রাষ্ট্রীয় খরচে হ্বজ কী আল্লাহ কবুল করবেন? – কলিম উল্লাহ
ইসলাম ধর্মের প্রধান ৫টি স্তম্ভ হচ্ছে – মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা, প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত সালাত বা নামাজ আদায় করা, যাকাত প্রদান করা, হ্বজ সম্পাদন করা এবং রোজা রাখা। ৫টি স্তম্ভের ৩ টি ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য হলেও যাকাত এবং হ্বজ শুধুমাত্র ধনী তথা আর্থিকভাবে সামর্থবানদের জন্য প্রযোজ্য। বিশেষ করে আর্থিক সামর্থ না থাকলে কোন মুসলমানের জন্য হ্বজ প্রযোজ্য নয়। এমনকি বিবাহের উপযুক্ত কন্যা সন্তান থাকলে তাকে বিয়ে না দিয়ে কিংবা কারও কোন দেনা থাকলে, সে দেনা পরিশোধ না করে কেউ হ্বজ করতে গেলে সেই হ্বজ আল্লাহ কবুল করবেন না বলে ইসলাম ধর্মে একটি প্রচলিত ধারনা আছে।
সম্প্রতি সংবাদ পত্র মারফত আমরা জানতে পেরেছি যে, রাষ্ট্রের ব্যাবস্থাপনায় ৫৩২ জন হ্বজ সম্পাদন করতে যাবেন। আরো জানা গেছে, এসকল সৌভাগ্যবানদের জন্য রাষ্ট্রের কমপক্ষে খরচ হবে অর্ধশত কোটি টাকা। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স এবং রপ্তানী আয়ের তুলনায় আমদানী খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যখন চাপের মধ্যে পড়েছে- তখন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনায় ৫৩২ জনকে হ্বজ করানোর জন্য সৌদি আরব নিয়ে যাবার সংবাদে সারাদেশে বিবেকবান মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সচেতন মহলের বক্তব্য হচ্ছে, জনগনের ঘাম ঝরানো টাকা দিয়ে হ্বজে যাওয়ার প্রবনতা বন্ধ হওয়া উচিৎ। কেউ হ্বজে যেতে চাইলে এবং তার যদি সামর্থ থাকে তাহলে তিনি নিজের টাকায় যেতে পারেন। এতে সাধারণ মানুষের কোন আপত্তি থাকার কথা নয় কিন্তু কোনভাবেই জনগনের টাকায় নয়। বর্তমান বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতিতে প্রতিটা ডলার খুবই গুরুত্বপুর্ন। এ সময় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ডলার খরচ করে বিলাসিতার কোন সুযোগ নাই। এ ধরণের অপচয় ইসলামের মূল চেতনার সাথেও সাংঘর্ষিক।
অপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার কারণে শ্রীলঙ্কা ইতিমধ্যে দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন দলের রাষ্ট্র পরিচালনায় ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত এখন জনগন দিচ্ছে।
শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার সরকার আমলাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাই রাষ্ট্রীয় খরচে ৫৩২ জনকে হ্বজ করানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিৎ বলে সংশ্লিষ্ট সকল মহল মনে করে।
তাছাড়া হ্বজ হচ্ছে একটি ধনীদের প্রার্থনা। যে রাষ্ট্র নিজেই গরীব, যে রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিকের মাথাপিছু ঋন ৮৫হাজার টাকা সে রাষ্ট্র কী তার নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় খরচে হ্বজ করানোর যোগ্যতা রাখে?
রাষ্ট্রের বিবেকবান কর্তাদের কাছে প্রশ্ন – রাষ্ট্রীয় খরচে হ্বজ কী আল্লাহ কবুল করবেন?
লেখকঃ সমাজ কর্মী ও সাবেক ছাত্রনেতা