মতামত

ধর্ম ও বামপন্থী রাজনীতি চর্চা – ১

হোসেন শহীদ মুফতি

ধর্ম ও ধর্মতত্ত্ব বরাবরই আমার আগ্রহের বিষয়। বিশেষ করে,রাষ্ট্রবিজ্ঞানি,মার্কিনি সমর উপদেষ্টা হান্টটিংটন সাহেব ১/১১ ঘটনার পর Clash of Civilizations তত্ত্ব সামনে নিয়ে আসলে ধর্ম, ধর্ম তত্ব বিশেষ করে ইসলামকে নিয়ে জানার,পড়বার আমার মধ্যে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়। আমি বিশ্বাস করি, বর্তমান দৈশিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতায় ধর্মের পর্যালোচনা ছাড়া বাংলাদেশে বামপন্থী রাজনীতি এগিয়ে নেওয়া এমনকি উদারনৈতিক- গণতান্ত্রিক গঠনমূলক রাজনৈতিক চর্চার জন্ম দেয়া অসম্ভব। কারণ ধর্মের পর্যালোচনা সমাজকে নতুনভাবে ভাবতে সহায়তা করে এবং একটি সমাজ তাদের ধর্মীয় অনুমান সম্পর্কে যত বেশি সচেতন ও সজ্ঞান হয়ে ওঠে ততই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরা নির্ধারণ করার শক্তি অর্জন করে। মনে হয়, বাংলাদেশে বামপন্থী নেতা-কর্মীদের(কিছু ব্যতিক্রম বাদে) খেয়ে না খেয়ে ধর্মের বিরোধীতার ফ্যাশন আখেরে বামপন্থী আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

মার্কস অল্প-স্বল্প যতটুকু পড়েছি তাতে মনে হয়, মার্কসের কাছে নাস্তিক্যবাদ এমন কোনো মহৎ চিন্তা ছিল না। কার্ল মার্কস শোষণের অন্যতম অস্ত্র হিসেবে ধর্মের কথা বলেছিলেন বটে। কিন্তু সেটা ধর্মের নিজের বৈশিষ্ট্যের জন্য নয়, বুর্জোয়া শ্রেণী ধর্মকে শোষিত মানুষদের বিরুদ্ধে কাজে লাগায় বলে। ধর্মের এ অপব্যবহার যাতে দীর্ঘায়িত না হয় সেটাই ছিল মার্কসের চাওয়া। ধর্মীয় পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তার শিক্ষাটা কার্ল মার্কসের কাছ থেকেই পাওয়া যায়।

আর যারা বিজ্ঞানের কথা বলেন, বিজ্ঞানতো এখনো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি বিষয়ক কোনো ধ্রব ও চিরন্তন তত্ত্ব জানাতে পারে নি। আলোচিত বিগ ব্যাং থিওরিকে এর প্রবক্তা হকিং নিজেই বাতিল করে দিয়েছেন। তাহলে নাস্তিকতা কীভাবে বিজ্ঞানমনস্ক দর্শনের অপরিহার্য উপাদান হয়?

বিজ্ঞান যতদিন সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে অপরিবর্তনীয় বিকল্প সত্য জানাতে না পারবে ততদিন যার ইচ্ছে সে ধর্মকে শেষ কথা বলে মানতে চাইলে তাতে বাঁধা দেয়ার যুক্তি কোথায়? বিজ্ঞানের অপরাগতা কি মানুষের মনের স্বাধীন ইচ্ছেকে আটকে রাখার কারণ হতে পারে?

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি,নিজের মত প্রকাশ করার অধিকার যেমন সবাই রাখে তেমনি মানুষকে তার নিজস্ব বিশ্বাস নিয়ে থাকতে দেয়াটাও যেকোনো বিচারে মানবিক।