চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থগিত হওয়া ওয়ার্ড-থানা সম্মেলন করতে আর বাধা থাকলো না

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ইউনিট সম্মেলনকে ঘিরে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওয়ার্ড-থানা সম্মেলন করতে কেন্দ্র যে স্থগিতাদেশ দিয়েছেল, তা তুলে নেয়া হয়েছে। এখন আর ওয়ার্ড-থানা সম্মেলন করতে কোনো বাধা থাকলো না, স্বাভাবিকভাবেই হবে এসব সম্মেলন। থানা সম্মেলনের কর্মকান্ড তদারকি করার জন্য নগর আওয়ামী লীগের সদস্যদের নিয়ে থানা পর্যায়ে একটি তদারকি কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রোববার (১৬ জানুয়ারি) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, আগের নিয়মেই ইউনিট সম্মেলন শেষ করে ওয়ার্ড সম্মেলন সম্পন্ন করতে হবে। এসব সম্মেলন শেষ হলে পরে থানা সম্মেলন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। থানার কার্যক্রম তদারক করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নগরের প্রভাবশালী ছয় নেতাকে। তারা হলেন, জাতীয় পরিষদের সদস্য নইম উদ্দীন চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি ও সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন, যুগ্ম সম্পাদক ও মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবল হাসান চৌধুরী নওফেল। নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ১০২ ইউনিটের সম্মেলন শেষ হলেও বাকি ২৭ ইউনিটের সম্মেলন শেষ করেই ওয়ার্ড সম্মেলন হবে। এরপর থানা সম্মেলন হবে। তিনি বলেন, ইউনিট সম্মেলন নিয়ে কয়েকজন আপত্তির কথা জানান। তাদের আপত্তির বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। ইউনিট কমিটি কীভাবে করা হয়েছে, সেটাতে যদি কোনো ভুলভ্রান্তি থাকে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সেটা নিজের মধ্যে সংশোধন করতে বলা হয়েছে। ইউনিট কমিটি শেষ হলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ করে ও তাদের সহযোগিতা নিয়ে ওয়ার্ড কমিটি করব। থানা কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের থানা কমিটিগুলো এত বেশি কার্যকর নয়। তাদের গতিশীল করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বহু আগে একবার চিঠি দিয়েছিল। থানা কমিটিকে কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ১৫টি থানা থাকলেও আরও ৪টি থানা যুক্ত করা হবে। নগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বসে থানা কমিটিগুলো গতিশীল করার জন্য একটি গাইডলাইন ও প্রতিটি থানার জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। বৈঠকে অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন, সুনীল সরকার, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, বদিউল আলম, সদস্য এম আবদুল লতিফ, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ। গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম নগরের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে ইউনিট সম্মেলন শুরু করে নগর আওয়ামী লীগ। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে ইউনিট আছে। কেন্দ্রের নির্দেশে ইতিমধ্যে ১০৬টি ইউনিটের সম্মেলন শেষ করেছে নগর আওয়ামী লীগ। ইউনিট ছাড়িয়ে ওয়ার্ড সম্মেলন করতে গেলে বাঁধে বিপত্তি। ইউনিটের পাশাপাশি ২৬ ডিসেম্বর থেকে ওয়ার্ড সম্মেলন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ও সম্মেলনের বৈধতার প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ‘নালিশ’ নিয়ে যান নগর আওয়ামী লীগের একাংশ। ইউনিট সম্মেলন নিয়ে একপক্ষ অভিযোগ করলে কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনকে মৌখিকভাবে ওয়ার্ড সম্মেলন স্থগিত রাখতে বলেন। নগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৬ সালে। সেই সম্মেলনে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সভাপতি এবং কাজী ইনামুল হক দানু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কাজী ইনামুল হক দানু মারা যান। এরপর ওই বছরের ১৪ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে ৭১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি এবং আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মারা যান এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। তখন থেকে নগর কমিটির একাংশের নেতারা কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের চেষ্টা করে আসছেন।
# ১৬.০১.২০২২ চট্টগ্রাম #