চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে

চট্টগ্রামে গত কয়েকদিন ধরে তীব্র গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে এ রোগে আক্রান্তরা। রবিবার (১০ এপ্রিল) প্রতিবেদনে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আড়াই শতাধিক রোগী। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী মজুদ রাখার পাশাপাশি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, এপ্রিল-মে মাসে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির আশংকা থাকে। এ অবস্থায় প্রতি ইউনিয়নে ১টি এবং প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি করে মেডিকেল টিম পুনর্গঠন করে প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। ডায়রিয়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী মজুদ রাখার নির্দেশনাও দেয়া হয় ওই চিঠিতে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঋতুর পরিবর্তনের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে পানিশূন্যতা ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও ভিড় করছেন রোগীরা। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক। তবে এ পরিস্থিতি থেকে মোকাবেলার জন্য সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ স্বাস্থ্য বিভাগের। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। আবহাওয়ার কারণেই এই সময়ে সাধারণত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেড়ে যায়। তাই পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা আগেই দেয়া হয়েছে। প্রতি ইউনিয়নে একটি এবং প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচটি করে মেডিকেল টিম গঠন করে দিয়েছি। তারা ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা দিলে ডায়রিয়ার প্রকোপ কমে যাবে। তবে একটু সতর্কতার সঙ্গে শিশুদের খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি নিজেদেরও সতর্ক থাকতে হবে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়–য়া বলেন, ‘আগাম সতর্কতার অংশ হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১৫টি উপজেলায় ২৮৪টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে মজুত রাখা হয়েছে ডায়রিয়ার যাবতীয় ওষুধপত্র।’ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২৯ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৭ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৩ জন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ৩৫ জন এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছে ৪০ জন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে জীবাণু বেশিক্ষণ বেঁচে থাকে। তাছাড়া অনেকেই অনিরাপদ পানি পান করেন। এতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই বাইরের খাবারের পাশাপাশি যেখান-সেখান থেকে পানি খাওয়া যাবে না। বিআইটিআইডি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, ডায়রিয়া রোগী ইনক্রিজিং ট্রেন্ড চলছে। সাধারণ সময়ে যে সংখ্যক রোগী ভর্তি হতো, তার চেয়ে বেড়েছে বলা যায়। হাত না ধুয়ে কোনও কিছু খেলে বা বাসি-পচা খাবার খেলেও ডায়রিয়া হতে পারে। অনেকেই ওয়াসার সরবরাহকৃত লাইনের পানি পান করেন। পানির মাধ্যমে ডায়রিয়ার জীবাণু বেশি ছড়ায়। তাই পানি ফুটিয়ে পান করা সবচেয়ে নিরাপদ। আবার কেউ কেউ রাস্তা-ঘাটে খোলা খাবার এবং শরবত খেয়েও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। বারবার পাতলা পায়খানা হলে, বমি হলে, ঝুঁকি না নিয়ে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীকে ভর্তি হতে হবে।
# ১০.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #