চলমান সংবাদ

সামাজিক সুরক্ষা ও পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ করা যাবে না – স্কপ

স্কপ নেতৃবৃন্দের সাথে হকার নেতৃবৃন্দের মত বনিম্য সভার ছবি
কর্মক্ষেত্র ও শ্রম অধিকারের সংকট এবং শ্রম আইন ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার সীমাবদ্ধতা, উত্তরণে করণীয় নির্ধারণে সেক্টর ভিত্তিক শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময়ের অংশ হিসাবে গতকাল ২৬ জুন ২০২২, সোমবার, বিকাল-৫টায় কর্ণেল তাহের মিলনায়তনে ক্রিয়াশীল হকার সংগঠনসমূহের সাথে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপ এর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্কপ যুগ্ম সমন্বয়ক চৌধুরী আশিকুল আলম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন স্কপ নেতা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, রাজেকুজ্জামান রতন, সাইফুজ্জামান বাদশা, শামীম আরা, নাইমুল আহসান জুয়েল, আমিরুল হক আমিন, নুরুল আমিন, আব্দুল ওয়াহেদ, ফিরোজ হোসেন, হকার সংগঠনসমুহের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হকার সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আবুল হোসেন, সহ-সভাপতি সরদার খোরশেদ, সাধারণ সম্পাদক এম.এ.খায়ের, ছিন্নমুল হকার সমিতির সভাপতি কামাল সিদ্দিকী, পরিবহন হকার সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী,ছিন্নমুর হকার্স লীগের সভাপতি মো: আনোয়ার হোসেন, সাধারন সম্পাদক খোকন মজুমদার, রফিকুল ইসলাম বাদল, নজরুল ইসলাম নসু, ফকির হারুন-অর-রশিদ, মাহবুবা নার্গিস, কাজী রেনু আরা, তাজুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান প্রমুখ। মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক আহসান হাবিব বুলবুল।
মতবিনিময় সভায় হকার নেতৃবৃন্দ হকারদের উপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য, সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষমতাবান মস্তান এবং সিটি কর্পোরেসনের নিপিড়ন ও চাঁদাবাজির চিত্র তুলে ধরেন। হকার নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিটি হকার কে প্রতিদিন গড়ে ২ শত টাকা চাঁদা দিতে হয় তারপর তাদের জীবিকার জন্য উপার্জন করতে হয়। চাাঁদা দেওয়ার পরও মাঝে মাঝেই সিটি কপোর্রেশনের কর্মকর্তা পরিচয়ে তাদের মালামাল ক্রোক করে নিলামে বিক্রি করে দেয়, তাদের বসার চৌকি ভেঙ্গে দেয়। হকার নেতৃবৃন্দ হকারদের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে তাদের সার্বজনীন পেনশন স্কীমসহ রাষ্ট্রের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের প্রতি দাবি জানাতে স্কপ নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করেন।
স্কপ নেতৃবৃন্দ শ্রমজীবী এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে হকারদের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, সারাদেশে প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ হকার হিসাবে কাজ করে নিজদের এবং পরিবারের সদস্যদের জীবিকার ব্যবস্থা করে। রাষ্ট্র তাদের কর্মসংস্থান দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এই মানুষগুলো স্ব-উদ্যোগে কাজের ব্যবস্থা করে নিয়েছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে রাষ্ট্রের লজ্জিত হওয়া উচিত ছিল। তাদের স্ব-কর্মকে সুরক্ষা দেয়া এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা একটি মানবিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল। সেখানে রাষ্ট্রের ক্ষমতাবানরা বিভিন্ন কৌশলে হকারদের শ্রম-ঘাম মিশ্রিত উপার্জনে  ভাগ বসিয়ে, তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বিশেষ সুবিধা আদায় করতে হকারদের কাজকে বেআইনি হিসাবে অবিহিত করে, প্রতিবাদের শক্তিকে দুর্বল রাখার কৌশল হিসাবে হকারদের সংগঠিত হওয়ার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার জন্য শ্রম আইনে সুনির্দিষ্ট ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়না। রাষ্ট্রের এই আচরণ মানবিক নয় বরং বর্বর রাষ্ট্রের উদাহরণ। অথচ রাষ্ট্র ২০৩০ সালের মধ্যে এস.ডি.জি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যার মুখ্য শ্লোগান হচ্ছে ”কাউকে পিছনে ফেলে নয়”। সকলের জন্য শোভন ও পূর্ণকালীন কাজ নিশ্চিত করা এস.ডি.জি’র অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। অথচ যে হকাররা বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ভ্যাট দেয় তাদের পকেট থেকেই বছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটিরও বেশি টাকা অবৈধ ভাবে ক্ষমতাবানদের পকেটে ঢুকছে। নেতৃবৃন্দ, নীতিমালা প্রণয়ণকরে হকারদের তালিকা তৈরি এবং লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের রাজস্ব বৃদ্ধি করার এবং কালো অর্থনীতি স্ফীত হওয়ার বিদ্যমান পথ বন্ধ করার আহবান জানান। স্কপ নেতৃবৃন্দ, শ্রম আইনে হকারদের অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে তাদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা এবং সার্বজনীন পেনশন স্কীমসহ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করার আহবান জানিয়ে বলেন, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে হকার উচ্ছেদ করা যাবেনা। নেতৃবৃন্দ, ঈদকে কেন্দ্র করে হকাররা যেন নিপিড়ন এবং জুলুমের শিকার না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান।