চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন জুনে

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও থানা কমিটি নিয়ে অভিযোগ-আপত্তির পর কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের গঠিত হয় ৬ জনের সুপারভিশন কমিটি। তারা দফায় দফায় বৈঠক করলেও এই হচ্ছে-এই হচ্ছে না— পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা একেবারে বর্ধিত সভায় বসেন নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে। সেখান থেকে নানা বক্তব্য টুকে নিয়ে সাফ জানিয়ে দেন নগর আওয়ামী লীগ নিয়ে কেন্দ্রের স্পষ্ট বার্তা। ঈদের পর চট্টগ্রাম মহানগরের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শেষে, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতিক্রমে জুনেই প্রতীক্ষিত নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হবে। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দিনভর নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের বর্ধিত সভা শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, ‘ঈদের পর চট্টগ্রাম মহানগরের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শেষ করা হবে। এরপর সভানেত্রীর সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে কথা বলব। জুন মাসে তাঁর নির্ধারিত সুবিধাজনক সময়ে মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল শেষ করতে চাই।’ এদিন সকাল ও বিকেলে দুই দফায় বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকালের সেশনে ১৫ থানার কার্যক্রম ও অনিময়–অভিযোগ তদারকি করতে ১৫টি সাংগঠনিক দল গঠন করা হয়। পরে সভায় এই সাংগঠনিক দলের প্রধানদের নাম অনুমোদন করা হয়। বিকেলের সেশনে সাংগঠনিক দলের প্রধানদের নিয়ে বসেন কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা। সাংগঠনিক দলের কাজ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে আবু সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, ‘এই সাংগঠনিক দল সংশ্লিষ্ট থানা, ওয়ার্ডের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক কিংবা আহ্বায়ক–যুগ্ম আহ্বায়কদের নিয়ে ইউনিট সম্মেলনে যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো পর্যালোচনা করবে। তাঁরা কোনো অনিময় হলে সেগুলো আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবেন। যদি তাঁরা না পারেন তাহলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে আমাদের কাছে পাঠাবেন। পরে আমরা আলোচনা করে সেগুলো সমাধান করব।সাংগঠনিক দলকে এক মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বাবুল ও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বসে সাংগঠনিক দলগুলো পূর্ণাঙ্গ করবেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া কমিটিতে থাকা বাকি ৬০ সদস্যকে চারজন করে ১৫টি দলে ভাগ করে দেওয়া হবে।’ এই সাংগঠনিক দলকে আরও একটি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আমরা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ভালো মানুষদের আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত করতে চাই। নতুন প্রজন্মকে যুক্ত করতে চাই। যাদের বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই, যারা নাশকতা করেনি–তাদের আওয়ামী লীগে আনতে চাই। তবে কোনো আবর্জনা যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেটি সাংগঠনিক দল দেখবে।’ ২০১৩ সালের নভেম্বর তিন বছরের ঘোষিত কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে গেছে ৫ বছর আগেই। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে বিরোধ চলছে। এর মধ্যেই এল সম্মেলনের ঘোষণা। বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা ত্রাণ ও সমাজকল্যান বিষয়ক সুজিত রায় নন্দী, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সবুর, উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। যদিও এরআগে গত বছরের জুনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে দুই দিনের সাংগঠনিক মত বিনিময় সভার প্রথম দিনে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘সারাদেশে আওয়ামী লীগের কিছুটা হলেও সাংগঠনিক দুর্বলতা চোখে পড়েছে। টানা ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে আমাদের অনেকের মাঝে আয়েশি মনোভাব চলে এসেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন আছে, ততদিন ক্ষমতায় আছি। ক্ষমতায় থেকে সংগঠন দুর্বল বা সবল বুঝা যাচ্ছে না। যার কারণে সংগঠনের দিকে সবার নজর একটু কম। যার ফলে অনেক জেলায় দেখেছি ১৫ ও ২০ বছর হয়ে গেছে, কমিটির কোনও পরিবর্তন নেই। সংগঠনের যে কার্যপদ্ধতি সেটাও কোন রকমে চলছে।’ সংগঠন গোছাতে চট্টগ্রাম সফরে থাকা এ নেতা আরও বলেন, ‘আমরা ডিসেম্বরে জেলা পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছি। সে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা সম্মেলন করবো। আমরা মহানগরে প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলন আগামি ডিসেম্বরের মধ্যে করতে চাই। সেটা করলে আপনাদের মধ্যে অনেক নেতা আছেন, যারা যথাযথ মূল্যায়ন বা পদোন্নতি পাননি, তারা মূল্যায়ন পাবেন। সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনে গতিশীলতা আসবে। মূল্যায়ন হওয়ার সুযোগ আসবে। আমরা কাউকে চাপিয়ে দিতে চাই না। আমরা একজন অপরজনের সহকর্মী ও সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা দিতে এসেছি। সহায়তা নিয়ে কাজ করলে চট্টগ্রামে সংগঠনের লাভ হবে।’ ‘সম্মেলন যদি না হয় তাহলে যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন হওয়ার সুযোগ থাকে না। চট্টগ্রামে বহু নেতা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেওয়ার মতো, কিন্তু আপনাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা বা নিষ্ক্রিয়তার কারণে মূল্যায়ন হচ্ছে না। প্রতি তিন বছর পর পর সম্মেলন হলে যোগ্য নেতৃত্ব চলে আসবে।’— যোগ করেন হানিফ। তবে নগর আওয়ামী লীগের মাহতাব-নাছির বিরোধী শিবিরের বিরোধ নিয়ে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের কারণে তা হয়ে উঠেনি। তাছাড়া করোনার কারণে দফায় দফায় লকডাউনও বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজে। ওই সময় নগরের সাংসদদের উপস্থিতিতে ধারাবাহিকভাবে চট্টগ্রাম-৪,৫,৮,৯, ১১ ও ১৩ সংসদীয় আসনের সাংগঠনিক কার্যক্রম পর্যালোচনা সভাও করা হয়।
# ২২.০৩.২০২২ চট্টগ্রাম #