চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমেস জাল-জালিয়াত সিন্ডিকেট সক্রিয়

মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা হচ্ছে উচ্চ শুল্কের পণ্য সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে মিথ্যা ঘোষণা এবং জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শুল্কফাঁকি দেয়া চক্র ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ভুয়া ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) ব্যবহার করে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্যের আড়ালে উচ্চ শুল্কের পণ্যের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। গত তিনদিনে চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর থেকে এবং বন্দর থেকে খালাস হওয়া পাঁচটি বিদেশি মদের চালান আটক করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) সিএফএস শেডে দুই কন্টেইনার মদের চালান আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানিসহ জাল জালিয়াতি করছে সিন্ডিকেট চক্র। পণ্যমূল্য ফাঁকি, পণ্যের গুণগত মান নিয়ে জালিয়াতি, পরিমাণ ও ওজনে কম দেখানো এবং পণ্যের এইচএস কোড জালিয়াতি। এই চার প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে শুল্ক ফাঁকির মহোৎসব চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। নানা উদ্যোগের পরও দমানো যাচ্ছে না মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির প্রবণতা। নানা ছল-চাতুরি ও নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে জালিয়াত চক্র এক রকম পণ্যের ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করে ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য। সম্পূর্ণ বিনাশুল্কের পণ্য অথবা কম শুল্কের পণ্যের আড়ালেও কৌশলে নিয়ে আসে উচ্চ শুল্কের পণ্য। একইসঙ্গে আসে বৈধ পণ্যের আড়ালে অবৈধ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত পণ্যও। এসব চালানের আড়ালে শত শত কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করে জালিয়াতি চক্র। এদিকে তিন দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা বিদেশি মদের বড় পাঁচটি চালান উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। পাঁচটি চালানই আইপি জালিয়াতির মাধ্যমে খালাস করা হচ্ছিল। এর মধ্যে দুটি চালান বন্দর থেকে খালাস করে নেয়া হয়। আর তিনটি খালাসের আগেই ধরা পড়লো। এ জাল-জালিয়াতির সাথে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউস এবং সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের অসাধু কিছু কর্মচারী জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর তা না হলে এত ঘাট পার হয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে দুটি কনটেইনার বের করে নেয়া কখনোই সম্ভব হতো না। ভুয়া ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দরে এসব মদের চালান আমদানি করা হয়েছিল সুতা ও মেশিনারি পণ্য ঘোষণা দিয়ে। শুধু তাই নয়, বন্দর থেকে এ চালান বের করা পর্যন্ত সব ধাপেই নেওয়া হয়েছিল জালিয়াতির আশ্রয়। বিষয়টি জানাজানির পর টনক নড়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। চট্টগ্রাম কাস্টমসের এআইআর শাখার ডেপুটি কমিশনার সাইফুল হক বলেন, ‘মিথ্যা ঘোষণায় এবং ভুয়া আইপি ব্যবহার করে মদ আমদানি করা হয়। বন্দর থেকেও এ চালান বের করা হয়েছিল নানা জালিয়াতির মাধ্যমে। এগুলো স্ক্যানিংযোগ্য পণ্য। অথচ স্ক্যানিং না করেই ভুয়া স্ক্যানিং পেপার জমা দিয়েছিল। যে স্ক্যানিং পেপারে কাস্টমস কর্মকর্তার ভুয়া স্বাক্ষর ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি কোনও সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের কাজ। এ ঘটনা তদন্তে কাস্টমস কমিশনারের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শেখ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ভুয়া আইপি ব্যবহার করে এসব মদের চালান আমদানি করা হয়। এসব চালানের আইপি আইডি যাচাই করে দেখা যায়, ওই আইপি জাল। ভুয়া আইপি ব্যবহার সত্ত্বেও কীভাবে শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, স্ক্যানিং ও গেট ফাঁকি দিয়ে কীভাবে পণ্য চালান দুটি খালাস হলো এসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হবে।’ শুল্কফাঁকি দিতে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমাদনির পাশাপাশি জালিয়াতির মাধ্যমে বন্দর থেকে পণ্য বের করে নেয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তবে সাম্প্রতিককালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কঠোর নজরদারির কারণে জালিয়াত চক্রটি কিছুটা কোণঠাসা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মিথ্যা ঘোষণার বড় চালান ধরা পড়ে। যন্ত্রাংশ ও সুতার নামে বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মূল্যবান মদের বিশাল চালান আমদানির ঘটনায় জালিয়াত চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা জানান, এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এর সাথে বন্দর ও কাস্টম হাউসের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে খালাসের পর বিদেশি মদের আরও দু’টি চালান আটক হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) সিএফএস শেডে মদের দু’টি পৃথক চালান বোঝাই কনটেনারটি আটক করা হয়। এ নিয়ে তিন দফায় বন্দরে খালাস হওয়া পাঁচটি বিদেশি মদের চালান আটক করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সোমবার আটক করা আরেকটি চালান এসেছে বাগেরহাটের মোংলা ইপিজেডের ভিআইপি ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের নামে। টেক্সটাইল সুতা আমদানির ঘোষণা দিয়ে চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। রোববার আটক করা কনটেইনারটি খালাসের দায়িত্বে ছিল নগরীর ডবলমুরিংয়ের জাফর আহমদ নামে একজনের মালিকানাধীন সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান। একই সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান শুক্রবার (২২ জুলাই) রাতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিদেশি মদের দুইটি চালান খালাস করে নিয়ে যায়। শনিবার (২৩ জুলাই) সকালে নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা মদের চালান দু’টি আটক করেন। কুমিল্লা ইপিজেডের হাসি টাইগার কোম্পানি লিমিটেড মেশিনারি এবং পাবনার ঈশ্বরদীর বিকেএইচ টেক্সটাইল লিমিটেডের নামে সেলাই মেশিনের ববিন ঘোষণা দিয়ে চালান দু’টি আমদানি করা হয়েছিল। শতভাগ পরীক্ষায় পণ্য চালান দুটিতে ১ হাজার ৩৩০ কার্টনে বিভিন্ন ব্রান্ডের ৩১ হাজার ৬২৫ দশমিক ৫ লিটার বিদেশি মদ পাওয়া যায়। পণ্য চালান দুটিতে মিথ্যা ঘোষণায় ২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির অপচেষ্টা হয়েছে। গত দুইদিনে আটক তিনটি চালানে বিদেশি মদের পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে বলে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। # ২৬.০৭.২০২২ চট্টগ্রাম #