চলমান সংবাদ

সিডিএ কর্তৃক পতেঙ্গা সি বিচ বেসরকারি কোম্পানিকে ইজারা প্রদানের বেআইনী প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবিতে ডি সি-কে বাসদ(মার্কসবাদী)-র  স্মারকলিপি পেশ

সিডিএ কর্তৃক পতেঙ্গা সি বিচ বেসরকারি কোম্পানিকে   ইজারা প্রদানের আইনী প্রক্রিয়া বন্ধ করা এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সিডিএকে শোকজ নোটিশ প্রেরণের  দাবিতে গতকাল ১১ মে সকালে চট্টগ্রাম জেলা  প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাসদ(মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা।স্মারকলিপি গ্রহণ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পতেঙ্গা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি জনাব মোঃ মমিনুর রহমান  সিডিএ কর্তৃক পতেঙ্গা বিচ ইজারা প্রদানের জন্য টেন্ডার আহবানের সংবাদে  বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং তিনি এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। সিডিএ’ র  এধরণের কোন এক্তিয়ার নেই এবং এজন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও সিডিএ – কে অতিসত্বর শোকজ নোটিশ প্রেরণ করা হবে বলে জনাব মমিনুর রহমান নেতৃ্বৃন্দকে জানান।

জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি পেশের পূর্বে আজ সকাল ১১ টায় কোর্ট বিল্ডিং শহীদ মিনার চত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ(মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলার আহবায়ক কমরেড মানস নন্দীর সভাপতিত্বে ও সদস্য জাহেদুন্নবী কনকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির সদস্যসচিব শফি উদ্দিন কবির আবিদ,সদস্য ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য সোমা,আসমা আক্তার,দীপা মজুমদার।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন,”পতেঙ্গা সি বিচ একটি পাবলিক বিচ ও  প্রাকৃতিক সম্পদ। এর উপর সবার সমান ও অবাধ অধিকার প্রাকৃতিক, এ অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না।অথচ সম্প্রতি  সিডিএ পতেঙ্গা সি বিচ বেসরকারি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ারর জন্য টেন্ডার আহবান করেছে।  সি বিচের মতো প্রাকৃতিক উম্মুক্ত স্থান বাণিজ্যিকীকরণের তৎপরতা, এক্সক্লুসিভ জোন করে টিকেট বসানো এবং এর মাধ্যমে শুধু সামর্থ্যবানদের প্রবেশ করতে দেওয়া এবং শত শত বছর ধরে যে প্রাকৃতিক সৈকতে মানুষ অবাধে বিচরণ করার অধিকার চর্চা করেছে, সে অধিকার খর্ব করার এক্তিয়ার সিডিএ কোথায় পেলো?  পতেঙ্গা বিচের জমির মালিকানাও সিডিএ’র নয়।এর মালিকানা জনগণের,রাষ্ট্র এখানে জনগণের নিমিত্তে ট্রাস্টি হিসেবে তা সংরক্ষণ করবে।তুরাগ নদী দখল ও দূষণ নিয়ে করা রিটের(হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের রীট পিটিশন নং ১৩৯৮৯/২০১৬) প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টের প্রদত্ত ঐতিহাসিক রায়ে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ক, ২১, ৩১, ৩২ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, সকল উন্মুক্ত জলাভূমি, সমুদ্র, সমুদ্রসৈকত, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, ঝিল, , নদীরপাড়, পাহাড়-পর্বত, টিলা, বন এবং বাতাস ইত্যাদি সবকিছুকে পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তি বা জনগণের সম্পত্তি উল্লেখ করে এগুলোর কোন একটির অধিকার থেকে নাগরিকদেরকে বঞ্চিত করা সংবিধানপরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব সম্পত্তি সব নাগরিকের, কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়। এসব পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তিতে সাধারণ জনগণের মুক্ত এবং বাধাহীন ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ বা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে রাষ্ট্র।এসব পাবলিক ট্রাস্ট সম্পত্তি কোন ব্যক্তি বা কোম্পানিকে বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেওয়া যাবেনা।ফলে সিডিএ-র এ সিদ্ধান্ত স্পষ্টত

বাংলাদেশের সংবিধান, আইন ও উল্লেখিত রায়ের পরিপন্থী।অবিলম্বে সিডিএ এ বেআইনী ও জনস্বার্থবিরোধী অপতৎপরতা বন্ধ না করলে চট্টগ্রামবাসী তা কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করবে।’’

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন,‘‘ পতেঙ্গার মতো একই যুক্তিতে রেলকর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের ফয়’সলেকের পাহাড়ী এলাকা লাভের আশায় বেসরকারি কোম্পানি কনকর্ডকে ইজারা দিয়েছিল। তার ফলাফল হলো, চড়ামূল্যের টিকেট, চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে পাহাড়-টিলা –গাছপালা কেটে বাণিজ্যিক ভবন তৈরি, লেকের পানি দূষণ,লাভের বদলে উল্টো রেলের লোকসান ইত্যাদি। ইজারাপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান  তাদের সর্বোচ্চ  লাভের জন্য পতেঙ্গা সি বিচের প্রাকৃতিক পরিবেশের কোন পরিবর্তন, বিকৃতি বা ক্ষতিসাধন করবে না, তার নিশ্চয়তা কি? এছাড়া এর ফলে উচ্ছেদ হবে উম্মুক্ত পতেঙ্গা সি বিচকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকার। সিডিএ বলছে,সি বিচে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা,টয়লেট, সড়কবাতি, নিরাপত্তাসহ পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের জন্য তাদের  টাকা নেই।তাহলে প্রশ্ন আসে, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ নগরীতে একের পর এক প্রকল্প কিভাবে বাস্তবায়ন করছে? বাস্তবে এর পেছনে আছে নগর উন্নয়নের নামে ইজারা ও কমিশন বাণিজ্য করে শত শত কোটি টাকা লুটপাটের মুনাফালোভী মাফিয়া সিন্ডিকেট। তাদের কাছে লুটপাট ও মুনাফাই প্রধান।

তথাকথিত উন্নয়নের নামে মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর স্বার্থে ইতোমধ্যেই একে একে চট্টগ্রামের পাহাড়, খেলার মাঠ, পার্ক, নদী-খাল-পুকুরসহ উম্মুক্ত স্থান ধ্বংস করেও চট্টগ্রামকে এক জঞ্জালের শহরে পরিণত করা হয়েছে।পতেঙ্গা সি বিচেরও একই পরিণতি হোক-তা চট্টগ্রামের জনগণ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনা।’’

# ১২/০৫/২০২২, চট্টগ্রাম #