চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে গৃহকর বাড়ানোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার মন্ত্রনালয়ে

-চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন গৃহকর বাড়াতে পারবে

চট্টগ্রাম সিটি কর্পেোরেশন-চসিক’র হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়নের ওপর চারবছর আগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সেইসঙ্গে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গৃহকরের যে হার নির্ধারণ করা হয়েছিল, সে অনুযায়ী কর আদায়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটির ব্যক্তিমালিকানাধীন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হোল্ডিংয়ের জন্য এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। এরআগে ২০২০ সালের শেষ দিকে সরকারি হোল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি মঙ্গলবার চসিক’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, “চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত ১০ বছর পূর্বের নির্ধারিত হারে জনসাধারণ কর প্রদান করছে। এতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে। জনসাধারণের নাগরিক সেবা ও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড গতিশীল রাখাসহ করপোরেশনের আয় বৃদ্ধির স্বার্থে ব্যক্তিমালিকানাধীন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হোল্ডিং সমূহের বিগত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রথম কোয়ার্টারের প্রকাশিত গৃহকর-পুনর্মূল্যায়নের আলোকে গৃহকর আদায়ের পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।” চার বছর আগে সিটি কর্পোরেশন ব্যক্তিমালিকানাধীন স্থাপনার কর বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে আন্দোলনের মুখে তা স্থগিত করেছিল মন্ত্রণালয়। গত ২ জানুয়ারি ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল চসিক। তবে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি এসেছে। এতে নগরবাসীর ভয়ের কিছু নেই। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কোনোভাবেই কর বাড়ানো হবে না। শুধুমাত্র করের আওতা বাড়ানো হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সর্বশেষ গৃহকর পুনর্মূল্যায়নে অসঙ্গতি নিয়ে যদি কেউ আপিল করেন, তাদের জন্য অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ে কর নির্ধারণ করা হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হবে না, শুধু করের আওতা বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, যদি একতলা বাড়িটি একতলাই থাকে, তাহলে বাড়ির মালিক আগে যা দিতেন, সেই হোল্ডিং ট্যাক্সই দেবেন। কিন্তু যদি সেটি চার-তলা হয়, তাহলে বাকি তিন-তলার ট্যাক্সটা দেবেন। ট্যাক্স নিয়ে মানুষের বিড়ম্বনা ভোগান্তি ও আতঙ্ক থাকবে না। আগে অতিরিক্ত দাবি করাতেই স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছিল।” মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের ওপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে দুই দফা চিঠি দেয় চসিক। সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবকে দেওয়া সিটি করপোরেশনের চিঠিতে বলা হয়, সিটি করপোরেশনের করবিধি ১৯৮৬ এর ২১ বিধি অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর পর গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের এখতিয়ার সিটি কর্পোরেশনগুলোকে দেওয়া হয়েছে। যদিও সিটি নির্বাচনের আগে ইশতেহারে ‘বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেভাবে যৌক্তিক হারে গৃহকর নির্ধারণ করার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনঃমূল্যায়ন করা হয়েছিল। তবে এর বিরুদ্ধে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর সেটা স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।চট্টগ্রামের ‘করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ যাদের আন্দোলনে ২০১৭ সালে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়নের প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছিল। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হবে না- বর্তমান মেয়র রেজাউল করিমের এমন আশ্বাসে সন্তুষ্ট নয় করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। পরিষদের নেতারা বলছেন, ২০১৭-১৮ সালের মূল্যায়ন অনুসারে বর্ধিত কর দেওয়া নগরবাসীর পক্ষে সম্ভব নয়। বর্তমান মেয়র এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করছেন না। হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে আগের মেয়রের মেয়াদে যে মূল্যায়ন ছিলো সেটা বাস্তবায়ন করা হলে আবারও আন্দোলন হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তারা। প্রসঙ্গত, বর্তমানে বন্দর নগরীতে ২০১০-১১ অর্থবছরের পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়ন অনুসারে নির্ধারিত হারে কর আদায় করা হয়। পুরনো নিয়মে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চসিক’র হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৪৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে আদায় হয়েছিল ১০৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। চসিকের ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গৃহকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। পুনঃমূল্যায়ন অনুযায়ী কর আদায় হলে তা দাঁড়াবে ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকায়। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের সময়ের ওই মূল্যায়নে ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৪৮টি সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন স্থাপনা নির্ধারণ হয়, যা আগের মূল্যায়নের হোল্ডিং এর চেয়ে ২৮ হাজার ৭০২টি বেশি। এসব স্থাপনার বিপরীতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা গৃহকর নির্ধারণ করেছিলেন মেয়র নাছির। # ২০.০১.২০২২ চট্টগ্রাম #