চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশু হত্যা, তিন আসামির ফাঁসির রায়

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পানির ট্যাংকে ফেলে দুই বছরের শিশুকে হত্যা মামলায় তিন জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৮ মে) দুপুরে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিন এ রায় দেন।

দন্ডিতরা হলেন- মো. ফরিদ, মো. হাসান ও তার মা নাজমা বেগম। রায়ের সময় আসামিরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আদালত সূত্র জানান, ২০২০ সালের ৭ জুন নগরীর বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরের ম্যাচ ফ্যাক্টরি রোডে একটি ভবনের ছাদে পানির ট্যাংক থেকে দুই বছর বয়সী আবদুর রহমান আরাফের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ভবনটির মালিক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর নুরুল আলম মিয়া। নিহত আরাফ নুরুল আলমের ভাড়াটিয়া আবদুল কাইয়ুমের ছেলে। এ ঘটনায় আরাফের বাবা আবদুল কাইয়ূম বাদি হয়ে বাকলিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পরই নুরুল আলমের বাড়ির দারোয়ান হাসান ও তার মা নাজমা বেগম এবং পরবর্তীতে পাশের ভবনের ভাড়াটিয়া ফরিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হাসান ও নাজমা নুরুল আলমের ভবনেই বসবাস করতেন।

নাজমা বেগম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে প্রতিবেশীর শিশুকে আদর করার ছলে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করেন। তিনি বলেছিলেন, ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অর্থের লোভ এবং পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদের প্রলোভনে বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনার সময় নাজমার ছেলে হাসান (২৩) গেইট খুলে দিয়ে তাকে ছাদে উঠতে সহায়তা করেছিলেন।

পুলিশী তদন্তে জানা যায়, ফরিদ দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী ছিলেন। নুরুল আলম আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। নুরুল আলমের প্রচারণা মিছিলে হামলার অভিযোগে ফরিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এতে ক্ষুব্ধ ফরিদ কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলমকে ফাঁসানোর ফাঁদ খুঁজছিলেন। ঋণগ্রস্ত নাজমা ও তার ছেলেকে ২০ হাজার টাকার প্রলোভন দেখিয়ে নুরুল আলমকে ফাঁসানোর ফাঁদ তৈরি করে।

তিন জনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের ৬ জুন আদর করার ছলে আরাফকে বাড়ির ছাদে তুলে নাজমা পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করে। আরাফকে খুঁজে না পেয়ে পুলিশকে জানানোর পর পরদিন লাশ উদ্ধার হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অতিরিক্ত পিপি প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, আরাফকে খুনের মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল শেষে ২০২১ সালের ১০ মার্চ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে ২০ জন ও আসামিপক্ষে ১০ জনের সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। আদালত তিন আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন।

আরাফের বাবা আবদুল কাইয়ুম একটি বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও মা গৃহিনী ফারহানা ইসলাম। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল আরাফ। আদালতের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আরাফের বাবা আব্দুল কাইয়ুম গণমাধ্যমে বলেন, তিন আসামির সবাইকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। এখন আমরা এ রায় দ্রুত বাস্তবায়ন চাই এবং তা যেন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। কোনো মা-বাবা যেন আমার মতো আর সন্তানহারা না হয়।

# ১৮.০৫.২০২২ চট্টগ্রাম #