চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে শনাক্তের হার গড়ে ৩০ শতাংশ, বালাই নেই স্বাস্থ্যবিধির!

 চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের হার গড়ে ৩০ শতাংশ কিন্তু কেউ মেনে চলছে না কোন স্বাস্থবিধি ও বিধিনিষেধ। ওমিক্রনের ধাক্কায় চট্টগ্রামে প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্তের হার। গত ২৯ দিনে সংক্রমণের হার ছিল গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। যদিও নমুনা বিবেচনায় চট্টগ্রামে সংক্রমণ শনাক্তের হার কম। তবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় লাগামহীন সংক্রমণ বাড়ায় ১৫ দিন আগে সরকার ঘোষিত ১১ দফা বিধিনিষেধ কার্যকর করা হয়। এরপরও অকারণে ঘরের বাইরে ভিড় করছে মানুষ। ওদিকে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের জোরালো কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ‘ওমিক্রন’সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। নগরীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে গাড়ির জন্য এক জায়গায় জটলা বেঁধে মানুষের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। হাতেগোনা দু’এক জনের মুখে মাস্ক। এমনকি যাদের আছে তাদের মুখে সঠিক জায়গায় মাস্ক নেই। নেই সামাজিক দূরত্বও। ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি জ্বরের প্রকোপ থাকলেও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে ভীষণ উদাসীন। এদিকে, বিধিনিষেধে মাস্ক ব্যবহার না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও চট্টগ্রামে প্রশাসনের নজরদারির ছিটেফোঁটাও নেই। এমনকি ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানও চোখে পড়েনি। তবে গত কয়েকদিন ধরে নগরের কয়েকটি রেস্টুরেন্টে চসিকের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান হয়েছে। প্রশাসনের ভূমিকা বলতে এতোটুকুই। মুখে মাস্ক না দেখে পথচারী নুরুল ইসলামের কাছে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি পকেট থেকে মাস্ক বের করে ব্যবহার শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরলে দম বন্ধ লাগে। দুই ডোজ টিকা নিয়েছি, আমার খুব একটা সমস্যা হবেনা।’ একই প্রসঙ্গে আরেক পথচারী শরিফুল বলেন, ‘সরকার বিধিনিষেধ দিয়েছে অনেকদিন তো হলো। কাজের কারণে আমি প্রায় বাইরেই থাকি বলতে গেলে কিন্তু মাস্ক পরার জন্য কোনো অভিযান পরিচালিত হতে দেখি নাই। সরকারি প্রজ্ঞাপন কেবল কাগজে কলমে। এটা যে মানতে হবে এ ব্যাপারে আমরা যেমন উদাসীন ঠিক তেমন প্রশাসনও।’ স্বাস্থবিধি মানছেন না কেন এমন প্রশ্নে এক বাসযাত্রী বলেন, ‘করোনায় বাংলাদেশে মৃত্যু বা জাতীয় ক্ষয়ক্ষতির হার বলতে গেলে জিরো পয়েন্ট জিরো তিন পারসেন্ট। এই করোনার ভয় দেখিয়ে আর কত। অহেতুক ভয় পেয়ে মানুষ কেন তার স্বাভাবিক জীবন নষ্ট করবে? কেনইবা অর্থনীতি নষ্ট করবে। দু‘চার লাখের ক্ষয়ক্ষতির জন্য আঠারো কোটি জীবনের জয়গান থামিয়ে রাখার কোন মানে হয়না।’ যদিও ওমিক্রনের ধাক্কায় চলতি মাসে চট্টগ্রামে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এ পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার কিছুটা কমেছে। এদিন নতুন করে আরো ৮০৯ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। নমুনা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগের দিন শুক্রবার শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ১৬৭ জন এবং হার ছিল ৩১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। একদিনের ব্যবধানে শনাক্তের হার কমেছে ৪.২০ শতাংশ। করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজার ১২ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ৮৬ হাজার ৮৫ জন নগরের বাসিন্দা। বাকি ৩১ হাজার ৯২৭ জন বিভিন্ন উপজেলার। আর মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ৩৫৪ জনে ঠাঁই নিয়েছে। এদের মধ্যে নগরের ৭৩০ আর ৬২৪ জন বিভিন্ন উপজেলার। এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, স্বাস্থবিধি সঠিকভাবে না মানলে সামনে হয়তো সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে। কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ দেশে শুরু হয়েছে কি না, সেটিও এখনো পরিষ্কার নয়। ইতোমধ্যেই প্রায় সবগুলো হাসপাতালেই রোগী ভর্তি হওয়া শুরু হয়েছে। তবে আমরা করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুত আছি। আশা করছি কোনো সমস্যা হবে না।’ একই ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও স্টাফ অফিসার টু ডিসি পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ২০ জানুয়ারি থেকে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে ৬ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তারপর থেকেই চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে হ্যান্ডমাইক দিয়ে জনসাধারণকে করোনা সস্পর্কে সচেতন করা হয়েছে এবং এর ভয়াবহতা জানিয়ে সরকারঘোষিত নির্দেশনা প্রতিপালন করার জন্য আহবানও জানানো হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে যথেষ্ট নজরদারি রেখেছি।’
# ২৯.০১.২০২২ চট্টগ্রাম #