চলমান সংবাদ

নষ্ট রাজনীতি ও ভ্রষ্ট শিক্ষার কারণে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটছে

নষ্ট রাজনীতি ও ভ্রষ্ট শিক্ষার কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের ওপর হামলা এবং পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ও সমাজের মধ্য থেকে সাম্প্রদায়িকতার বীজ উপড়ে ফেলতে না পারলে ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের জন্য কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। অন্ধকার সময় থেকে জাতিকে আলোর পথে নিয়ে যাবার কা-ারী শিক্ষকদের মান-মর্যাদা রক্ষায় সর্বক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন এবং শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে।

শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে শিক্ষক হত্যা ও নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সমাজ ও শিক্ষায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রুখে দাঁড়ানোর দাবিতে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পিপলস ভয়েস’ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ ও আলোক প্রজ্জ্বলন কর্মসূচিতে বক্তারা উপরোক্ত কথা বলেন।
নড়াইল ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতোর মালা পরিয়ে অপমান এবং সাভারের একটি কলেজের অধ্যাপক উৎপল কুমার সরকারকে এক শিক্ষার্থী কর্তৃক পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী বলেন, আমাদের সমাজ-রাষ্ট্র যে পর্যায়ে গেছে সেখানে হাজার হাজার জিতু তৈরি হয়েছে। নষ্ট রাজনীতি ও ভ্রষ্ট শিক্ষার কারণে এসব জিতু তৈরি হচ্ছে। শিক্ষায় গলদের কারণেই এ সংকট।
তিনি আফসোস করে বলেন, শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা ও গলায় জুতোর মালা দেয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম শিক্ষামন্ত্রী একটা বিবৃতি দিবেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মারা যাওয়া শিক্ষকের বাড়ি ছুটে যাবেন সমবেদনা জানাতে। কিন্তু তারা তা করেন নি। শুধুমাত্র ওই কলেজের পরিচালনা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে তারা দায় সেরেছেন। জিুত প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান বলে তা হয়নি। শিক্ষককে জুতোর মালা গলায় দেয়ার মধ্য দিয়ে তাকে মানসিকভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে আবু তাহের চৌধুরী বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সংকট রয়েছে। আমরা এরকম দেশ চাই নি। শিক্ষা হতে হবে গণমুখী, বিজ্ঞানভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন। এ সংকট থেকে উত্তরণে জাতীয় উদ্যোগ প্রয়োজন।
জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবুল বলেন, সারাদেশে শুধু শিক্ষকদের ওপর নয়, একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা করা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়া হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী চায় না ওই বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষেরা শিক্ষতা পেশায় আসুক। তারা শিক্ষকতায় না আসলে জামাত-শিবিরসহ সম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখতে পারবে। এখন শুধু বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলা হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রগতিশীল রাজনীতি যারা করে তাদের ওপর আক্রমণ হবে। আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে।
সমাবেশে নারীনেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, মানুষ গড়ার করিগর শিক্ষককে হত্যা ও জুতোর মালা দেয়ার ঘটনায় ধিক্কার জানাই। শিক্ষক হত্যায় অভিযুক্তদের ফাঁসি চাইছি।
প্রকৌশলি দেলোয়ার মজুমদার তার বক্তব্যে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রদায়িকতার যে চর্চা চলছে তার মধ্য দিয়ে মানুষ গড়ার পথ রুদ্ধ হচ্ছে। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতার চর্চা বন্ধ করা না গেলে দেশে মুক্তবুদ্ধিও চর্চা দিন দিন অবরুদ্ধ হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. মু. ইদ্রিস আলী বলেন, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ঢুকে পড়ায় বারে বারে এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। আমরা প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা লালন করছি না। সেকারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
সমাবেশে কবি কামরুল হাসান বাদল শিক্ষক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় সরকারের জিরো টলারেন্স দাবি করে বলেন, এ ধরণের ঘটনা বার বার ঘটলেও অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। সমাজে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিভিন্ন ছুতোয় এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে পিপলস ভয়েস প্রধান শরীফ চৌহান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক, লেখকসহ প্রগতিশীল আন্দোলনের মানুষদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটিে ছে। অতীতে বিভিন্ন ঘটনা ঘটলেও বিচার না হওয়ার সুযোগে তারা এ ধরণের হামলা নির্যাতন বার বার করছে। তিনি অবিলম্বে শিক্ষক নির্যাতন ও হামলার সাথে যুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
পিপলস ভয়েসের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা, সাংবাদিক প্রদীপ দেওয়ানজী, সংস্কৃতিকর্মী রোকসানা বন্যা, শিক্ষক মার্গারেট মনিকা জিন্স, অধ্যাপক মিনু মিত্র, শিক্ষক স্বপন কুমার সাহা, বিবি কাউসার, উন্নয়নকর্মী উৎপল বড়–য়া, শিপ্রা দাশ।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি অরুণ দাশ সাথী, পটিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু, খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু তৈয়ব, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি তাপস হোড়, শিক্ষকনেতা অঞ্চল চৌধুরী, প্রগতির যাত্রী ডটকমের সম্পাদক ফজলুল কবীর মিন্টু, খেলাঘর নেতা কবি আশীষ সেন, ন্যাপনেতা মিটুল দাশগুপ্ত, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর সম্পাদকম-লীর সদস্য সাংবাদিক প্রীতম দাশ, জামাল নাসের চৌধুরী, পিপলস ভয়েসের সদস্য আলোকময় তলাপাত্র, সিরাজুল ইসলাম রাজু, অ্যাডভোকেট প্রদীপ চৌধুরী, নাট্যকর্মী মনসুর মাসুদ, বোধন আবৃত্তি পরিষদের প্রণব চৌধুরী, ত্রিতরঙ্গ আবৃত্তি দলের দেবাশীষ রুদ্র, বোধন আবৃত্তি পরিষদের সঞ্জয় পাল, কণ্ঠনীড়ের সভাপতি সেলিম রেজা সাগর, উন্নয়নকর্মী নজরুল ইসলাম মান্না, সংস্কৃতি সংগঠক রুবেল দাশ প্রিন্স, শৈবাল পারিয়াল প্রমুখ।

# ০২/০৭/২০২২, প্রেস বিজ্ঞপ্তি #