চলমান সংবাদ

চবি’র যৌন নিপীড়ন সেল প্রশ্নবিদ্ধ, বিচার হয়নি কোন অভিযোগের

নিপীড়নের ঘটনা ঘটলেই উঠে আসে ছাত্রলীগ কর্মীর নাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও বহুবার চবি ছাত্রীরা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কিন্তু এসব ঘটনার বিচার না হওয়ায় এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় যৌন নিপীড়নের ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষার্থীরা। চবি’র যৌন নিপীড়ন সেলে গত চার বছরে তিনটি অভিযোগ জমা হলেও সুরাহা হয়নি একটিও। সর্বশেষ গত রোববার ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরে যৌন নীপিড়ন সেলের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। সেলে অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নিতে কমিটির সদস্যরা খুব একটা আগ্রহ দেখান না বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কমিটিগুলো সচল থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি অনেকাংশেই বন্ধ করা যেতো। শিক্ষার্থীরা বলছেন, নিরাপত্তার অভাব ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই ক্যাম্পাসে বারবার যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ছাত্রী হেনস্থা ও যৌন নীপিড়নের তদন্ত করতে গেলে দেখা যায় জড়িতরা অধিকাংশই ছাত্রলীগের কর্মী। ফলে এসব ঘটনায় বিচার হওয়ার আগমুহুর্তে তাদের নেতারা প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। ফলে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিতে না পারায় বছরের পর বছর ধরে এসব অভিযোগ ঝুলে থাকে। যৌন নীপিড়ন সেল যদি ঠিকমতো এসব কর্মকা-ের বিচার করতো তাহলে এমন ঘটনা আর ঘটতো না। সাম্প্রতিক ঘটনায় আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রশাসন নিপীড়নকারীদের ধরার ক্ষেত্রে গাফিলতি করেছে। তারা যদি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতো তাহলে তারা আগেই ধরা পড়তো। এখন তারা গা ঢাকা দিয়েছে। নিপীড়নের শিকার ছাত্রী দাবি করেন, তাকে অভিযোগ দিতে বাধা দিয়েছিলেন চবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। তিনি বলেন, ঘটনার পর দিন আমি প্রক্টর অফিসে অভিযোগ দিতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি আমাকে নিষেধ করেন। তিনি বলেন- বিষয়টি মীমাংসা করা হবে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে রেজাউল হক রুবেল বলেন, আমি ওই ছাত্রীকে কোনপ্রকার বাধা প্রদান করিনি। তাকে প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দিতে বলেছিলাম। আমি বলেছি সবাই মিলে প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের খুঁজে বের করব। অভিযোগ দিতে নিষেধ করিনি, আমি অপরাজনীতির শিকার। আমার ছোট বোনের বিচার চাইতে গিয়ে আমি নিজে হেনস্তার শিকার হচ্ছি। ২০১৮ সালে গঠিত যৌন নীপিড়ন সেলের আহ্বায়ক হচ্ছেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। তবে তিনি সেলের অকার্যকারিতার বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, যৌন নীপিড়নের ঘটনায় যে-ই জড়িত থাকুক বা যারই ছত্রছায়ায় থাকুক না কেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না। দোষীদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। অতি সত্বর তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, এটাকে বিচারহীনতা বলা যাবে না। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় আমরা একটা প্রাথমিক তদন্ত করে হাইকোর্টের নির্দেশিত অভিযোগ কমিটিকে হস্তান্তর করি। তারা আবার জড়িতদের সাক্ষাৎকার নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে রিপোর্টগুলো তৈরি করে। তবে ওনাদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা নেই, তারা শুধু অভিযোগ গঠন করে হাইকোর্ট নির্দেশিত যৌন নিপীড়ন কমিটিকে হস্তান্তর করবে। তিনি আরও বলেন, কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন শাস্তি না পায় সেজন্য সময় নিয়ে নির্দিষ্টভাবে সবাইকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। যেহেতু এই কমিটির সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের না সেহেতু সবাইকে নিয়ে মিটিং করতে একটু দেরি হয়। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে যৌন নীপিড়নের ঘটনাগুলোর রিপোর্ট ফাইনাল স্টেজে আছে। আর দুয়েকটা ফাইনাল মিটিং হলেই ওনারা কার দোষ কতটুকু বা কার কী শাস্তি হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। অন্যদিকে চবি ছাত্রীকে যৌন নীপিড়নের ঘটনায় পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত দুইজনকে শনাক্ত করেছে। শুক্রবার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া। তিনি বলেন, আমরা দুইজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তদন্তের গোপনীয়তার কারণে আমরা তাদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করতে পারছি না। তবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আশা করছি খুব শীঘ্রই আমরা বাকি ৩ জনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হব। প্রসঙ্গত, গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হল সংলগ্ন এলাকায় ৫ জন অজ্ঞত যুবকের হাতে যৌন নীপিড়নের শিকার হন এক ছাত্রী। ওই ছাত্রী জানান, আনুমানিক রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আমি ও আমার বন্ধু প্রীতিলতা হলের পাশের সড়ক দিয়ে হেটে হলের দিকে যাচ্ছিলাম। পথে পাঁচ যুবক আমাদের রাস্তা আটকে জেরা করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আমাদের বোটানিক্যাল গার্ডেনের ওইদিকে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তারা আমাকে বিবস্ত্র করে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। আমার বন্ধু প্রতিবাদ করতে গেলে তাকেও মারধর করে। এভাবে ১ ঘন্টা নির্যাতনের পর রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আমাদের ছেড়ে দেয়। তবে আমাদের মোবাইল ও মানিব্যাগ রেখে দেয় তারা। তাদের কথাবার্তা ও আচরণ দেখে মনে হয়েছিল তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পরে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে হাটহাজারী থানায় মামলা করা হয়। এ ঘটনার বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে গত বুধবার মধ্যরাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনে নামে আবাসিক হলের ছাত্রীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান এসে তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে তারা হলে ফিরে যায়। পরদিন বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকও সংহতি জানায়। ## ২২.০৭.২০২২ চট্টগ্রাম ##