চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে হাজারো অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বাস্থ্যসেবা নামে বাণিজ্য-প্রতারণার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু

অনুমোদনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকে রোগী জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল রিপোর্ট দেওয়াসহ নানান অভিযোগ দীর্ঘদিনের। চট্টগ্রামে নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের তালিকা থাকলেও চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অনুমোদনহীন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের কোনো তালিকা নেই।

এসব অনিবন্ধিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের শুধু লাইসেন্স কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র নয়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্যাথলজিক্যাল ল্যাব, প্যাথলজিস্ট, রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টও নেই অনেক হাসপাতালে। অতীতে অবৈধ হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা তৈরির কথা মুখে বলা হলেও বাস্তবে তা কখনো হয়নি। তবে এবার হার্ডলাইনে স্বাস্থ্য বিভাগ।

অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণার দু’দিনের পরেই শনিবার (২৮ মে) অভিযান চালায় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন। চট্টগ্রাম মহানগরীর ৬টি বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করে ৪টি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পেয়ে তাদের কার্যক্রম জনস্বার্থে বন্ধ রাখার জন্য তাৎক্ষণিক নির্দেশ প্রদান করা হয়।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে হাজারও অনুমোদনহীন ল্যাব, হাসপাতাল, ক্লিনিক রয়েছে। বছরের পর এসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, টিন সার্টিফিকেট ছাড়াই চলছে। এসব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে রোগী হয়রানি, ভুল চিকিৎসা কিংবা অবহেলায় মৃত্যু, রোগ নির্ণয়ে রির্পোটে একাধিক রকমের ফলাফলসহ অসংখ্যা অভিযোগ রয়েছে। যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব হাসপাতাল প্রতিনিয়তই রোগীদের প্রতারিত করে যাচ্ছে। করছে স্বাস্থ্যসেবার নামে বাণিজ্য।

চট্টগ্রামের বেশিরভাগ ল্যাব-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর গলাকাটা বাণিজ্যের দৌরাত্ম্যে কেউ কিছু বললেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ কিংবা নাজেহাল করে রোগীর স্বজনদের।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র আছে ১৫৬টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে ৯৩টি এবং ১৫ উপজেলায় ৬৩টি। কিন্তু চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অনুমোদনহীন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের কোনো তালিকা নেই। অভিযোগ আছে, চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় অন্তত ১ হাজার অনুমোদনহীন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আছে।

এসব অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক শনিবার (২৮ মে) চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরীর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে চারটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। হাসপাতালের লাইসেন্সসহ কোনো কাগজপত্র না পাওয়া,পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকা, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ বিভিন্ন অভিযোগে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, অনুমোদনহীন অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে অনিবন্ধিত হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছে। অবৈধ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেছি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠানের ত্রুটি থাকায় তাদের সেবা সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দশনা দেওয়া হয়। এছাড়া আরও ২টি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে।

এর আগে গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের পর চট্টগ্রাম বিভাগের অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার। লিখিত নির্দেশে বলা হয়, দেশের কিছু স্থানে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের (রোগনির্ণয় কেন্দ্র) মালিকেরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু লাইসেন্সপ্রাপ্তির আগেই অথবা আবেদন না করেই অনুমোদনহীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, যা বৈধ নয়। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় এ রকম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করা বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হলো।

জানা গেছে, চট্টশ্বেরী রোডের চট্টগ্রাম কসমোপলিটন হাসাপাতালে অভিযান চালানো হয়। এ সময় কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের লাইসেন্সসহ কোনো কাগজপত্র প্রদর্শন করত পারেনি। এইজন্য হাসপাতালটি বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া ডবলমুরিং থানার ডিউটি রোডের পপুলার মেডিকেল সেন্টারে দেখা যায় ব্লাড কালেকশানের জন্য কোনো পাস করা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নেই। ব্লাড স্যাম্পল সংগ্রহ করে তারা বাইরের ল্যাব থেকে রিপোর্ট করান। এক্সরে রুম ও প্যাথলিজ রুম মানসম্মত নয়। এক্সরে রুমের দেওয়ালের ঘনত্ব ৫ ইঞ্চি। ছাদে লিড শিট লাগানো নেই। এছাড়া লাইসেন্স, ভ্যাট ট্যাক্সের কাগজপত্র না থাকায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া নগরীর দামপাড়া এলাকার নিরুপনী প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতেও অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখানে রিসেপশনের সামনে রোগী বসিয়ে ব্লাড কালেকশন করতে দেখা গেছে। এছাড়া অনলাইনে আবেদন পাওয়া যায়নি, পরিবেশ ছাড়পত্র, ভ্যাট, টিন সার্টিফিকেট পাওয়া যায়নি। এছাড়া ল্যাবরেটরিটি অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পাওয়া গেছে। এটিকেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে পাঁচলাইশের এস.টি.এস হাসপাতালে গিয়ে দালাল চক্রের আনাগোনা দেখা যায়। এখানে গিয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া তারা হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাই হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে সেবার মূল্য প্রদর্শিত করা হয়নি। ২০২২ এর অনলাইনের আবেদন পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতালের সব কাগজ সঠিক পাওয়া গেছে। এসময় তাদেরকে সেবার মূল্য প্রদর্শন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পলি হাসপিটালেও সেবার মূল্য প্রদর্শন না করায় তাদের তা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

# 29২//০৫/২০২২, চট্টগ্রাম #