চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের থানাভিত্তিক ১৫ তদারকি কমিটি

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও বিরোধ নিরসনে কেন্দ্রের গঠন করে দেওয়া ‘রিভিউ কমিটি’ প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ১৫ সাংগঠনিক থানায় ১৫টি ‘তদারকি কমিটি’ গঠন করা হয়। ৪ সদস্যদের থানা ভিত্তিক ১৫টি তদারকি টিমের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরীর বহদ্দারহাটে নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসায় বৈঠকে বসেন রিভিউ কমিটির ছয় নেতা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া বৈঠকটি শেষ হয় ৯টার দিকে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মেয়র রেজাউল। কমিটির বাকি পাঁচ সদস্য হলেন- চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি নঈমউদ্দিন চৌধুরী, জহিরুল আলম দোভাষ ও সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আগামী ২৬ জানুয়ারি সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের বাসায় এবং ২৭ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীর বাসায় একইভাবে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫টি থানাভিত্তিক তদারকি টিম করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে একজন আহ্বায়ক ও তিন জন সদস্য। এখানে নগর আ.লীগের কমিটিতে থাকা সবাইকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তদারকি টিমের তালিকাটি কেন্দ্রে প্রস্তাব আকারে যাবে। আগামী ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি আরও দুটো সভা অনুষ্ঠিত হবে। যেদিন যার বাসায় বৈঠক হবে ওইদিন উনিই সভার সভাপতিত্ব করবেন। ইউনিট কমিটি নিয়ে আপত্তির বিষয়ে কি আলোচনা হয়েছে তা জানতে চাইলে নাছির বলেন, এ কমিটির কাজ দুইটি। একটি ইতোমধ্যে সম্পাদিত ইউনিট সম্মেলন নিয়ে অফিসিয়ালি কোনো অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখা এবং কেন্দ্রে প্রস্তাব করা। এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি, আসলে পরবর্তী সভাগুলোতে আলোচনা হবে। নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, সাংগঠনিক থানাগুলোকে গোছানো ও সক্রিয় করার জন্য তদারকি কমিটি করা হয়েছে। এখনও ইউনিট কমিটি নিয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। তদারকি কমিটি থানার অধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটে সাংগঠনিক দুর্বলতা যাচাই-বাছাই করে দেখবে। পাশাপাশি সংগঠনকে কীভাবে গতিশীল করা যায়, সেটিও খতিয়ে দেখবে। ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়া ইউনিট কমিটিগুলো নিয়ে যদি কোনো আপত্তি থাকে, সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে রিভিউ কমিটিকে অবহিত করবে। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আজকে আমরা বসেছি সবাইকে সম্পৃক্ত করার জন্য। থানা ভিত্তিক তদারকি টিমে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য থাকবেন। এ ছাড়া অভিযোগ আসলে যাচাই-বাছাই এবং ওয়ার্ড সম্মেলন নিয়ে পরে সবাই বসে সিদ্ধান্ত হবে। তদারক কমিটিকে চলতি মাসের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ করতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, গতবছরের ১৬ নভেম্বর থেকে নগরের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে ইউনিট সম্মেলন শুরু করে নগর আওয়ামী লীগ। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে ইউনিট আছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রের নির্দেশে ১০৬টি ইউনিটের সম্মেলন শেষ করা হয়। ইউনিটের পাশাপাশি গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ওয়ার্ড সম্মেলন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ইউনিট সম্মেলন নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্র থেকে গত ২৩ ডিসেম্বর ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তৃণমূলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নগর আওয়ামী লীগে পরস্পর বিরোধী দুটি ধারার বিরোধ আরও জোরালো হয়। দুটি ধারার একটির নেতৃত্বে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন আছেন। আরেকটি ধারা প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলয়ের। মহিউদ্দিনপুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী তাদের সঙ্গে আছেন। ইউনিট সম্মেলনের শুরু থেকেই মহিউদ্দিনের অনুসারীরা অভিযোগ করে আসছিলেন, মাহতাব-নাছিরের একক কর্তৃত্ব ও ইচ্ছায় তৃণমূলে সম্মেলন হচ্ছে। বিভিন্ন ইউনিটে মহিউদ্দিন অনুসারী নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কৌশলে সদস্য করা হয়নি। তাদের বাদ দিয়েই সম্মেলন করে এক নেতার অনুসারীদের মাধ্যমে কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড ও ইউনিট সম্মেলনের আগে সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির জন্য নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি তথ্য বিবরণী ফরম সরবরাহ করা হয়। সেটি নিয়েও আপত্তি তোলেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। গত ২২ ডিসেম্বর মাহতাব-নাছিরের বিরোধী বলয়ের নেতারা ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে গিয়ে ইউনিট সম্মেলন নিয়ে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেন। এরপরই কেন্দ্রীয় নেতারা ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ইউনিট সম্মেলন ও সদস্যপদ নবায়ন নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৬ জানুয়ারি সকালে নগর আ.লীগের সকলকে নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সভা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। সভায় অভিযোগ পর্যালোচনার জন্য ছয় সদস্যের একটি ‘রিভিউ কমিটি’ গঠন করা হয়। এই কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্রের কাছে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়। এছাড়া ‘রিভিউ কমিটি’র তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক থানার জন্য নগর কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে একটি করে টিম গঠনের জন্য বলা হয়, যারা থানা ও ওয়ার্ডে সম্মেলনের সম্ভাব্যতা ও বিভিন্ন অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে রিভিউ কমিটির কাছে প্রতিবেদন দেবে।
# ২২.০১.২০২২ চট্টগ্রাম #