আইন মেনেই বলছি – উত্তর পুরুষ
বৃদ্ধি পেলে আমরা সবাই খুশি। কি বৃদ্ধি পেলে খুশি হই বলেন তো? আপনারা বলবেন এই লোক কি বলে? বৃদ্ধি পেলে খুশি হয় না এমন কোন মানুষ এই ভুবনে আছে? না, নিশ্চয় না। এই যেমন ধরেন আপনার জমি যা আছে তা যদি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হয়, ব্যাঙ্কে যে টাকা আছে তা যদি চার গুণ হয় তাহলে কে না খুশি হয়, বলেন? তার উপর যদি শর্ট কাটে বৃদ্ধি পায়? আরে, আরে আরে, এইতো শুরু করলেন বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে আবার শর্ট কাটে চলে গেলেন কেন? এই আমার এক সমস্যা সুযোগ পেলেই শর্ট কাটে ঢুকে যাই। এই যা, আমিও একই পথে চলি। যাকগে, শর্ট কাটে না গিয়ে বৃদ্ধি নিয়েই থাকি। কি বলেন?
এই যে বললাম বৃদ্ধি পেলে আমরা খুশি হই। কিন্তু দেশের সবচাইতে বড় অংশ কিন্তু খুশি হয় না। আপনারা আবার বলবেন এই লোক সত্যি মূর্খ । বৃদ্ধি পেলে মানুষ খুশি হয় না, এইটা কোন কথা হল? ভাই মানছি, আমি মুখ্যু-সুখ্যু লোক, আমি তো আর আপনাদের মত পন্ডিত নই। তাই আমার সাদা চোখে যা দেখি তা বলে ফেলি। তাই বললাম কিছু কিছু বৃদ্ধি মানুষকে খুশি করে না, আনন্দ দেয় না বরং আরো বেশি দুঃখী করে।
এই যেমন ধরেন ডায়াবেটিস রোগীর সুগার যদি বৃদ্ধি পায়, সে কি খুশি হবে ? নিশ্চয় না। কথা টা কি ঠিক বললাম? যার শরীরের কোন অংশে ব্যথা আছে- গাউটের ব্যথা , হাত পা ব্যাথা, মাথা ব্যথা , এর কোনটাই বৃদ্ধি পেলে মানুষ খুশি হয়া না। তাই না? আর মনের জ্বালা বৃদ্ধি পেলেই তো কথাই নেই । আমাদের সুপার স্টার শাকিব খানের প্রথম সিনেমাই হচ্ছে মনের জ্বালা। বুঝেন এবার। এতো বড় অভিনেতা চলচ্চিত্র জীবন শুরু করলেন মনের জ্বালা বৃদ্ধি নিয়ে। আবার আমাদের এই প্রজন্মের এক শিল্পী ভালবাসা দিবসে নতুন গান নিয়ে আসলেন -পোড়া মনের জ্বালা বৃদ্ধি নিয়ে। আপনারা এতক্ষণে বলা শুরু করে দিয়েছেন আরে কি জ্বালা ? এই লোক এখন মনের জ্বালা বৃদ্ধি নিয়ে প্যান-প্যানানি শুরু করে দিয়েছে আবার।
যাকগে, এই সব কথা। কথা হল গিয়ে, আমাদের দেশে এই যে জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে কি সব মানুষ খুশি হচ্ছে? নারে ভাই। বিশাল একটা অংশ কষ্ট পাচ্ছে। প্রতিদিন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মুল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যুতের মুল্য, ওয়াসার পানির মুল্য, গ্যাসের মুল্য যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। খেটে খাওয়া মানুষ। চাকরিজীবী মানুষ, ছোট ব্যবাসায়ী, দোকানদার, কৃষক, ক্ষেতমজুর, শ্রমিক, দিন মজুর, বস্তিবাসী, আর কত বলব। বাংলাদেশের ৯৯ ভাগ মানুষই দুঃখী এই দাম বৃদ্ধির কারণে। দুই বেলা ভাল ভাবে খাওয়ার কোন উপায় নাই। বাজারে যান প্রতিদিন শাক সবজীর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথায় যাবে মানুষ? কার কাছে গিয়ে বলবে? কারো কি মাথা ব্যথা আছে? যাদের মাথা ব্যথা হওয়া দরকার তারা ভাবে মাথা ব্যথা বাড়িয়ে লাভ কি? শরীর খারাপ হবে। অসুস্থ হবে। তার চাইতে এই গুলো নিয়ে চিন্তা না করে বিদেশ গিয়ে বডি ম্যাসাজ করে আসি। শরীরে সব ব্যথা কমে যাবে। শরীর সুস্থ থাকবে। শুধু শুধু এই সব চিন্তা করে লাভ কি।
জী হ্যাঁ । যাদের মাথা ব্যথা বৃদ্ধি করা দরকার তারা এই সব ভাবে না। শুধু ভাবে তাদের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স বৃদ্ধির কথা, অর্থ -বিত্তের কথা। আর কি ভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়-থাকা যায় সেই কথা। শুনছেন কোনদিন এই সব নিয়ে তাদের কথা। না পারলামেন্টে, না রাজপথে। না শুনবেন না। থাক, আমি এই সব ভেবে আমার মাথা ব্যথা বৃদ্ধি করে লাভ কি? আপনারা ও বলবেন একই কথা ।
তবে কথা হল গিয়ে, এইসব নিয়ে আপনি ‘তাদের’ দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। আপনার মাথা ব্যথা বৃদ্ধি পেয়েছে, আপনাকেই এটা কমাতে হবে। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ওষুধ খেতে হবে। চাল -ডাল-তেলের দাম বাড়ছে, আপনাকেই এর প্রতিবাদে কথা বলতে হবে। না হলে ঐ একভাগ খুশি হবে। আর আপনারা দুঃখের মধ্যে থাকবেন। কথায় কথা বাড়ে, শেয়ালে ল্যাজ নাড়ে। আমি আইন মেনেই কথা বলতে চাই। আইনের বাইরে যেতে চাই না। আপনারা সব বুঝেন, জানেন, ভাবেন কি করতে হবে।
