চলমান সংবাদ

কিডনি ও লিভার পাচারকারী সংঘবদ্ধ চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

এ পর্যন্ত ৪০ জনকে দেশের বাইরে পাচার করেছে চক্রটি চট্টগ্রাম থেকে মানুষের কিডনি ও লিভার পাচারকারী একটি আন্তর্জাতিক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) নগরীর পতেঙ্গাস্থ র‌্যাব-৭ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় সংঘবদ্ধ চক্রটি কিডনি বিক্রির জন্য এ পর্যন্ত ৪০ জনকে দেশের বাইরে পাচার করেছে বলে জানায় র‌্যাব। আর্থিক সমস্যায় পড়া লোকজনদের টার্গেট করে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি ও লিভার সংগ্রহ করতো চক্রটি। প্রতি কিডনি ডোনারের সঙ্গে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় মৌখিক চুক্তি হলেও চক্রটি কিডনি বিক্রির জন্য ভারতীয় এজেন্টদের কাছ থেকে নিত ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে রনি আন্তর্জাতিক কিডনি ও লিভার পাচারকারী দলের সদস্য। বাংলাদেশে এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা ডালিম। ভারতে অবস্থান করা পাচারকারী চক্রের শাহিন নামে এক ব্যক্তি বাংলাদেশে রনি, আমলসহ অন্যদের মাধ্যমে কিডনি ও লিভারের ডোনার সংগ্রহ করে থাকেন। ডোনার সংগ্রহ করে তাদের ভারতে পাচারের ব্যবস্থা করেন চক্রটির লোকজন। এ কর্মকর্তা জানান, চক্রটি আর্থিক সমস্যায় পড়া লোকজনদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি ও লিভার সংগ্রহ করতেন। প্রতি কিডনি ডোনারের সঙ্গে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় মৌখিক চুক্তি হতো। কিন্তু চক্রটি কিডনি বিক্রির জন্য ভারতীয় এজেন্টদের কাছ থেকে নিত ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। সম্প্রতি সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় কিডনি ডোনেট করার প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচারের চেষ্টা করা হয়েছিল। গত ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে নগরীর খুলশী থানাধীন ইন্ডিয়ান ভিসা অফিসের সামনে সাইফুলের পাসর্পোটে ভিসা লাগানোর কাজে থাকা অবস্থায় সংঘবদ্ধ পাচারকারী দলের এই সদস্যদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনাস্থল হতে একজন ভিকটিম ও বিভিন্ন ডক্যুমেন্ট জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলার বাসুদিয়া গ্রামের মো. মতিউর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আলী ডালিম (৩৫), কিশোরগঞ্জ সদরের আখড়া বাজার এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান রনি (৩৬) ও মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার সম্বুক এলাকার মৃত মুজিবুর রহমানের ছেলে মো. আলম হোসেন (৩৮)। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা নিজেদের সংঘবদ্ধ পাচারকারী দলের সদস্য বলে স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, গ্রেপ্তারকৃত ডালিমের নেতৃত্বে এই চক্রের সদস্যরা প্রথমে কিডনি ডোনেট সেন্টারসহ বিভিন্ন নামে ফেইসবুক পেইজ ওপেন করে থাকে। ঐ পেইজে বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে ডোনারদের নানাভাবে কিডনি ও লিভার ডোনেশনের ব্যাপারে প্রলোভন দেখানো হয়। ডোনার পাবার পর ঐ চক্রের সদস্যরাই তাদের পাসপোর্ট ও ভিসা লাগানোর ব্যবস্থা করে দেন। এরপর ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে তাদের রক্ত, কিডনি ও লিভার পরীক্ষা করানো হয়। রির্পোট ঠিক থাকলে ডোনারদের তারা ভারতে পাচার করে। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৭ জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়াজ মোহাম্মদ চপল বলেন, ‘কিডনির ডোনারদের মোটা অঙ্কের অর্থের লোভ দেখিয়ে ভারতে পাঠানো হয়। এ জন্য তাদের পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়াসহ সব ব্যবস্থা করে চক্রটির লোকজন। কিডনি নিয়ে চক্রটির বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপ সক্রিয়। দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় চক্রটি কিডনি বিক্রির জন্য এ পর্যন্ত ৪০ জনকে ভারতে পাঠিয়েছে। কিডনি/লিভার প্রদানের পর ডোনাররা পরবর্তীতে অসুস্থ হয়ে গেলেও পাচারকারী দলটি তাদের নূন্যতম সাহায্য-সহযোগীতা করত না। কিডনি প্রধানের পর কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেনে বা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন এমনও নজির রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে খুলশী থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ৬/৭/৮/১১ ধারায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশেষ করে করোনা মহামারির কারণে এত দিন যারা প্রবাসে ছিলেন তাদের অনেকেই বর্তমানে দেশে ফিরে এসেছেন। এর আগে প্রবাসীদের অনেকেই বিদেশে যাওয়ার আগে বিভিন্ন জনের কাছে ধারদেনা করে গেছেন। দেশে ফিরে আর্থিক সমস্যায় পড়া এ ধরনের লোকদেরই মূলত তারা টার্গেট করেন। পাশাপাশি দরিদ্র লোকদেরও টার্গেট করেন তারা।

# ৩১.১২.২০২১ চট্টগ্রাম #