মতামত

আইন মেনেই বলছি

-উত্তর পুরুষ

মোহ নিয়ে কিছু বলতে গেলেই কেমন কেমন জানি লাগে। ছোট বেলায় শিক্ষক মহাশয় যখন ষড় রিপু পড়াতেন তখন এই মোহের কথা শুনেছি। এখন বলতে হয় এই ষড় রিপু কি? কি একটা ঝামেলা সব কিছুই যদি খুলে বলতে হয় তা হলে কি আর পারা যায় না। এই রিপু (যার অর্থ শত্রু) হচ্ছে মানুষের বুদ্ধি, বিবেক, সংযম প্রভৃতি ভাল গুণ কে ধরে রাখতে চায়, পথে আটকে রাখতে চায়,  তাই । ষড় মানে ছয়। তাহলে মানুষের নিজের ভেতর কোন শত্রু গুলা বাস করে ? ঐ গুলা হল -কাম ,ক্রোধ,লোভ, মোহ, অহংকার ও হিংসা। এখন তো বুঝতে পারলেন মোহ কি? আর একটু বলি মোহ হচ্ছে মনের অন্ধতা, মূঢ়তা, ভ্রান্তি। কি ভাই বেশি ঝামেলা বাঁধিয়ে ফেললাম । এইবার একটু আমার মত করেই বলি। যেগুলো বলছি তা ছোট বেলার মাষ্টার মশাই এর কথা। বড়ই কঠিন । তাই ফেল করতাম এই সব বিষয়ে। আচ্ছা আমার মূর্খতা নিয়ে না বলাই ভাল। তাই ভাল। ধরেন, আমরা কোন কিছুকে ভালবাসি না, কিন্তু তা ভাল লাগে, এটাই মোহ। এখনকার সিনেমার নায়িকা আলিয়া ভাট, কিম্বা রেশমিকা মান্দানা কে আপনার ভাল লাগল খুবসুরুত দেখে। এটা হচ্ছে আপনার মোহ। অনেক রকমের মোহ থাকতে পারে মানুষের। টাকার প্রতি, নারীর প্রতি, ক্ষমতার প্রতি , আরো কত কি । এর কি হিসাব করা যায়,বলেন?

তবে মানুষের সবচেয়ে বেশি মোহ কিসের প্রতি, তা আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন তাহলে আমি বলব ক্ষমতার প্রতি। কেউ বলবেন টাকার মোহ বড়, কেউ বলবেন নারীর মোহ বড়। কিন্তু আমি তো আর আপনাদের মত জ্ঞানী-গুণী নই। অত বুঝিও না। বই পত্র ও বেশি পড়ি নাই। অভিজ্ঞতায় বুঝেছি ক্ষমতার মোহের মত বড় কোন মোহ নাই। আপনি একটু চোখ বুলিয়ে দেখেন চারপাশে।

সেই পাকিস্তান এর সময় আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান কত ভাবেই না চেষ্টা করল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। বাংলাদেশে আমরা তথাকথিত কবি হো মো এরশাদ এর দিকে তাকান। এই ক্ষমতার মোহে কত কান্ডটাই না করল। আহা, কবিতা, সবপ্ন দেখা, পানির মধ্যে গান গেয়ে গেয়ে হেঁটে যাওয়া, গুলি করা, মিছিলে ট্রাক তুলে দেয়া-কত কিছুই না । শুধু ক্ষমতার মোহে। আর আমাদের দেশের কথা না বলি। আমার পিঠের চামড়া থাকবে না। ঐ যে শ্লোগান আছে -অমুকের চামড়া তুলে নেব আমরা। তার উপর আবার কথা বলতে হয় আইন মেনে। লিখতে হয় আইন মেনে। এর পর আর কি কি আইন মেনে করতে হবে তা জানতে পারলে এখন থেকে প্র্যাক্টিস করতে পারতাম। বিশেষ করে ঐ যে ছোট কাজ আর বড় কাজের কথা বলছিলাম আর কি। ক্ষমা করবেন মহাশয়, বেশি কথা বলে ফেললে।

শুধু দেশে কেন ? বিদেশে ও দেখেন। আমেরিকার মত গণতান্ত্রিক দেশ -তার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাহেব নির্বাচনে হেরে গিয়ে ও চেষ্টা করলেন কি ভাবে ক্ষমতায় থাকা যায়। ভোটে কারচুপির কথা বললেন। তাও যখন হল না লোক জন দিয়ে ক্যাপিটাল হিল দখলের চেষ্টা করলেন। আরে ভাই বুঝলেন না। ক্ষমতায় যিনি যান এর মোহ আর ছাড়তে পারেন না। যারা আবার সমাজতন্ত্রের কথা বলেন, মানুষের মুক্তির কথা বলেন-তাদের দেশগুলোর অবস্থা কি? কিউবার প্রেসিডেন্ট মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্ষমতার উম উপভোগ করেছেন। অন্য দেশ গুলোর কথা নাই  বা বললাম। 

