চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মৃতি বিজড়িত সেই অস্ত্রাগার ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ উদ্বোধন

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা যে অস্ত্রাগার দখলে নিয়ে ব্রিটিশ শাসকদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল, চট্টগ্রামের সেই অস্ত্রগার সংরক্ষণ করে গড়ে তোলা হয়েছে ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’। চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনসে তৎকালীন ব্রিটিশ পুলিশের অস্ত্রাগার ও ব্যারাক সংরক্ষণ করে তৈরি করা এই জাদুঘরে স্থান পেয়েছে ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের যুব বিদ্রোহ থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই অস্ত্রাগারের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এ জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের দুদিন আগে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ জাদুঘরের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৩০ সালে মাস্টারদা সূর্য সেন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। আর একাত্তরের ২৫ মার্চ প্রথম প্রহরে রাজারবাগের মত দামপাড়া পুলিশ লাইনসেও আক্রমণ হয়েছিল, যা প্রতিরোধ করা হয়েছিল। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মেলবন্ধন তৈরি করা এ জাদুঘর গড়ে তোলার জন্য চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনারকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এ উদ্যোগের ফলে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে, স্বাধীনতাযুদ্ধে চট্টগ্রামবাসী কখনও মাথা নত করেনি। সবসময় মাথা উঁচু করে থেকেছে- যার স্বাক্ষর এ জাদুঘর।” চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামেরসিটি মেয়র এম রেজাউল করিম, সাংসদ নজরুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম, সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম রেঞ্চের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন প্রমুখ। জাদুঘর ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ছয় হাজার বর্গফুট আয়তনের এ জাদুঘরে তৎকালীন ব্রিটিশ স্থাপত্য ঠিক রাখা হয়েছে। এখানে ঠাঁই পেয়েছে ১৯৩০ সালে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে গঠিত ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির সদস্যদের ছবি, ব্যবহৃত অস্ত্র এবং তাদের ব্যবহৃত পোশাকসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। বিল্পবী মাস্টারদার সূর্য সেনের ফাঁসির মঞ্চের একটি রেপ্লিকাও রাখা হয়েছে এ জাদুঘরে। জাদুঘরের একটি অংশে আছে বঙ্গবন্ধু কর্নার, যেখানে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের চট্টগ্রামের অংশটির পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন স্মারক ও নথিও স্থান পেয়েছে। নান্দনিক শিল্পশৈলিতে নির্মিত এ জাদুঘরে ঢুকলে প্রথমেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধু গ্যালারি। গ্যালারির দু’পাশের দেয়ালে আছে বঙ্গবন্ধুর নানান সময়ের দুর্লভ সব আলোকচিত্র। পাশেই মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা বইয়ের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি লাইব্রেরি। জাদুঘরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাসের বিশাল সংগ্রহশালা। সংরক্ষিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন পুলিশ বাহিনীর নানান স্মৃতিচিহ্ন, অস্ত্র, পোশাক, দলিল-দস্তাবেজ। একদিকে আছে অডিও ভিজুয়্যাল গ্যালারি। সেখানে দর্শনার্থীদের জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধের ওপর নির্মিত ডক্যুমেন্টারি ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেখার ব্যবস্থা আছে। যুদ্ধের সময় উদ্ধারকৃত গুলি ও মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হ্যান্ডমাইক, যুদ্ধের সময় দূর থেকে শত্রুর অবস্থান দেখার জন্য পুলিশ বাহিনীর সার্চলাইট, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের টেলিকম ভবনের দেয়াল ঘড়ি, যুদ্ধকালীন পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন চিঠিপত্র, পোশাক সংরক্ষণ করা হয়েছে সেখানে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সুপার এম শামসুল হকের স্মারক হিসেবে তার র‌্যাংক ব্যাজ, পোশাকসহ ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস এবং শহীদ আরআই আকরাম হোসেনের স্মারক হিসেবে তার ব্যবহৃত রেডিওটি এ জাদুঘরে সংগ্রহে রাখা হয়েছে। স্থান পেয়েছে অন্যান্য শহীদ পুলিশ সদস্যের অস্ত্র ও জিনিসপত্রও। জাদুঘর সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল অস্ত্রাগার দখলে নেয়ার মধ্য দিয়ে যে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ এবং যুব বিদ্রোহের ধারাবাহিকতায় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম তরান্বিত হয়েছিল, তা স্মরণে রেখেই এই জাদুঘর। ১৯৩০ থেকে ১৯৭১ সালের মেলবন্ধন ঘটাবে ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে জীবন উৎসর্গকারী ৮১ জন পুলিশ সদ্যদের ভূমিকার কথাও সংরক্ষণ করা হয়েছে এ জাদুঘরে। পুরনো অস্ত্রাগারের আদল ঠিক রেখেই সংস্কার করা হয়েছে এ জাদুঘর। এর সাথে যুক্ত করা হয়েছে তৎকালীন পুলিশ ব্যারাকটিও। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বিপ্লবীদের ভূমিকা জনগণের কাছে তুলে ধরতে জাদুঘরে রাখা হয়েছে বিপ্লবীদের ছবিসহ নানা রেপ্লিকা। জাদুঘর উদ্বোধন শেষে আগামী ২৮ মার্চেও হরতাল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা হরতালে ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মকান্ড না করার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘হরতাল, ধর্মঘট এগুলো রাজনৈতিক চর্চা। রাজনৈতিক দলগুলো এগুলো করতেই পারে। আমরা আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলো সহনশীলতার পরিচয় দেবে। তারা কোনো ভাঙচুরে যাবে না, ধ্বংসাত্মক কাজ করবে না, জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে না, কোনো বাধার সৃষ্টি করবে না। আমাদের কথা হল- কেউ যদি রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা করে, কেউ যদি ভাংচুর করে, কেউ যদি ধ্বংসাত্মক কিছু করে তাহলে অবশ্যই নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ভূমিকা রাখবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘উনারা (বামজোট) হরতাল ডেকেছে, তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে। এটা শুধু বাংলাদেশে বাড়েনি। সারাবিশ্বেই বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পরিবহন ব্যয় তিনগুণ হয়ে গেছে। আমাদের দেশ তেল আমদানি করে, অনেক কিছুই আমদানি নির্ভর। কাজেই আমদানির ক্ষেত্রে দাম কিছুটা বেড়েছে।
#২৪.০৩.২০২২ চট্টগ্রাম #