চলমান সংবাদ

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন চার প্রকল্পের উদ্বোধন

-মেরিটাইম সেক্টরে নেতৃত্ব দেবে চট্টগ্রাম বন্দর- নৌ প্রতিমন্ত্রী

আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন ও আধুনিকায়নের ছোঁয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর। বাংলাদেশের মোট আমদানি পণ্যের প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ ও রফতানি পণ্যের ৮৫ শতাংশ পরিবাহিত হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। সম্প্রতি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ইতোমধ্যে ৩১ লাখ ৬৯ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বন্দরের সংক্ষমতা আরও বাড়াতে সার্ভিস জেটি, ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণের পাশাপাশি নতুন টাগ বোট সংগ্রহ করেছে বন্দর। ক্রীড়াঙ্গনে অবকাঠামোগত সংকট দূর করতে এবং প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন বাড়াতে নিজস্ব অর্থায়নে আর্ন্তজাতিক মানের সুইমিং কমপ্লেক্স তৈরি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর নয়, পুরো দেশের অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বহুল প্রতিক্ষীত এই চার প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে রোববার (২ জানুয়ারি)। সকালে নগরীর বারিক বিল্ডিং মোড় এলাকায় ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্ভিস জেটি উদ্বোধন করেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, সদস্য মো. জাফর আলম, সচিব মো. ওমর ফারুকসহ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল- বন্দরের জন্য ওয়েস্টার্ন মেরিন থেকে কেনা টাগবোট কান্ডারী ৬ হস্তান্তর, ওভার ফ্লো ইয়ার্ড ও সুইমিং কমপ্লেক্স উদ্বোধন। টাগবোট হস্তান্তর ও নবনির্মিত সার্ভিস জেটি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি, গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দর। পিসিটি, বে টার্মিনাল, মাতারবাড়ী হাতছানি দিচ্ছে। মেরিটাইম সেক্টরে নেতৃত্ব দেবে চট্টগ্রাম বন্দর। করোনাকালে বন্দরে এসে আপনাদের সংকল্প দেখেছি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার। বন্দরে গতিশীলতা বেড়েছে, এটা আমাদের জন্য সুখবর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ১২ বছর ধারাবাহিকভাবে দেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর নয়, পুরো দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ধারা বজায় আছে। পৃথিবীর অনেক দেশ নেতৃত্বের কারণে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব না থাকলে আমরা এ স্বাধীন দেশ পেতাম না। তিনি আরও বলেন, করোনার মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন ১২টি করে জাহাজ খালাস করা হয়েছে। চট্টগ্রামের যেখানে সামাজিক সমস্যায় বন্দর হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বন্দরের অনেক সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেগুলো পালন করেছে। এখানেই শেষ নয়। এখন থেকে আরও বেশি উদ্যমী হয়ে কাজ করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি আন্তরিক। এটা আমাকে প্রেরণা জোগায়। শ্রমিকরা শ্রম দিয়েছেন, মুনাফা হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সেই মুনাফার অংশ দিয়েছে। এই চট্টগ্রাম বন্দরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ করতে চায়। দেশ যত এগিয়ে যাবে, ততো বেশি ষড়যন্ত্র তৈরি হবে। তাই আমাদেরকে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সামনে চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক কাজ। বে টার্মিনাল, মাতারবাড়িসহ অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বন্দর নিরলস কাজ করছে দেশের উন্নয়নের জন্য। জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সমন্বয় করে বন্দরকে করোনাকালে ২৪ ঘণ্টা ৭ দিন চালু রেখেছিল। তখন বিশ্ব স্থবির ছিল। আমদানি-রফতানি নির্বিঘœ করতে অফডক, শিপিং এজেন্ট, এমএলও, ফিডার সার্ভিস, সড়কপথে কনটেইনার পরিবহনে করোনাকালে আগে থেকে সম্ভাব্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমাদের বন্দরে জাহাজের ওয়েটিং টাইম জিরো। ফরেন কারেন্সি সাশ্রয় হচ্ছে। জাহাজ ভাড়া, ইন্সুরেন্সের প্রিমিয়াম কমে গেছে। আমরা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে ১৩৫ বছরের রেকর্ড ভেঙেছি, এ বছর ৩২ লাখ ১৪ হাজারের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছি। সক্ষমতা বাড়িয়েছি কনটেইনার ধারণক্ষমতা। দু-তিন মাসের মধ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল উদ্বোধন করতে পারবো। বে টার্মিনাল হলে বড় জাহাজ দিন-রাত ভিড়তে পারবে। মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর হবে ডিপ সি পোর্ট। ইউরোপের সঙ্গে সরাসরি কনটেইনার পরিবহন শুরু করেছি আমরা। এতে ভাড়া ও সময় সাশ্রয় হবে। তিনি বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের অর্থনীতির সোপান চট্টগ্রাম বন্দরকে রাশিয়ার সহযোগিতায় মাইনমুক্ত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি জানতেন, অর্থনীতির চালিকাশক্তি বন্দর। বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে একটি আন্তর্জাতিক মানের সুইমিংপুল, টেনিস কোড ও বাস্কেট বল উদ্বোধন করা হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে বিভিন্ন খেলাধুলার সুযোগ তৈরি হবে। ১ দশমিক ৩ একর জায়গার উপর ৮ লেইন বিশিষ্ট সুইমিংপুলটি তৈরি করা হয়েছে। এখানে সবাই সাঁতার শিখতে পারবে। পাশাপাশি একটি সুপরিসর গ্যালারিও রয়েছে এখানে। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, সার্ভিস জেটির সমস্যা সমাধানে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২২ ফুট লম্বা সার্ভিস জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৩৫টি ভেসেল পরিচালনা করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দরে জাহাজের সুরক্ষা ও অপারেশনাল কার্যক্রমে গতি আসবে। এছাড়া প্রায় ৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ৪০টি বিপি (বলর্ড পুল-জাহাজের শক্তির একক) ক্ষমতার একটি টাগবোট সংযোজন হয়েছে বন্দরের বহরে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এখন আটটি টাগ বোট রয়েছে। এর গভীরতা ৩ দশমিক ৭৫ মিটার এবং লম্বায় ৩৩ মিটার। ২০১৭ সালে টাগবোটটি বানানোর জন্য ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ ইয়ার্ডের চুক্তি করে চট্টগ্রাম বন্দর। পাশাপাশি নগরের ফ্রিপোর্ট মোড় পুরাতন লেবার কলোনির জায়গায় ‘নিউমুরিং ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড’ নির্মাণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই ইয়ার্ডে প্রায় ১২ হাজার কনটেইনার রাখা যাবে। ফলে বন্দরের প্রয়োজনে ও বিভিন্ন সময়ে কনটেইনার চাপ বেড়ে গেলেও জট তৈরির সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যাবে বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বন্দর স্টেডিয়ামের পাশে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আর্ন্তজাতিক মানের সুইমিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। এর পুরো ব্যয়ভার বহন করেছে ব্ন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সুইমিং কমপ্লেক্সটি। এখানে আলাদা দুইটি সুইমিং পুল রয়েছে। আর্ন্তজাতিক মানের তৈরি ১২৫০ বর্গমিটার (দৈর্ঘ্যে ৫০ মিটার ও প্রস্তে ২৫ মিটার) আয়তনের প্রধান পুলে রয়েছে ৮টি লেন। যার একপাশের গভীরতা সাড়ে চার ফুট এবং অপরপ্রান্তের গভীরতা সাড়ে তের ফুট।
# ০২.০১.২০২২ চট্টগ্রাম #