চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে গণটিকাদান কার্যক্রমে উপচে পড়া ভিড়

 সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও শুরু হওয়া গণটিকাদান কার্যক্রমে গণমানুষের ঢল নামে, আগে টিকা নেওয়ার জন্য চলে একপ্রকার যুদ্ধ। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলাসহ নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। তবে উপজেলাগুলোতে সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম শুরু হলেও নগরের কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে অব্যবস্থাপনা। করোনার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন কেন্দ্রে ভিড় তৈরি হয়। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার শেষদিন, এমন প্রচারণায় সকাল থেকেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে জনসমাগম শুরু হয়। সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ ছাড়াই ভ্যাকসিন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় দলে দলে মানুষ ভিড়তে শুরু করে ভ্যাকসিন কেন্দ্রে। গণটিকা কর্মসূচির আওতায় চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে এবং উপজেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রায় চার লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশন। নগরীর অধিকাংশ কেন্দ্রের সামনে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের লম্বা সারি দেখা গেছে। তবে প্রথমদিকে কয়েকটি কেন্দ্রে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চসিক’র জালালাবাদ ওয়ার্ডের একটি অস্থায়ী টিকা কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘন্টা দেরিতে টিকার গাড়ি আসার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, প্রায় ৪ লাখ মানুষকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে টিকাদান কার্যাক্রম শুরু হয়। তবে কাউকে টিকাবিহীন বাড়ি ফিরে যেতে হবে না। আমাদের কাছে যথেষ্ট টিকা মজুদ আছে। একজনও কেন্দ্রে এসে যেন ফেরত না যান সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৩ শতাধিক কেন্দ্রে টিকা প্রদান করা হয়। এছাড়া নগরীর ভেতর তিনটি কেন্দ্র গণটিকাদান কার্যক্রম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। সেগুলো হচ্ছে- এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, অফিসার্স ক্লাব ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এদিকে চসিক’র স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী জানান, নগরীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ১ লাখ ৮৪ হাজার ২০০ জনকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্র রয়েছে। ১২ বছর থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত বয়সীরা পেয়েছে ফাইজারের ভ্যাকসিন। এর চেয়ে বেশি বয়সীরা পেয়েছেন সিনোভ্যাক্সের ভ্যাকসিন। নগরীর প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে পাঁচটি করে কেন্দ্র এবং প্রতিটি কেন্দ্রে একটি করে বুথ চালু করা হয়। ২০৫টি অস্থায়ী কেন্দ্রে একযোগে টিকা প্রদান করা হয়। এছাড়া ১৭টি নিয়মিত কেন্দ্রেও সাধারণ মানুষদের টিকা দেয়া হয়। নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে স্থাপন করা অস্থায়ী টিকাকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করতে থাকে টিকা প্রত্যাশীরা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককে। সময়মতো স্বাস্থ্যকর্মীরা কেন্দ্রে না আসায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। টিকা নিতে আসা নারী-পুরুষের মহিলাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীদের।এছাড়া বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রের বাইরে সড়কে দেখা গেছে মানুষের লম্বা লাইন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাবিনা ইয়াসমিন ও রাশেদা আক্তার নগরীর লালদিঘীর পাড় ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে গিয়ে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এসময় চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান, উপ-পরিচালক ডা. অং সুই প্রু মারমা ও সহকারি পরিচালক রাজীব পালিত, চসিক’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। টিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে নগরের কাজির দেউড়ি এলাকার অফিসার্স ক্লাব ও এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকায় গণটিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি। এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, যাদের জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র নেই এবং বয়স ১২ থেকে ১৮ বছর; এমন যে কেউ রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই করোনা প্রতিরোধে টিকা নিতে পারবে। তাদের কোনও কাগজপত্র লাগছে না। সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে এ গণটিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
# ২৬.০২.২০২২ চট্টগ্রাম #