চলমান সংবাদ

সীতাকুন্ডে কন্টেনার ডিপোতে বিস্ফোরণের জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তি দাবি

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলা কমিটির উদ্যোগে  আজ সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রবর্তক মোড়ে এক প্রতিবাদী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রমিক নেতা তপন দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে সীতাকুন্ডে বি এম কন্টেনার ডিপোতে রাসায়নিক বিস্ফোরণের কারণে দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক, ৯ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী এবং কয়েক শত শ্রমিক আহত হওয়ার জন্য দায়ী মালিক পক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের প্রত্যেকের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো। সভায় বলা হয় রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া এবং এ সংক্রান্ত কোন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ না করার কারণে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তারা বলেন, অতীতেও চট্টগ্রামে  কেটিএস গার্মেন্টস ও আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনে আগুনে পুড়ে, রাণা প্লাজায় বিল্ডিং ধ্বসে, নারায়ন গঞ্জের রূপগঞ্জে অগ্নি দুর্ঘটনায় অজস্র শ্রমিকের জীবন হানি এবং পঙ্গু হয়েছে। কিন্তু পূর্বের দুর্ঘটনা সমূহের জন্য দায়ীদের আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো যায়নি বলেই আজও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছেনা। যার সর্বশেষ বলি হয়েছে – সীতাকুন্ডে অবস্থিত বি এম কন্টেনার ডিপোর শ্রমিকেরা। নেতৃবৃন্দ বলেন, আগুন লাগার পরেও কন্টেনারে যে রাসায়নিক দ্রব্য ছিল তা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের অবহিত করা হয়নি। ফলে সঠিক তথ্য না জানার কারণে ৯ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মীকে অকালে প্রাণ হারাতে হল। সভায় বক্তারা বলেন,  ঘটনা পর্যালোচনা করলে, প্রত্যেক ঘটনায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে  মালিকদের চরম অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই এধরণের ঘটনা সমূহকে নিছক দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকান্ড বলাই যথাযথ হবে।

টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমীটির যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন টিউসি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু, বেসরকারী স্বাস্থ্য সেক্টর কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, শ্রমিক নেতা বিপ্লব চক্রবর্তী, পাহাড়তলি আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত দত্ত, কমিউনিটি সেন্টার এবং ডেকোরেটার্স শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মোঃ পারভেজ, মোঃ সেলিম, আব্দুর রহমান, ইমারত নির্মান শ্রমিক বাংলাদেশ (ইনসাব) এর নেতা মোঃ ফিরোজ আলম ও সবুজ হাওলাদার হোটেল এন্ড রেস্তোরা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা হোঃ হানিফ এবং নূর আলম প্রমূখ।

সভাপতি ভাষণে শ্রমিক নেতা তপন দত্ত বলেন, জীবনের তাগিদে কাজ করতে গিয়ে এদেশের শ্রমিকেরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চরম অনিরাপদ কর্ম পরিবেশে কাজ করছে। আবার কাজ করে মাস শেষে

যে মজুরি পায় তা দিয়ে তাদের জীবন চলেনা। তার উপর মরার উপর খারার ঘা হিসেবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি জনজীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। তিনি বেসরকারী স্বাস্থ্য সেক্টরের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ সেক্টরটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ প্রাতিষ্ঠানিক সেক্টর হওয়া সত্ত্বেও অদ্যাবধি এ সেক্টরের নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়নি। ফলে এ সেক্টরে আয়া-মাসিরা বেতন পায় মাসিক মাত্র ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। এত কম বেতন দিয়ে কোন মানুষের পক্ষে জীবন নির্বাহ করা সম্ভব নয়। ফলে বাধ্য বেসরকারী স্বাস্থ্য সেক্টরে কর্মরত বেশির ভাগ শ্রমিক বাধ্য হয়ে একই প্রতিষ্ঠানে দু শিফটে কিংবা দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। তিনি বেসরকারী স্বাস্থ্য সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে  নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠনের দাবি জানান। একই সাথে বেসরকারী স্বাস্থ্য সেক্টর সহ সকল প্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য জাতীয় নিম্নতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানান।

# ০৬/০৬/২০২২, চট্টগ্রাম #