মতামত

ঈশ্বর কোথায় থাকেন!

-শরীফ শমশির

ভুবনবিখ্যাত উপন্যাস, পদ্মা নদীর মাঝি- তে মানিক বন্দোপাধ্যায় কুবের মাঝির জেলেপল্লীর বর্ণনায় লিখেছেন, এখানে ঈশ্বর থাকেন না। মানিক হয়তো জানতেন, ঈশ্বর কোথায় থাকেন! দারিদ্র্য আর প্রাচুর্যের বিতর্ক একপাশে রাখলেও প্রশ্নটা থেকে যায়। গৌতম ছাড়া একেশ্বরবাদীগণ মনে করেন, ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান, আর সর্বজনে! এসব প্রসঙ্গ মানিকের জন্মদিনে মনে পড়লে দোষের কিছু নেই। কিন্তু কুবের মাঝি আর স্বর্ণদ্বীপের কথা?
ভেলোরের খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হসপিটাল এ এসে চিকিৎসাপ্রার্থী বাংলাদেশীদের মাঝে থেকে মনে হলো এই হাসপাতালটি একটি স্বর্ণদ্বীপ; এখানে কুবের মাঝি যেমন আছেন তেমনি বাণিজ্য, ভ্রমণ, হাটবাজার আর আর সব আছে। সুস্থ হওয়ার প্রবল আকাঙ্খা মানুষকে এখানে টেনে নিয়ে আসে। হাসপাতালের সর্বত্র ঈসা নবীর ছবি ও বাণী বিরাজমান। তাঁকে স্মরণ করে ডাক্তার সেবিকা সেবা শুরু করেন। রোগী সর্বধর্মের। দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা শেষে রোগী সুস্থ হলে আনন্দে বাড়ী ফিরেন, অনেক রোগী আবার স্বর্গত হন! সর্বধর্মের এই বাংলাদেশী ও ভারতীয় চিকিৎসাপ্রার্থীগণ একই ব্যাথায় ব্যাথী আবার পরস্পর সমব্যাথীও বটে। হাসিকান্না, আহারবিহার, স্বল্পসময়ের জন্য প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস, নিজ নিজ ধর্মাচার পালন এবং হাসপাতালের চিকিৎসায় আস্থা — এসব দেখে মনে হয় ঈশ্বর হয়তোবা এখানে থাকেন। রোগী ডাক্তার সকলেই সমর্পীত।
বাংলাদেশের কক্সবাজারের চকরিয়ায় অবস্থিত ডুলহাজারা খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হসপিটালকে যদি সকলে মিলে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা পরিহার করে আরো বড় করে গড়ে তোলা যেত তাহলে এখানে আসা অর্ধেক রোগী সেখানে যেতো, এছাড়া, কক্সবাজারের বায়তুশ শরফ হাসপাতালও মানবসেবায় নিয়োজিত। সাধারণ জনগণের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য উন্নত হাসপাতাল কবে বাংলাদেশে হবে! গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালের কথা সচেতনভাবেই উল্লেখ থেকে বিরত থাকলাম ; এগুলো বড় বেশী নাগরিক। শহর- গ্রামের জনমানুষের চিকিৎসা কোথায়, বাংলাদেশে? সমাজ, রাষ্ট্র, কেউ যদি এসব নিয়ে না ভাবে, তবে আমরা কোথায় যাব? ঈশ্বরইবা কোথায় তাঁর মমতা বিতরণ করবে।