চলমান সংবাদ

সীতাকুন্ড ট্র্যাজেডিঃ নিহত এখন পর্যন্ত ৪৫ জন, নিখোঁজ অজানা

-আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে, চলছে কনটেইনার সরানোর কাজ

সীতাকুন্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে ডিপোর ভেতরের কয়েকটি কনটেইনার থেকে এখনও উড়ছে ধোঁয়া। এরই মধ্যে কনটেইনার সরানোর কাজ শুরু করেছে ডিপো কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সীতাকুন্ডে বিস্ফোরণের ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসুদ রানা (৩৬) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই কনটেইনার ডিপোর শ্রমিক বলে জানা গেছে। এছাড়া বুধবার সন্ধ্যায় ডিপোর ভেতর থেকে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া আরো একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে।

তবে এই ঘটনায় আনুমানিক ২৫জন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজের সন্ধানে স্বজনরা চমেক হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ছবি নিয়ে বসে আছেন। তাদের অনেকেই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনাও দিয়েছেন।

বুধবার (৮ জুন) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসুদ রানা মৃত্যুবরণ করেন। আইসিইউর চিকিৎসক ডা. হারুনুর রশিদ বলেন, আশঙ্কাজনক অবস্থায় মাসুদ রানাকে আইসিইউতে আনা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোরে তিনি মারা যান। চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. আলাউদ্দীন তালুকদার বলেন, নিহত মাসুদ রানার বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলায়। তিনি ওই কনটেইনার ডিপোতে মাল লোড-আনলোডের কাজ করতেন। পরবর্তী নিয়ম অনুসরণ করে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

অন্যদিকে বুধবার (৮ জুন) সকাল থেকে ডিপোর প্রধান ফটক বন্ধ করে শুরু হয় কনটেইনার অপসারণের কাজ। আগুনের কুন্ডলি দেখা না গেলেও ধংসস্তুপ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। বিএম কনটেইনার ডিপোর সামনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮-বীর এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম হিমেল বলেন, আমরা সবার আগে গুরুত্ব দিয়েছি নিরাপত্তার বিষয়টি। তাই সবকিছু নিশ্চিত হওয়ার পরই আমরা অপসারণ কাজ শুরু করি।

তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও এখনও ধোঁয়া উড়ছে। আগুন নেই, তবে কনটেইনারে যে গার্মেন্টস পণ্য আছে সেগুলোতে পানি দেওয়ায় সেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। কনটেইনার সরানোর কাজ চলছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর একটি তদন্ত দল অগ্নিকান্ডের বিষয়ে তদন্ত কাজ করছে। এ কাজে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে নৌ-বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস।

তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর আমরা সব জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছি। পুরো ডিপো আমরা ঘুরে দেখেছি, কোনও মরদেহ পাওয়া যায়নি। অনেক কনটেইনার পুড়ে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। ক্রেনের মাধ্যমে সেগুলো আমরা সরাচ্ছি। যদি কনটেইনারের মধ্যে মরদেহ পাওয়া যায় তাহলে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার বড় কারণ ছিল এখানে কিছু রাসায়নিক কনটেইনার ছিল।

রাসায়নিক সবগুলো কনটেইনারকে আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করেছি এবং সেগুলোকে পৃথক করে ফেলেছি। ডিপো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, প্রায় ৩০টির মতো কনটেইনারে রাসায়নিক আছে। তবে সংখ্যাটা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি। ডিপোতে ৪ হাজার চারশ’র মত কনটেইনার ছিল। তার মধ্যে প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পেয়েছি তাতে ৪০০ কনটেইনার ধ্বংস হয়েছে। এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, শুরু থেকেই আমরা লক্ষ্য রেখেছি, আগুন যাতে আর না বাড়ে এবং আর কোনো বিস্ফোরণ না ঘটে- সে লক্ষ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করছি।

রোববার সকাল থেকে ডিপোর আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় সেনা সদস্যরা। আগুন লাগার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আগুন বিপদসীমার নিচে এবং ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে একদম নিভে যেতে সময় লাগলো ৮৬ ঘণ্টা।

গত শনিবার (৪ জুন) সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীসহ ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার চারদিন পেরিয়ে গেলেও খোঁজ নেই অনেকের। প্রিয়জনের খোঁজ পেতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভিড় করেছেন স্বজনেরা। ব্যাপক বিস্ফোরণে ছিন্ন-ভিন্ন হওয়া মানুষের দেহের অংশবিশেষ পাওয়া যাচ্ছে এখনো।

সেই ডিপোতে কতজন লোক ছিলেন এবং এই ঘটনায় কতজন নিখোঁজ রয়েছেন তার হিসেব ফায়ার সাভিস, জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ কোন সংস্থা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছে না। বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে শনাক্তবিহীন মরদেহ শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। শনাক্তবিহীন মরদেহে নিজের স্বজন আছেন কিনা জানতে বা নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজ পেতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দিতে ভিড় করেন অনেকে। নমুনা সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত বুথে গত দুইদিনে ৪০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ২২ জনের খোঁজে তারা নমুনা দিয়েছেন। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের কাজটি করছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আহসান জানান, নিহত ৪৪ জনের মধ্যে ২৭ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এসব মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি মরদেহগুলো বর্তমানে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। নমুনার ফলাফল পেতে অন্তত এক মাস সময় লাগতে পারে।

# ০৮.০৬.২০২২ চট্টগ্রাম #