চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামের অধিকাংশ বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মানছেনা সুরক্ষা নীতিমালা

ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন প্রতিবেদনেও একই চিত্র সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন-বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ৭টি টিম নগরের ২৫টি কনটেইনার ডিপো পরিদর্শন করে। বিভিন্ন ডিপো পরিদর্শনকালে ডিপো কর্তৃপক্ষ থেকে সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করেন ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন টিম। গত শনিবার (১১ জুন) থেকে মঙ্গলবার (১৪ জুন) পর্যন্ত চট্টগ্রামের কনটেইনার ডিপোগুলো পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস। ২৫টির মধ্যে ২২টি কনটেইনার ডিপো সচল রয়েছে। ৩টি কনটেইনার ডিপো অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। পরিদর্শন কার্যক্রম শেষে বুধবার (১৫ জুন) পরিদর্শক দল তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদনসমূহ একসঙ্গে যুক্ত করে ঢাকা হেডকোয়ার্টারে প্রেরণ করা হবে। সেখান থেকে যেসব ডিপোতে অনিয়ম রয়েছে সেসব ডিপোগুলোকে সতর্ক করা হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে। ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, “চট্টগ্রামে অধিকাংশ বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা খুবই নাজুক। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ডিপো পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ডিপোগুলোতে পণ্য রাখার ব্যবস্থাপনা, অগ্নিনিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা, নিরাপত্তা প্রশিক্ষণসহ নানা বিষয়ে অসঙ্গতি রয়েছে। নানা অনিয়ম রয়েছে। এক কথায় ডিপোগুলো সার্বিক ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক নয়। পরিদর্শন প্রতিবেদন ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকেই কোন কোন ডিপোর কি কি সমস্যা রয়েছে- সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।” তিনি বলেন, পরিকল্পিত উপায়ে ডিপোতে কনটেইনার রাখতে ডিপো কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। পরে তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ডিপোগুলোর ভেতর কী কী পণ্য রাখা আছে, কীভাবে সেগুলোর ব্যবস্থাপনা হয়, নিরাপত্তাব্যবস্থা কী, সেসব খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বিভিন্ন নথি ও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। যেসব ডিপোতে অগ্নিনিরাপত্তামূলক পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, তাদের সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শ্রম আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগে কর্মরত শ্রমিকদের কমপক্ষে ১৮ শতাংশকে অগ্নিনির্বাপণ, জরুরি উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা এবং বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণযন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিকদের মধ্য থেকে অগ্নিনির্বাপণ দল, উদ্ধারকারী দল ও প্রাথমিক চিকিৎসা দল (প্রতিটি দলে ছয়জন করে) গঠন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন কনটেইনার ডিপোতে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক দল পরিদর্শন করে নানা অনিয়ম ও ত্রুটি খুঁজে পায়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ডিপো পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কোনটির ডিপোগুলোতে পণ্য রাখার ব্যবস্থাপনা রয়েছে, কোনটিতে অগ্নিনিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা একেবারেই দুর্বল, কোনটিতে নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নেই, কোনটিতে গার্মেন্টসপণ্য ভর্তি কনটেইনারের পাশেই রাসায়নিক ভর্তি কনটেইনার রাখা আছে। এছাড়া ডিপোগুলোতে নানা বিষয়ে অসঙ্গতি রয়েছে। গত মঙ্গলবার বিএম কনটেইনার ডিপোসহ সীতাকুন্ডের আরও চারটি ডিপো থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্সসহ সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করে। জানা গেছে, সীতাকুন্ডের ছয়টি কনটেইনার ডিপোর তিনটিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট (অগ্নিনির্বাপণকাজে ব্যবহৃত বিশেষ পানিকল) ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নেই। পোর্ট লিংক কনটেইনার ডিপোতে থাকা রাসায়নিকের কনটেইনারগুলো অপরিকল্পিতভাবে রাখা। রাসায়নিকে ভর্তি কনটেইনারগুলো গার্মেন্টসপণ্যের পাশপাশি অন্যান্য কনটেইনারের সাথে রাখা। কনটেইনারগুলো পরিকল্পিতভাবে রাখতে ডিপো কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেবেন বলে জানান ফায়ারসার্ভিসের পরিদর্শক টিম। এছাড়া ডিপো ব্যবস্থাপনায় রাসায়নিকে ভর্তি কনটেইনারগুলোকে অন্যান্য কনটেইনার থেকে আলাদাভাবে রাখতে এবং এ জন্য দেয়াল নির্মাণের মৌখিক নির্দেশ দেন টিমের সদস্যরা। এছাড়া নেমসন কনটেইনার ডিপোতে ফায়ার হাইড্রেন্ট নেই। বে লিংক নামে কনটেইনার ডিপোতে ফায়ার হাইড্রেন্ট ও সেফটি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে তারপর ডিপোর কার্যক্রম চালু করতে বলা হয়েছে। গত ৪ জুন রাতে সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ১০ জন। আহত হয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন দুই শতাধিক মানুষ। দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন ও লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি যথাযথ ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ জন্য চট্টগ্রামের সব কটি কনটেইনার ডিপো ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয় ফায়ার সার্ভিস।

# ১৫.০৬.২০২২ চট্টগ্রাম #