চলমান সংবাদ

অপরিকল্পিত স্থাপনা-দূষণে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ বিপন্ন জরিমানায় দায় সারে প্রশাসন

সেন্টমার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র রক্ষায় সরকার দ্বীপটির আশপাশের এক হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া (এমপিএ) ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণার পর যেখানে দ্বীপটি একটু স্বস্তি পাওয়ার কথা সেখানে হিড়িক পড়েছে অপরিকল্পিত নতুন নতুন স্থাপনা তৈরির। খবর নিয়ে জানা গেছে, দ্বীপে অন্তত ২০টির মতো স্থাপনা নির্মাণকাজে চলমান রয়েছে যার কোনটিরই অনুমোদন নেই। নির্মাণাধীন স্থাপনাগুলোর সাতটি ভবন, পাঁচটি সেমিপাকা ভবন এবং বাকিগুলো কাঠ বা বাঁশের স্থাপনা। স্থানীয়দের দাবী, দ্বীপের চারপাশে প্রতিদিনই নির্মাণ সামগ্রী স্তুপ করা হচ্ছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিভিন্ন রকম প্রভাব খাটিয়ে তারা দ্বীপে স্থাপনা নির্মাণ করছে। এক্ষেত্রে তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সেন্টমার্টিনের পরিবেশ বিপন্ন করা হচ্ছে। দ্বীপটিতে সরকারি কাজ ছাড়া কোন রকম নির্মাণ সামগ্রী নিতে হলে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরীর দাবী, সরকারি কাজের নির্মাণ সামগ্রী ছাড়া অন্য কোন নির্মাণ সামগ্রী সেন্টমার্টিনে নেওয়ার অনুমতি নেই। সেন্টমার্টিনের বিপন্ন পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন সংগঠন সোচ্ছার হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে চারটি রিসোর্টকে জরিমানা করেছে। আটলান্টিক রিসোর্ট ও ড্রিমার্স প্যারাডাইস রিসোর্টকে ১ লাখ টাকা করে মোট ২ লাখ টাকা, ফ্রেন্ডস রিসোর্টকে ৫০ হাজার এবং অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়ে প্রিন্স হ্যাভেন রিসোর্টকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওরীণ হক। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহম্মদ জানান, দ্বীপে ছোটবড় ১৮৮টি রিসোর্ট, হোটেল ও কটেজ আছে। সেন্টমার্টিনের বাইরের লোকজন দ্বীপটিতে স্থাপনা বানাচ্ছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালালেও তা কেবল নাম মাত্র। অধিদপ্তরের চোখের সামনেই এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও তারা বাঁধা দেয়নি। তিনি আরও জানান, ২৭ জানুয়ারির অভিযানটিও ছিল লোক দেখানো। কাগজে-কলমে যেসব মালামাল জব্দ দেখানো হয়েছে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সেগুলো যথাস্থানেই ছিল। আমরা দ্বীপটি রক্ষায় সরকারের সিদ্ধান্তের যথাযথ বাস্তবায়নে প্রশাসনকে আরও আন্তরিক দেখতে চাই। জানা গেছে যে চারটি রিসোর্টকে জরিমানা করা হয়েছে তার একটি ডিমার্স প্যারাডাইস। এই রিসোর্টের মালিক রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ। পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানের সময় ওই রিসোর্টের তিন তলার ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। জরিমানা গুনা আটলান্টিক রিসোর্টের মালিক ভোলার নজরুল ইসলাম চৌধুরী। নজরুল চৌধুরী সমুদ্রঘেঁষেই আটলান্টিক রিসোর্ট নির্মাণ করেছেন। দ্বীপের পশ্চিম সৈকত এলাকায় এই রিসোর্টের দোতলা ভবনের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। এভাবে নজরুল কিংবা রশিদদের মতো দ্বীপের বাইরের টাকাওয়ালারা সেন্টমার্টিনে পাঁচ শতাধিক স্থাপনা নির্মাণ করেছেন বলেও জানান স্থানীয়রা। দ্বীপ ইউনিয়নের ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দিয়ার মাথা ও গলাচিপা এলাকায় চারটি পাকা, তিনটি সেমিপাকা ও চারটি কাঠ-বাঁশের স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণকাজ চলছে পশ্চিম বিচ ও দক্ষিণ বিচ এলাকায়ও। এভাবে দ্বীপের চারপাশে ভবন নির্মাণের হিড়িক চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবী- দ্বীপে নতুন স্থাপনা বন্ধে গত নভেম্বর থেকে তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে। এ পর্যন্ত ২০টি নিয়মিত মামলা এবং আরও ৫০টি এনফোর্সমেন্ট মামলা করা হয়েছে। তারপরও ভবন নির্মাণ ঠেকানো তাদের ভাষায় ‘মুশকিল’ হয়ে পড়েছে। জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, দ্বীপে সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ছাড়া ব্যক্তিগত কাজে নির্মাণসামগ্রী পরিবহণের অনুমতি দেওয়া হয় না। অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে অনুমতি নিলেও মাঝে মাঝে দেখা যায় তারা একবার অনুমতি নিয়ে সেই ডকুমেন্ট ব্যবহার করে বারবার নির্মাণ সামগ্রী দ্বীপে নিয়ে যায়। এখন আমরা কোস্ট গার্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তসহ সমন্বিতভাবে বিষয়টি তদারকি করছি। শুক্রবারও সরেজমিনে তিনি সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় বিচ পরিস্কার করাসহ বিভিন্ন কাজ করার কথা জানিয়ে বলেন, রিসোর্ট যেগুলো আগ থেকে আছে সেগুলো যেন কোন রকম বাড়তি স্থাপনা নির্মাণ না করে সেটি কঠোরভাবে তদারকি করা হচ্ছে। নতুন কোন স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আজ শুক্রবারও আমি নিজে উপস্থিত থেকে বিচ পরিস্কার-পরিচ্ছন করিয়েছি।
# ২৯.০১.২০২২ #