এই মোহ মায়ার সম্পর্কে শুধু মাত্র সাম্প্রতিক সময়ের কথা বললাম। এই সময়ের উদাহরণ ও অসংখ্য দেয়া যাবে। কিন্তু কথা বাড়িয়ে কি লাভ আছে? কেঊ কি আমার কথা শুনবে? কেউ শুনবে না? বলবে লোকটার কোন কাজ নাই। শুধুই সমালোচনা। আর, নেই কাজ তো খই ভাজ।

যাকগে, বেশি বলব না। বড়দের কথা বেশি বললে তার অনুসারীরা আমার মাথা ভেঙ্গে দেবে। ছোটদের কথাই বলি তাইলে। পাড়ার ক্লাব গুলোর দিকে একটু তাকান। দেখবেন সভাপতি মহোদয় যে নির্বাচিত (?) হয়েছিলেন, তারপর থেকে তিনিই সভাপতি। ঐ পদ ছাড়ার আর নাম নাই। কি একটা ব্যাপার। বুঝলাম না ওই পদে কি আছে? বাপরে বাপ।

রাজনৈতিক দলগুলার কথা নাই বা বললাম। ডান-মধ্য-বাম, যে দিকে তাকান এই বিষয়ে সবাই সমান। কেউ ক্ষমতা ছাড়তে চান না। এক একজন কুড়ি তিরিশ বছর ধরে সভাপতি কিংবা সাধারন সম্পাদক আছেন তো আছেন। এই এক দিন পর একটা বাম দলের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। ওই দলের প্রধান নেতা ত্রিশ বছর ধরে প্রধান নেতা । আর এক বাম দলের সম্মেলন হয়ে গেল । ২৩ বছর ধরে ঐ দলের প্রধান নেতা সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ছিলেন। শুনা যায় উনি আরো কিছু দিন থাকতে চাইছিলেন। বুঝেন এবার? উনারা বলেন আমি না থাকলে দল শেষ হয়ে যাবে, বিকল্প নেতা গড়ে উঠে নাই। কেউ দল চালাতে পারবে না। আমি দেখতে ভাল, বলি ভাল, আমি জানি বেশি, আমাকে লোক জন চেনে বেশি – তাই দল বাঁচানোর জন্য আমাকে থাকতে হচ্ছে। আরে ভাই,দলের ভেতর থেকে কেউ তো বলে না – বট বৃক্ষের নিচে কি কোন গাছ হয়? আর বিকল্প না হলে তার দায় কার? আপনার। আপনি সরে যান বিকল্প নেতা বেরিয়ে আসবে। কেউ কি বলবে ? বলবে না। হীরক রাজার দেশে যেমন রাজা যাদু করে প্রজাদের মুখ বন্ধ রাখতো , একি ভাবে ও নেতারা দলের কর্মীদের অন্ধ করে রাখে। কি ভাবে করে খোঁজ নিয়ে দেখেন। দেখবেন কুৎসিত সব কাহিনী। কাদা আর নাই বা ঘাটলেন। তবে কথা হচ্ছে গিয়ে দেশের গণতন্ত্রের জন্য আপনারা মাইক ফাটিয়ে ফেলেন। কিন্তু দলে এর কোন অস্তিত্ব নাই। দেখেন অবস্থাটা। 

থাক থাক বেশি কথা না বলাই ভাল। কথায় কথা বাড়ে শেয়ালে লেজ নাড়ে। তা ছাড়া সব বলতে হয় আইন মেনেই । তাই এখানেই ক্ষান্ত দেয়া ভাল। আপনাদের অনেকের পছন্দ হবে না আমার কথা। আমাকে গালি দেবেন,  মারতে আসবেন। আমি আপনাদের কাছে খারাপ হই কেন। আমরা সবাই ভাই ভাই থাকতে চাই। এক কাজ করি,  এই বসন্তে সবাই মিলে চলেন গান গাই- বসন্ত বাতাসে সইগো/ বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ীর ফুলের গন্ধ/  আমার বাড়ী আসে……হায়রে, বন্ধুর বাড়ীর ফুল বাগানে/নানান বর্ণেব় ফুল / ফুলেব় গন্ধে মন আনন্দে/ ভ্রমরা আকুল।।