব্যাচ পড়াত। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে সজিব আর ব্যাচ ও টিউশন পড়াতে যাবে না। ট্রেনের ধাক্কায় নিহতদের আরেকজন ইশাম (১৬) এবার হাটহাজারী এস নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে তার পরীক্ষা শুরুর দিনক্ষণ ঠিক ছিল। পরীক্ষা দিয়েই কানাডায় মায়ের কাছে চলে যাওয়ার কথা ছিল ইশামের। তবে মায়ের কোলে আর ফেরা হলো না ইশামের। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে মেধাবী ইশাম। ইশাম যে স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল, সেই নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোস্তফা আরজু জানান, ইশাম জন্মের পরপরই বাবাকে হারান। ২০০৭ সালে তার বাবা মারা যান। তার মা বর্তমানে কানাডায় থাকেন। ইশামরা দুই ভাই ও দুই বোন। তার এক ভাই অস্ট্রেলিয়া থাকেন। বোনদের মধ্যে একজন মায়ের কাছে কানাডায় থাকেন। ঢাকায় লেখাপড়া করেন আরেকজন। নানাদের পরিবারের অনেকে কানাডাপ্রবাসী। এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে ইশামেরও কানাডা চলে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই সবকিছু শেষ হয়ে গেলো।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর ইশাম ও তার ভাই-বোনরা সবাই চাচা আকবর হোসেন মানিকের কাছে থেকে বড় হয়েছে। ইশাম মেধাবী ছাত্র ছিল। সব পরীক্ষায় সে ভালো ফল করতো। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মেবাধী ছেলেটি সবাইকে কাঁদিয়ে ওপারে পাড়ি জমালো।’ মিরসরাইয়ের দুর্ঘটনায় আহত হাটহাজারীর কে.সি শহীদ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি শিক্ষার্থী তারভীর হাসান হৃদয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চমেক হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় ছেলেকে দেখে হৃদয়ের মা লাকি আক্তার বিলাপ করছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি আক্তার বলেন, সকালে বাড়িতে মেহমান আসার কারণে হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাইনি। গত রাতে ছেলেকে বেড়াতে না যেতে নিষেধ করেছি, ছেলে শুনে নাই। আল্লাহ আমার হৃদয়কে ফিরাইয়া দেন, তারে ছাড়া আমি বাঁচবো না। আমার হৃদয় ছাড়া কেউ নেই। তাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকব? তার বাবাকে কি জবাব দিব। আমার ছেলে কথা বলেছে, এখন কিভাবে আছে আমার হৃদয়, জানি না। নিহতরা হলেন, মাইক্রোবাস চালক গোলাম মোস্তফা নিরু (২৬), মোহাম্মদ হাসান (১৮), জিয়াউল হক সজীব (২২), ওয়াহিদুল আলম জিসান (২৩), মোসহাব আহমেদ হিসাম (১৬), মো. মাহিম (১৭), মোস্তফা মাসুদ রাকিব (১৯), রিদুয়ান চৌধুরী (২২), সাগর (১৭), ইকবাল হোসেন মারুফ (১৭), আয়াতুল ইসলাম (১৭)। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার নিবেদিতা ঘোষ বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত ছয়জনকে চমেক হাসপাতালের ২৮ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। এরা হলেন- মাইক্রোবাসের হেলপার তৌকিদ ইবনে শাওন (২০), তছমির পাবেল (১৬), মো. মাহিম (১৮), মো. সৈকত (১৮), তানভীর হাসান হৃদয় (১৮) ও মো ইমন (১৯)। তাদের সকলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। # ২৯.০৭.২০২২ চট্টগ্রাম #