চলমান সংবাদ

অভিযানের খবরে বিক্রেতা গায়েব, ক্যাবের উদ্বেগ

বেশ কিছু দিন ধরেই কিছু অসাধু ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। এসব ব্যবসায়ীদের ঠেকাতে মাঠে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কিন্তু অভিযানের খবর পেলেই দোকান-পাট বন্ধ করে পালিয়ে যান বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। বুধবার (৬ এপ্রিল) দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রাম নগরের খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের ডিও ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় বাজার ‘সোনা মিয়া মার্কেটে’ এ ঘটনা ঘটে। বেশকিছু বাজারে প্রতিবারই অভিযান পরিচালিত হলেই ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। অভিযান পরিচালনাকালে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে চলে যাবার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও মহানগর কমিটি। একইসঙ্গে বাজার তদারকিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছে সংস্থার নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, ও সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ উপরোক্ত দাবি জানান। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনা পরবর্তী সময় থেকে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের বাজারে কারসাজি করে বাজারে আগুন ধরাচ্ছেন। যার কারণে চালের দাম দীর্ঘ দুই বছর ধরেই অস্থির। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা কখনো আলু, পেঁয়াজ, কখনো ডাল, আটা-ময়দাসহ প্রতিটি পণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। সরকারের সংশ্ষ্টলি সংস্থার লোকজন অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধের পরিবর্তে এ সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা প্রদানে সাধারণ মানুষের ওপর নানা অভিযোগ তুলছেন। অধিকন্তু কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীদের সুবিধা প্রদানের জন্য তাদেরকে মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক দলের নেতাসহ দুদকের দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসহ নানা পদে আসীন করছেন। এমনকি তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৈদেশিক সফরসঙ্গী করার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এ অবস্থায় পুরো দেশটি যেন দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতার হাটে পরিণত হয়েছে। রমজানকে সামনে রেখে দাম বাড়েনি এমন পণ্যের তালিকা খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বড় বড় আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিয়ত তাদের প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার, জেলা প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে অভিযান পরিচালনা না করার জন্য হুমকি প্রদান করে যাচ্ছেন। আবার কোনো সময় অভিযান পরিচালনা করা হলে দোকান-পাট বন্ধ করে পালিয়ে যান। তারা যদি কোন অপরাধে বা কারসাজিতে জড়িত না হন তাহলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পালানোর দরকার কী? নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, পবিত্র রমজানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে মূল্য ছাড় শুরু হয়। এমন কি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও পুজার সময় মূল্যহ্রাস হলেও আমাদের দেশে উল্টো চিত্র। রমজান ও ঈদের সময় যেন ভোক্তার পকেট কাটার উৎসব। ব্যবসায়ীরা ‘রমজানে একমাস ব্যবসা করবে ১১ মাস বসে থাকবে’ এই নীতি গ্রহণ করেছেন। অনেকে আবার কালো টাকা সাদা করার মতো, পুরো রমজানে মানুষের পকেট কেটে গুনাহ মাফের জন্য রমজানে শেষ ১০ দিন মক্কায় এতেকাফের উদ্দেশ্যে ওমরা করতে চলে যান। বিবৃতিতে আর উল্লেখ করা হয়, ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী সব দোকানে মূল্য তালিকা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করার কথা থাকলেও অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মূল্য তালিকা প্রদর্শন করছেন না। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাজার থেকে চলে গেলেই মূল্য তালিকা উধাও হয়ে যায়। প্রতিবার অভিযানে জরিমানা করা হলেও দৃশ্যত কোন উন্নতি হচ্ছে না। এ অবস্থায় গুটি কয়েক অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বর্জনের আহবান জানানো হয় বিবৃতিতে।
# ০৭.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #