চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে গভীর সমুদ্রে প্রমোদতরী ‘বে ওয়ান ক্রুজ’র ইঞ্জিন বিকল-আগুন

-১৪ ঘন্টা পর চট্টগ্রামে ফিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস যাত্রীদের

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ যাওয়ার পথে বঙ্গোপসাগরে ইঞ্জিন বিকল ও আগুন লাগা প্রমোদতরী ‘বে ওয়ান ক্রুজ’ আবার চট্টগ্রামে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে জাহাজটি পতেঙ্গা ওয়াটার বাস টার্মিনালে ফেরত আনা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ধারকারী শক্তিশালী টাগবোট ‘কান্ডারী ১০’ ক্রুজ শিপটিকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসতে সাহায্য করে। দীর্ঘ ১৪ ঘন্টা রুদ্ধশ্বাস সময় পার করার পর বিকল হয়ে যাওয়া জাহাজের যাত্রীরা চট্টগ্রামে ফেরার পর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড পরিচালিত জাহাজটিকে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ওয়াটারবাস টার্মিনাল থেকে আটশ’র বেশি যাত্রী নিয়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে গিয়েছিল ‘বে ওয়ান ক্রুজ’। রাত ১২টার দিকে জাহাজটির ইঞ্জিন কক্ষে আগুন লাগে এবং সেখান থেকে ধোঁয়া বের হতে থাকে। এসময় যাত্রীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আনন্দের যাত্রা মূহূর্তেই আতঙ্কে পরিণত হয়। যাত্রীরা মাঝ সমুদ্রে ভয়ে কান্নাকাটি করতে থাকেন। এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে জাহাজে থাকা যাত্রীদের উদ্বিগ্ন স্বজনরা পতেঙ্গা ওয়াটারবাস টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন। যাত্রীদের অভিযোগ, জাহাজ কর্তৃপক্ষ ইঞ্জিনের সমস্যা, ধোঁয়া, আগুনের খবর ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড বা দায়িত্বশীলদের জানায়নি। যাত্রীরাই স্বজনদের দুর্ভোগের কথা জানান। আতঙ্কিত যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরানো হয়। আতঙ্কে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করছিল। এ সময় তারা প্রার্থনা করতে থাকেন। গভীর সাগরে থাকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের সমস্যায় পড়েন অনেকে। জাহাজটির যাত্রী আমিনুল হক জানান, জাহাজে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও নানা বয়সী পর্যটক ছিলেন। জাহাজ ছাড়ার পর যাত্রীরা ওপরের ডেকে জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। রাত ১২টার পর আমরা ইঞ্জিন রুমে আগুন লাগর কথা জানতে পারি। নিচে নামার পর সেখানে ধোঁয়া দেখতে পাই। তখন যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নারী ও শিশু পর্যটকরা বেশি ভয় পেয়েছিলেন। জাহাজের লোকজন ফায়ার ডিসটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। একটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় বলে আমরা জানতে পারি। আতঙ্কিত যাত্রীরা তখন নিচে নেমে গিয়ে লাইফ জ্যাকেট পরতে শুরু করে। রাত পৌনে ১টার দিকে জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ধোঁয়া কমে গেছে। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেল এলাকায় সকাল পর্যন্ত জাহাজটি মাঝ সাগরে নোঙর করা ছিল। পরে উদ্ধারকারী জাহাজ আসে। সকাল ৯টার পর থেকে ‘কান্ডারী-১০’ বে ওয়ান জাহাজটিকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, যাত্রীরা জাহাজ কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলেও কোনো সদুত্তর পাননি। পরে জাহাজের লোকজন বন্দরে কথা বলে সহায়তা চায়। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বে ওয়ান ক্রুজ ইঞ্জিনের সমস্যায় পড়েছিল। বন্দরের টাগবোট তাদের সহযোগিতা করতে গিয়েছিল। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের টাগবোট কান্ডারি-১০ ঘটনাস্থলে যায় এবং বে ওয়ান ক্রুজকে কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে টেনে চট্টগ্রাম ফিরিয়ে আনে। শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে যাত্রীদের পতেঙ্গা ওয়াটার বাস টার্মিনালে জাহাজ থেকে নামানো হয়। বে ওয়ানের চট্টগ্রাম অফিসের প্রকৌশলী মইন উদ্দিন বলেন, জাহাজটি চ্যানেল এলাকায় যাবার পর সোয়া ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে জাহাজের ইঞ্জিন রুমে আগুন লাগে। জাহাজে প্রশিক্ষিত লোকজন ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকায় ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। জাহাজের একটি ইঞ্জিনের এয়ার লক হয়েছিল। জাহাজে বড় কোনো সমস্যা হয়নি। জাহাজটি সেন্টমার্টিন না গিয়ে চট্টগ্রাম ফিরে এসেছে। সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াভ) এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইঞ্জিন থেকে অতিরিক্ত মোবিল নির্গত হওয়ার কারণে ঘন ধোঁয়া বের হয়। ধোঁয়া বেশি বের হতে লাগলে জাহাজ কর্তৃপক্ষ ইঞ্জিনের সমস্ত কাজ বন্ধ করে রাখে। এতে পর্যটকরা ভয় পান। প্রসঙ্গত গত বছর ১৪ জানুয়ারি কর্ণফুলি শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের মালিকানাধীন প্রমোদতরী ‘বে ওয়ান ক্রুজ’ চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করে। ৪৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ও ৫৫ ফুট প্রস্থের জাহাজটির উত্তাল সমুদ্রে চলার সক্ষমতা রয়েছে। ঘণ্টায় ২৪ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম জাহাজটি ২৮ বছর আগে জাপানে তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে ২৫ বছরের পুরনো জাহাজ সাগরে ভাসানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রায় চার বছর আগে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়া এক সময়ের সালভিয়া মারুকে মেরামত করে ‘বে ওয়ান ক্রুজ’ নাম দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন রুটে চালু করা হয়।
# ২৫.০২.২০২২ চট্টগ্রাম #