চলমান সংবাদ

চবিতে ছাত্রী হেনস্তায় ৪ ছাত্রলীগ কর্মী বহিষ্কার, শিক্ষক এবং এক ছাত্রকে সতর্ক

-ভুক্তভোগীর ভুল তথ্যে অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে দেরিঃ প্রক্টর

– চবি ক্যাম্পাস শতভাগ নিরাপদঃ উপাচার্য

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) গত বছর যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া যৌন নিপীড়ন সেলে থাকা আরও দুই অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এটিএম রফিকুল হক ও রসায়ন বিভাগের এক ছাত্রকে কঠোর সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। তারা হলেন আরবি বিভাগের মো. জুনায়েদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের রুবেল হাসান, দর্শন বিভাগের ইমন আহাম্মেদ এবং একই বিভাগের আর এইচ রাজু। তারা সবাই দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিএফসির কর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। সোমবার বেলা ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নীপিড়ন সেলের তিন অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। গত বছর যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই ছাত্রী হেনস্তার শিকার হন। এতে অভিযুক্ত চার ছাত্রলীগ কর্মীকে একবছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া বন ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষাসফরে ছাত্রীকে অশালীন শব্দচয়নের অভিযোগ উঠে বিভাগের অধ্যাপক এটিএম রফিকুল হক’র উপর। এ ঘটনায় তাকে লিখিত সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকসুলভ আচরণ করা ও শব্দচয়নে সতর্ক হতে বলা হয়েছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হলের এক ছাত্রীকে হয়রানির ঘটনায় রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকেও সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে তারা এরকম কোন কাজ করলে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবির প্রেক্ষিতে যৌন নীপিড়ন সেল ভেঙ্গে পুনর্গঠন করা হয়েছে বলে জানান রেজিস্ট্রার। এই অভিযোগ গুলো দীর্ঘদিন ধরে যৌন নীপিড়ন সেলে পড়ে থাকলেও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনের রাস্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের দুই ছাত্রী ছাত্রলীগের ৪ কর্মী কর্তৃক হেনস্তার শিকার হয়। এদিকে, গত ১৭ জুলাই যৌন নীপিড়নের শিকার হওয়া ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রথমে ভুল তথ্য দেয়ায় অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে দেরি হয়েছে বলে ব্রিফিংয়ে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া। তিনি বলেন, প্রথমদিকে ভুক্তভোগীর দেয়া তথ্যানুযায়ী তদন্ত করে আমরা কিছু শনাক্ত করতে পারছিলাম না। কারণ ভুক্তভোগী জানিয়েছিল যে সে ট্রেন থেকে নেমে হলে গিয়ে খাবার খাওয়ার পর বন্ধুর সাথে দেখা করতে বের হওয়ার পর রাত সাড়ে নয়টার দিকে নীপিড়নের শিকার হন। কিন্তু বর্ণনানুযায়ী ওই সময় ওখানে থাকা সম্ভব না। এভাবে আমরা ভুল তথ্যের ভিত্তিতে দুইদিন নষ্ট করেছি। সে কারণে আমরা তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলে সে আমাদের সঠিক তথ্য দেয়। তখন ভুক্তভোগী বলেন, ঘটনা আসলে রাত ১০ টারও পরে ঘটেছে। প্রক্টর আরও বলেন, ভুক্তভোগী যে ঘটনার স্থানের কথা বলেছিল সেটিও সঠিক ছিলনা। আসলে ঘটনা ঘটেছিল প্রীতিলতা হল সংলগ্ন রাস্তা থেকে তারও দক্ষিণ দিকে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পরে পুকুরের পূর্ব পাড় থেকেও একটু ভেতরে। সেখানে একটি ফাকা জায়গায় ওই ছাত্রী তার বন্ধুর সাথে বসেছিল। ওই সময় অভিযুক্তরা দুটি বাইক নিয়ে ওই জায়গায় আসলে তাদের দেখতে পান। তখন ওই জায়গায় মারধর, ছিনতাই ও যৌন নিপীড়নের ঘটনাটি ঘটে। প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় ৫ জন যুবকের হাতে যৌন নীপিড়নের শিকার হন এক ছাত্রী। ওই সময় তার সাথে থাকা বন্ধুকেও মারধর করে তাদের মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর এ বিষয়ে একটি মামলা করা হয়। যৌন নিপীড়নের এ ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ছাত্রী হেনস্তা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে গত বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার দিনভর শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগগঠনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ-মিছিল করেন। বুধবার রাতে আন্দোলন কালে ছাত্রীরা প্রশাসন বরাবর চার দফা দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো হল- ছাত্রীদের হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোন সময়সীমা না রাখা, যৌন নিপীড়ন সেল বাতিল করে নতুন করে সেল গঠন করা, আগামী ৪ কর্মদিবসের মধ্যে চলমান ঘটনাগুলোর বিচার ও সুষ্ঠু সমাধান করা ও সমাধানে ব্যর্থ হলে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ করা। বিশ্ববিদ্যালয় চার কর্মদিবসের মধ্যে দাবিগুলোর সমাধান করার কথা বললেও মাত্র ৩ কর্মদিবসের মধ্যে এ চার দফার নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে ব্রিফিংয়ে জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার। এদিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেছেন চবি ক্যাম্পাস শতভাগ নিরাপদ। এসময় তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে প্রক্টরিয়াল বডির টহল বাড়িয়ে দেয়া হবে। বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন তৎপর থাকবে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে যুগোপযোগী ও দক্ষ নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শতভাগ নিরাপত্তা দিতে আমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকব। তিনি আরও বলেন, আমিও এই ক্যাম্পাসের ছাত্রী ছিলাম। কর্মজীবনে এখানে প্রথম নারী উপাচার্য হয়ে আসার আগে থেকেই যৌন নীপিড়ন সেল সক্রিয় ছিল। আমি আসার পরে জমা হওয়া অভিযোগ গুলোর নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
# ২৫.০৭.২০২২ #